বিজ্ঞাপন

খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ: রমজানে হয়নি, জুনে শুরুর তোড়জোড়

June 10, 2019 | 9:31 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জলাবদ্ধতা নিরসন মহাপ্রকল্পের আওতায় রমজানের মধ্যেই চট্টগ্রাম নগরীতে খালের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও কার্যত সেটা হয়নি। তবে চলতি মাসের মধ্যেই উচ্ছেদ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উচ্ছেদের লক্ষ্যে বিএস জরিপ অনুযায়ী খালের নকশা প্রণয়ণ করছে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। নকশা অনুযায়ী অবৈধ ও উচ্ছেদযোগ্য স্থাপনার তালিকা করবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরপর সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও সেনাবাহিনী মিলে যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নানা কারণে রমজানের মধ্যে আমরা সেভাবে কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে এখন আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরুর চেষ্টা করছি। এই মাসের (জুন) মধ্যেই খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ আমরা শুরু করতে পারব। এরই মধ্যে বিএস জরিপ অনুযায়ী খালের আদি নকশা আমরা সংগ্রহ করেছি। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়ন করছে। এরপর সিডিএ ডিমার্কেশন করবে।’

গত ৪ মে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল আবু সাদাত মোহাম্মদ তানভীর জানিয়েছিলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রমজানের মধ্যেই খালের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

আবু সাদাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘রমজানের মধ্যে বড় আকারে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি, এটা সত্যি। তবে নগরীর এ কে খান এলাকায় খালের ওপর একটি পাওয়ার স্টেশনের বর্ধিত অংশ আমরা ভেঙে দিয়েছি। পাঠানটুলি এলাকায় একটি খালের ওপর কয়েকটি দোকান ‍উচ্ছেদ করা হয়েছে। এবার নকশা ও তালিকা প্রণয়ণের পর নাসিরাবাদ দুই নম্বর গেইট এলাকা থেকে আমরা উচ্ছেদ শুরুর পরিকল্পনা করছি।’

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নকশা ও তালিকা প্রণয়ণের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলা যাবে বলে মনে করছেন এই সেনা কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি সেগুলো খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিন ধাপে খালগুলো খনন ও সংস্কার করা হবে। প্রথম দফায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৩টি খালের খননকাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি এবং শেষ পর্যায়ে বাকি খালগুলো থেকে মাটি উত্তোলন করা হবে। খাল খনন ও সংস্কারের পর প্রতিরোধ দেওয়াল তৈরি করে খালের পাড়ে ১০ ফুট করে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প ২০১৭ সালে একনেকে পাশ হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্ত্বাবেধানে সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে খালের আবর্জনা অপসারণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রকল্পের কার্যক্রম।

সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পের কাজ শুরুর পর গত এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন খাল থেকে প্রায় পৌনে ২ কোটি ঘনফুট মাটি ও বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। গত বছর খালগুলো থেকে এক কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ঘনফুট এবং চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৪২ লাখ ঘনফুট মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।

সূত্রমতে, জোয়ারের সময় নগরীর বিভিন্ন খালে প্রবেশ করা অতিরিক্ত পানি অপসারণে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খালের প্রবেশমুখে ৪০টি রেগুলেটর স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী পাঁচটি, সিডিএ ১২টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৩টি রেগুলেটর স্থাপন করবে। রেগুলেটর স্থাপনের কাজ আগামী শুকনো মৌসুমে শুরু হবে বলে তিনি জানান।

বিজ্ঞাপন

খালগুলো সংস্কার করা হলে এবং রেগুলেটর স্থাপনের পর জলাবদ্ধতার প্রকোপ পুরোপুরি কমবে বলে মনে করছেন এই সেনা কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রমে সিটি করপোরেশনকেও যুক্ত করা হচ্ছে। কারণ, খালের নকশা প্রণয়ণের পর চিহ্নিত জায়গাগুলো উচ্ছেদের জন্য সিডিএ-সিটি করপোরেশন উভয়পক্ষের প্রয়োজন হবে। অনেক জায়গার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সম্পৃক্ততা, আবার অনেকগুলোর সঙ্গে সিডিএ’র সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এজন্য তিন সংস্থা মিলেই আমরা কাজ করব।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন