বিজ্ঞাপন

বাংলায় হবে সাইনবোর্ড, জানেন না ব্যবসায়ীরা

February 1, 2018 | 8:23 am

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার এবং সব ধরনের প্রচারণায় বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে। ২৮ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে ডিএনসিসি। তবে মাঠ পর্যায়ের দৃশ্য একেবারেই ভিন্ন। শহরের অভিজাত বিপনী বিতান থেকে শুরু করে ক্ষুদে মুদি দোকানের বেশিরভাগেই শোভা পাচ্ছে ইংরেজিতে লেখা ব্যানার-সাইনবোর্ড।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হলেও মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখায়নি ডিএনসিসি। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। যদিও নির্দেশনা বাস্তবায়নে গণবিজ্ঞপ্তি, এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তা এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নামই ইংরেজিতে লেখা। এমনকী এর নামফলকও ব্যবহার করা হয়েছে ইংরেজিতে। পাশের রাজ্জাক প্লাজার ‘গ্রান্ড মোটরস’ নামে বাইক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির নাম ইংরেজিতে বড় করে লেখা আছে।

বিজ্ঞাপন

কেবল মগবাজারই নয়, এ দৃশ্য নগরীর ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গুলশানসহ রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার। সবখানেই শোভা পাচ্ছে ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড-ব্যানার।

আগামী সাত দিনের মধ্যে ডিএনসিসি আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বিদেশি সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য নয়। ডিএনসিসির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একইসঙ্গে ডিএনসিসির ফেসবুক পেজে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ফার্মগেটের সেঞ্চুরি ফুড ভিলা। সুদৃশ্য সাইনবোর্ডে নামটি লেখা রয়েছে ইংরেজিতে। সেখানে কথা হলে বিক্রয়কর্মী মো. বেলাল সারাবাংলাকে জানান, উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া নির্দেশনাটি সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। যদি এর বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই যদি নির্দেশনা মানে তাহলে আমরাও মানবো। সেখানেই কথা হয় সবুজবাগের বাসিন্দা আল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, নির্দেশনা সম্পর্কে তারও কিছু জানা নেই।

বাটা সু’র ম্যানেজার শেরাফিন মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, নির্দেশনাটি সম্পর্কে আমি পত্রিকায় পড়েছি, ফেসবুক থেকে জেনেছি। এটি ভালো উদ্যোগ। নির্দেশনা জারির তিন দিনের মধ্যেও তাহলে নিজেদের নামফলক নামানো হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কেউ নামায়নি। সবাই নামালে আমরাও নামাবো।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ী অর্ণব গমেজ বলেন, ডিএনসিসি’র অনুরোধ সম্পর্কে আমার জানা নেই। একই তথ্য জানায় ফার্মগেটের ইয়ান তুন থাই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।

মহাখালীর একটি রেস্টুরেন্টের নাম ‘ক্যাফে গ্রীন হ্যালমেট’। এই নামটি কোথাও কোথাও বাংলাতে লেখা থাকলেও মূল ফটকে বড় করে লেখা রয়েছে ইংরেজিতে।

বিজ্ঞাপন

ডিএনসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে লেখা আছে সাইনবোর্ড হতে হবে বাংলায়। এছাড়া দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়েও আইন রয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা ছাড়াও আমরা গত দুইদিন ধরে মাইকিং করছি। এর পরেও যদি কেউ না জানে তাহলে এর দায় তাদেরকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালেও এই ধরনের অভিযান চালানো হয়েছিল। আবারও অভিযান চালানো হবে। কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্য ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড না নামায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাখাওয়াৎ আনসারী সারাবাংলাকে বলেন, ডিএনসিসির এই উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি রায় দেয়। কিন্তু পূর্বের ৩ বছরে তারা দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি- এটা হতাশার।

সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএফ/এমএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন