বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস বিসিবির বড় অর্জন’

June 24, 2019 | 8:07 am

বাংলাদেশের মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে মাশরাফি, সাকিবরা প্রতিটি ম্যাচই জিতবে। বাংলাদেশের সবাই আজ বিশ্বাস করে বাংলাদেশও বিশ্বকাপ জিততে পারে। মানুষের এই বিশ্বাস দেশের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা এবং আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে বড় অর্জন।

বিজ্ঞাপন

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় বিসিবি’র কার্যকর ভূমিকা এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি’র সফল এই পরিচালক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র নিউজরুম এডিটর সৈকত ভৌমিক। আলোকচিত্র ধারণ করেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান এই অবস্থানের জন্য বিসিবির ভূমিকা কতটুকু আছে বলে মনে করেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ কোনো ক্ষেত্রে কখনোই সফল হতে পারে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও সেটা সমভাবে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা সময় পর্যন্ত অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিকেট সব ফরম্যাটেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থান কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। এই উন্নয়নের কৃতিত্বের দাবিদার বাংলাদেশের খেলোয়াড়, দর্শক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সবাই। আমি বিশেষভাবে দু‘জন মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বিশাল পাওয়া যে আমাদের একজন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী আছেন। ক্রীড়ামনস্ক পরিবারে বেড়ে উঠে আজ তিনি বাংলাদেশের অভিভাবক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে তিনি বিসিবির পাশে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পাশে যেভাবে সব সময় থাকেন সেটা একটা বিশাল অনুপ্রেরণা।

আমাদের বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একজন সফল রাজনীতিবিদের পাশাপাশি সফল ক্রীড়া সংগঠকও। বিসিবিতে যতগুলো বোর্ড কাজ করেছে, কেউই যে খারাপ করার চেষ্টা করেছে তা কিন্তু না। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য সবারই কোনো না কোনোভাবে অবদান আছে। বর্তমানে আমাদের বোর্ড সভাপতির নেতৃত্বে বিসিবি চেষ্টা করে যাচ্ছে পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও। আর সে কারণেই ক্রিকেটে আমাদের এত সফলতা। তিনি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ছিল ভালো কোচিং স্টাফ ও অনুশীলনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেটার ফলাফল আপনারা এখন দেখছেন। অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ছিল উন্নয়ন পর্যায়গুলোতেও ভালো কোচিং স্টাফ নিয়োগ এবং ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়া সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। শুধুমাত্র ওয়ানডে ফরম্যাটের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের সভাপতির নেতৃত্বে টেস্ট ফরম্যাটের উন্নয়নেও এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বিসিবি।

বিসিবির সবার সম্মিলিত প্রয়াস, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা, ক্রিকেটকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা এবং খেলোয়াড়দের মাঠের শ্রমেই আজকের এই অবস্থান। এই সমন্বিত প্রক্রিয়াতেই বাংলাদেশ এখন আর আগের মতো আন্ডারডগের তকমা লাগিয়ে খেলে না, বরং ম্যাচ জেতার জন্য ফেভারেটের মতোই খেলে। আমি এটাকে একটা সফলতা হিসেবে দেখি। তার জন্য বিসিবি অবশ্যই কিছুটা হলেও কৃতিত্ব দাবি করতে পারে।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা বর্তমানে অনেক বেশি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জিতবে— এমন ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ। এই প্রত্যাশাকে কি বাড়তি চাপ হিসেবে দেখছেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: ১৭ কোটি জনগণের সবাই আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ভাবে। বাংলাদেশ জিতবেই— এমনটা আশা করে। পথেঘাটে যখন দেখি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে সবাই আলোচনা করে, তখন ভালো লাগে। এটাকে আমরা কখনোই চাপ হিসেবে দেখি না। এটাকে অনুপ্রেরণা ভাবতে চাই। তবে আমাদের বাস্তবমুখী হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ ভালো করবে— সেটা আমরা প্রত্যাশা করব। কারণ আমাদের দেশের খেলোয়াড়েরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে ম্যাচ জিততে। কিন্তু মাঠের ফলাফল যাই হোক, সেটা মেনে নেওয়ার মানসিকতাও আমাদের থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: টানা ছয়টি ফাইনালে হেরে যাওয়ার পরে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় করেছে। এই বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এখন যেকোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেয় ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু ফাইনালে হারার জন্য খেলোয়াড়দের আমি কোনোভাবেই দায়ী করতে চাই না। হয়তো ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল না। আর তাই খুব ক্লোজ কিছু ম্যাচে আমরা হেরেছি। আয়ারল্যান্ডে এবারের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট জয় তাই নিঃসন্দেহে খেলোয়াড়দের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের যে অবস্থা, তাতে বলা যায়— ২০১৫ বিশ্বকাপের পরে সফলতা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক ধারাবাহিক। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজ জয় থেকে শুরু করে বিদেশের মাটিতেও আছে বেশ কিছু জয়।

সারাবাংলা: জয় অর্জনে বিদেশের মাটিতে এখনো ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এটাকে কিভাবে দেখছেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: এটা সত্যি যে বিদেশের মাটিতে আমরা এখনো সেভাবে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিসিবি বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে শুরু করে আমাদের ‘এ’ দল ও হাই-পারফরম্যান্স স্কোয়াড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিরিজ খেলছে। ইনশাল্লাহ একদিন বিদেশের মাটিতেও আমাদের খেলোয়াড়রা জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খেলতে পারবেন।

সারাবাংলা: পাঁচজন জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়কে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রাণভোমরা। প্রতি ম্যাচেই তাদের ওপরেই আস্থা রাখে দেশের কোটি দর্শক। পরবর্তী প্রজন্ম কি সেভাবে গড়ে উঠছে?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: পাঁচজন খেলোয়াড়ের কথা বললে মাশরাফির নাম বলতে হয়। তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে এই বিশ্বকাপ শেষে তিনি অবসর নেবেন কি না। তার হাঁটুতে এতগুলো অপারেশন হয়েছে, তবু তিনি খেলে যাচ্ছেন মানসিক শক্তি থেকে। প্রতিটা ম্যাচেই জয় অর্জনে অবদান রাখতে চান। আমি মনে করি, তিনি যতদিন খেলবেন ততদিন বাংলাদেশের উপকার হবে। বাকি যারা আছে তারা নিশ্চয়ই আরও অনেকদিন খেলবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করতে গেলে আমি বলব একটা উজ্জ্বল আগামী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমাদের ওপেনিং নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। তামিমের সঙ্গে কে মাঠে নামবেন সেটা নিয়ে ভাবতে হতো। কিন্তু সেখানে দেখুন এখন সৌম্য সরকার, লিটন দাসরা জায়গা নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। মিরাজ এরই মধ্যে নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছে। পিছিয়ে নেই মোসাদ্দেক হোসেন, সাইফুদ্দিনরাও। তবে উন্নতির কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডি নেই।

সারাবাংলা: নতুন মুখ, নতুন প্রতিভা খোঁজার ক্ষেত্রে বিসিবির পরিকল্পনা কী?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: আমাদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল রয়েছে। অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৭, অনূর্ধ্ব ১৯ গ্রুপ ছাড়াও আমাদের আছে হাই পারফরম্যান্স ইউনিট। যারা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বিপিএল, বিসিএলের মতো টুর্নামেন্টে যারা ভালো খেলে আসছে আমরা তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া আছে ডেভেলপিং স্কোয়াড, যেখানে দুই-তিন বছরের মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করা হয়। এসব প্রক্রিয়া ছাড়াও পুরো বছরজুড়েই বিসিবি নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার খুঁজতে কাজ করে যাচ্ছে।

আগে খুব একটা বিকল্প পাওয়া যেতো না। এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক ভালো মানের খেলোয়াড় পাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একই পজিশনে ৩-৪ জন ভালো খেলোয়াড় হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আমাদের বেছে নিতে হয় সবচেয়ে ভালো জনকে। সোজা কথায় বর্তমানে আমাদের একটি কাঠামো আছে। যার ভিত্তিতে আমি বলতে পারি, পাইপলাইনে খেলোয়াড়দের পরিচর্যা যথোপযুক্তভাবে করা হচ্ছে।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোকে কিভাবে দেখছেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: ঘরোয়া কাঠামোতে যেভাবে খেলা হচ্ছে তাতে বিসিবির আন্তরিকতা ও চেষ্টায় প্রশ্ন তোলার খুব একটা সুযোগ নেই। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা স্বীকার করি। আমরা এখনো আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কিছুই করতে পারিনি। অনেকগুলো প্রক্রিয়াধীন। ঘরোয়া কাঠামোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমে যেটা বলব, আমরা এখনো লিগে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে প্রক্রিয়ায় ম্যাচ চালু করতে পারিনি। প্রশ্ন আসতে পারে, কেন পারিনি? সেই উত্তরে প্রথমেই চলে আসবে মাঠের কথা। মিরপুরের হোম অব গ্রাউন্ড ছাড়া ঢাকায় সত্যিকার অর্থে আমাদের নিজস্ব তেমন কোনো কমপ্লিট মাঠ নেই। ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম আছে, কিন্তু ম্যাচ আয়োজন করার মতো উপযুক্ত না। প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের কথাও যদি বলা হয়, সেটাও অনেক সীমিতি আমাদের এখানে। ঘরোয়া লিগের ম্যাচও আয়োজন করতে হচ্ছে আমাদের অন্য মাঠ ভাড়া নিয়ে।

আপনারা যদি বিশ্বের অন্যান্য টেস্ট প্লেয়িং দেশের দিকে তাকান, দেখবেন শ্রীলংকার কলম্বোতেই আছে তিনটি স্টেডিয়াম। প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম, পি সারা ওভাল, সিংহ লিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ড ছাড়াও কলম্বোতে আরও এমন অনেক মাঠ আছে যেখানে চাইলেই প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করা যায় বা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারেন তারা। জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে দুইটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রয়েছে। ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে একাধিক স্টেডিয়াম আছে। অনুশীলনের জন্য আরও অনেক বেশি সুবিধা তারা নিশ্চিত করেছে যা আমরা এখনো পারিনি। জেলা পর্যায়ে যে সুপ্ত প্রতিভার খোঁজ আমরা পাই, তাদের সবাইকে ঢাকায় এনে পরিচর্যার ব্যবস্থা করাও সম্ভব হচ্ছে না। আগে আমরা আবাহনী লিমিটেড, শেখ জামালের মাঠ ব্যবহার করতে পারতাম, এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

তবে আশার কথা হলো, এসব সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এরই মধ্যে তার উদ্যোগে আমরা নামমাত্র মূল্যে পূর্বাচলে একটি নতুন স্টেডিয়াম করার জন্য জায়গা পেয়েছি। একাডেমি ও একাডেমি গ্রাউন্ডসহ কমপ্লিট সেটআপ সেখানে থাকবে।

আবার, আইসিসির সূচি অনুযায়ী বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ বর্তমানে খুব কমই টেস্ট খেলার সুযোগ পায়। ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে সব সময় আমাদের চেষ্টা থাকে টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা বাড়ানোর। টেস্ট ম্যাচ হলো ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য, যেখানে একজন খেলোয়াড়কে সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লিগ খেলছি। বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রাও অংশ নিচ্ছে এসব লিগে। মাঠের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে আশা করি ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো নিয়ে অন্যান্য অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, এখনো অনেক ক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আর সেগুলোকে বিসিবি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বাইরে টেস্টে ভালো খেলতে হলে আমাদের নিয়মিতভাবে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ভারত, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে হবে। আইসিসির সঙ্গে কথা বলে আমরা সেই চেষ্টাও করে যাচ্ছি।

সারাবাংলা: ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে ম্যাচ আয়োজন করার ক্ষেত্রে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের ভাবনা কী?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: টি-২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ বেশি পিছিয়ে আছে, সেটা আমি মনে করি না। তবে এটা ঠিক, আমাদের এখনো এই ফরম্যাটে উন্নতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। ভৌগলিক কারণ বা শারীরিক গঠনের কারণেই বলেন, ক্রিস গেইল, পোলার্ড বা আন্দ্রে রাসেলের মতো টি-২০ স্পেশালিস্ট প্লেয়ার এখনো আমাদের গড়ে ওঠেনি। কিন্তু দলীয় পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে কিন্তু এবার সিলেটেও বিপিএল ম্যাচ হয়েছে। অন্য দেশের খেলোয়াড়দের এনে আন্তর্জাতিক মানের কোনো টুর্নামেন্ট করতে হলে কিছু রিকোয়ারমেন্ট মাথায় রাখতে হয়। পাঁচ তারকা হোটেল, বিমানবন্দরসহ অনেক সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের রয়েছে।

প্রতিটি বিপিএল’এ আমরা কিছু সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় পাচ্ছি। যাদের জাতীয় দলের জন্য পরিচর্যা করা হচ্ছে। এইচপি স্কোয়াডে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন মুস্তাফিজ, আফিফ, শামসুর রহমান শুভ কিংবা আবু হায়দার রনি; এবারের বিপিএলে খেলেছে চট্টগ্রামের ইয়াসির আলী। ইয়াসির আলীর প্রথম শ্রেণির ম্যাচের গড় কিন্তু খারাপ না। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও রান করেছে। এমন আরও অনেকেই উঠে আসছে। যারা বিপিএলের মতো আসরে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে।

ড্রেসিং রুমে এবং প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে বিশ্বমানের কোচ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে থেকে শিখতে পারছেন অনেক কিছুই। স্টিভেন স্মিথ, ড্যারেন স্যামি, ডেভিড ওয়ার্নারসহ অনেক ক্রিকেটারই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হিসেবে বিপিএলের প্রশংসা করেছেন। এছাড়া আইসিসি সবসময় আমাদের বিপিএলের প্রশংসা করে। বিপিএলের সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। দর্শক চাহিদা মেটাতে ড্রোন, স্পাইডার ক্যাম, আল্ট্রা এজের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

আমি বলব, বিপিএল এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর। বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজি দলগুলো নিজস্ব অ্যাকাডেমি করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন খেলোয়াড়রা ওঠে আসবে এই অ্যাকাডেমি থেকে। যারা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত নক্ষত্র।

সারাবাংলা: সম্প্রতি বাংলাদেশের দলের জার্সি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে জার্সিতে পরিবর্তনও আনা হয়। এই বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ আমাদের দেশের দর্শক। আমরা তাদের আবেগের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান জানাই। তবে জার্সি নিয়ে যে বিতর্কটা হলো, সেটাকে আমি দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করি। প্রথমত আইসিসির কিছু নির্দেশনা ছিল যেগুলো মেনে এই জার্সি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত এবারই প্রথম দর্শকদের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য আসে যে বাংলাদেশের জার্সিতে লাল-সবুজ থাকতেই হবে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে কিন্তু জার্সিতে লাল রঙ ছিল না। অন্যান্য দেশের জার্সির কথাও যদি ভাবা হয় তবে দেখবেন ভারত, অস্ট্রেলিয়া— এরাও কিন্তু জাতীয় পতাকার আদলে জার্সি করছে না। তারপরও, যেহেতু এর সঙ্গে আবেগ জড়িত, আমরা ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পরিবর্তন এনেছি।

সারাবাংলা: শুরু থেকেই সবার প্রত্যাশা, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলবে। এরই মধ্যে ছয়টি ম্যাচ খেলে ফেলেছ বাংলাদেশ (বৃষ্টিতে ভেসে গেছে একটি ম্যাচ)। ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয়ে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা কতটুকু মনে করছেন?

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: বাংলাদেশের বাকি তিনটি ম্যাচের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান শক্ত প্রতিপক্ষ। তারপরও আমি বলব, নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলতে পারলে দুইটি ম্যাচেই জয় সম্ভব। আফগানিস্তানকেও হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। তবু তাদের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা কাগজে-কলমেই বেশি। এই তিনটি ম্যাচ জিততে পারলে পয়েন্ট টেবিলে শক্ত অবস্থানে থাকব আমরা। আর ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলো এসময় নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলবে। ফলে বাংলাদেশের কাজটুকু বাংলাদেশ করে রাখতে পারলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালের অন্যতম একটি দাবিদার দল থাকবে। তাছাড়া বাংলাদেশের যে ম্যাচগুলো খেলেছে, সেগুলো কিন্তু সবার প্রত্যাশা অনুযায়ীই খেলেছে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা ভাগ্যের কারণে হেরে গেছি। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচে বোলিংটা একটু খারাপ হয়েছে। এসব ম্যাচের শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী তিনটি ম্যাচেই ফল টাইগাররা আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারবে— এই আত্মবিশ্বাস আমাদের রয়েছে।

সারাবাংলা: সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ইসমাইল হায়দার মল্লিক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন