বিজ্ঞাপন

বাজেট ২০১৯-২০: ৫ স্তরে ভ্যাট কাটবে সরকার

June 10, 2019 | 5:08 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বেশ কয়েক বছর ধরেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তোড়জোড় চলছে। ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিতও রাখা হয়েছিল। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের নানা আপত্তিতে নতুন ভ্যাট আইনে বড় পরিবর্তন নেই। অন্যদিকে, বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এগুচ্ছে কচ্ছপ গতিতে। এই বাস্তবতায় আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে নতুন আইনটি।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, আইনে কর হার ৭ স্তর থেকে ৫ স্তরে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকতে পারে নতুন বাজেটে। প্রায় দুই হাজার পণ্যকে করের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। বছরে ৫০ লাখ টাকার কম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানকে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না।

ভ্যাটের নতুন স্তরগুলো হচ্ছে ২, ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে ভ্যাটের হার। পণের আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদনে ১০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রাখা হবে। পেট্রোলিয়াম ও নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম উপকরণ রড, মসলা, কাগজসহ বেশ কিছু পণ্যে সর্বনিম্ন হারে ২ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হচ্ছে। পুরনো আইনে ভ্যাটের ৭ স্তর ছিল ২, ৩, ৪.৫, ৫, ৭, ১০ ও ১৫ শতাংশ।

নতুন ভ্যাট আইনে ১ হাজার ৯৮৩টি পণ্যকে করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। একই সাথে এই আইনে থাকছে না প্যাকেজ ভ্যাট। এছাড়াও বছরে ৫০ লাখ টাকার কম লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হবে না। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য রাখা হচ্ছে রেয়াত সুবিধা।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, মৌলিক খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন, গণস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কৃষি, মাছ চাষ, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে পড়ে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে পিছু হটে সরকার। এরপর দীর্ঘ দুই বছর সময় হাতে পেলেও ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে তেমন কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি সংস্থাটির। এমনকি এখন পর্যন্ত ভ্যাটের সবকিছু অনলাইন সিস্টেমে হওয়ার কথা থাকলেও সেটাও করতে পারেনি এনবিআর। তবে এই অপারগতার কথা স্বীকার করতে রাজি নয় এনবিআর।

অবশ্য এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমরা অনলাইন সিস্টেমের কাজ দ্রুত গতিতে করে যাচ্ছি। আশা করি জুলাইয়ের আগে বাকি কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কারও কোনো ক্ষতি হবে না। আর এনবিআরও আইনটি পাশে প্রস্তুত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন আইনে ভ্যাটের জাল বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ১৯৯১ সালের আইনে নির্দিষ্ট খাতে (৩৯টি) প্রযোজ্য হারে ‘উৎসে’ ভ্যাট আদায় করা হয়। নতুন আইনে উৎসে ভ্যাট কর্তনের পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ানো হচ্ছে। এখন শুধু আমদানি পর্যায়ে বাণিজ্যিক পণ্যে (কমার্শিয়াল ইমপোর্টার) ‘অগ্রিম’ ভ্যাট (এটিভি) আদায় করা হয়। নতুন আইনে বাণিজ্যিকসহ সকল পণ্যে অগ্রিম ভ্যাট আদায় করা হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, অটোমেশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া এই আইন কার্যকর করা ঠিক হবে না। এখন পর্যন্ত ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের চিত্রই খারাপ। ভ্যাটের কভারেজ বাড়ানো দরকার। অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ইসিআর নেই। আবার ভ্যাট আদায় করলেও রশিদ দেওয়া হয় না। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে দরিদ্র মানুষের ওপর প্রভাব যেন না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সারাবাংলা/এসজে/জেএএম

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন