বিজ্ঞাপন

গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৩ বছর

June 12, 2019 | 10:21 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ২০১৮ সালের হিসেবে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। এসময়ে পুরুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বছর এবং মহিলাদের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৮ বছর। তুলনায়মূলকভাবে পুরুষের চেয়ে মহিলাদেও গড় আয় বেশি।

বিজ্ঞাপন

গত ৫ বছরে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল গড়ে প্রতিবছর শূন্য দশমিক৩২ বছর হারে বেড়েছে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে আয়ুষ্কাল বেড়েছে ১ দশমিক ৬ বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিস্টিকস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিসস্টিকস অব বাংলাদেশ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এ জরিপটি পরিচালনা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০১৭ সালে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর। এছাড়া ২০১৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৭১ দশমিক ৬ বছর। তার আগে ২০১৫ সালে গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর এবং ২০১৪ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৭ বছর।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর আগারগাঁও এ অবস্থিত পরিসংখ্যান ভবনে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিবিএস-এর মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক।

এম এ মান্নান বলেন, মানুষের বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। এটি সরকারের কার্যক্রমের ফসল। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে ফলে গড় আয়ু বাড়ছে। এগুলো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য। কেন না খানা প্রধানের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবতার সঙ্গে মিল আছে। আগে আমার এলাকায় সারি সারি খোলা পায়খানা ছিল। তখন হাত পা কাঁপতো। এখন তেমনটি নেই। এখনো ৩২ লাখ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে। এই সংখ্যা কম নয়। আমি ইতিমধ্যেই হাওর অঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছি। আমি মনে করি এটি বেশ বিনিয়োগ।

নজিবুর রহমান বলেন, এখন মানুষ অনেক বেশি সুচিকিৎসা পাচ্ছে। সুশিক্ষাও পাচ্ছে। তাছাড়া জীবন যাত্রার মান বেড়েছে। ফলে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। দেশে যে উন্নত হচ্ছে তার প্রতিফল ঘটেছে এই গড় আয়ু বৃদ্ধিও মধ্যে। শতকরা ৯০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এটি সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, আগে পুরুষরা বেশি বাঁচত। এখন দেখা যাচ্ছে মহিলারা বেশি বাঁচেন। কেন না এখন সচেতনতা বেড়েছে। নারীরা আগে সবার শেষে খেত ফলে তারা অপুষ্টিতে ভুগতো। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মহিলারা অনেক সচেতন হয়েছে। তাছাড়া মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাক্কলিত হিসেবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার এবং মহিলা হচ্ছে ৮ কোটি ২৭ লাখ জন। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলামান হচ্ছে ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মেও জনসংখ্যা হচ্ছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে শিক্ষার হার সম্পর্কে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে ১৫ বছর ও তার উর্দ্ধে জনসংখ্যার মধ্যে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে ৭১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষিত। গত ২০১৭ সালের জাতীয়ভাবে শিক্ষার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ হিসেবে ২০১৮ সালে শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ৭ বছর ও তার উর্ধ্বে জনসংখ্যার মধ্যে স্বাক্ষরতার হার গড় ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ অংশের স্বাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর।

মানুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। ২০১৮ সালে শতকরা ৬৩ দশমিক ১ জন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এর মধ্যে গ্রামে ৬২ দশমিক ৪ জন এবং শহরে শতকরা ৬৪ জন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। আরও বলা হয়েছে আধুনিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে ৬১ দশমিক ৬ জন এবং যেকোন পদ্ধতি ব্যবহার করছে ৬৩ দশমিক ১ জন। ২০১৮ সালে স্থুল প্রতিবন্ধীতার হার প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ হচ্ছে ৯ দশমিক ৩ জন এবং মহিলা ৭ দশমিক ৭ জন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এক বছরের নিচে শিশু মৃত্যুও হার হচ্ছে প্রতি হাজাওে জীবিত জন্ম শিশুর মধ্যে জাতীয় ভাবে ২২ জন। ২০১৭ সালে এ হার ছিল ২৪ জন। এক মাসের কম বয়সের শিশু মত্যুও হার প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেওয়ার শিশুর মধ্যে ১৬ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৭ জন। এক মাস থেকে ১১ মাস বয়সের শিশু মৃত্যুর হার ৬ জন, যা ২০১৭ সালে ৭ জন।

এছাড়া ১ থেকে ৪ বছর বয়সের শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজাওে ১ দশমিক ৭ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ১ দশমিক ৮ জন। এছাড়া ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৯ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩১ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এখনো শতকরা ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার প্রধান দায়িত্ব পালন করে পুরুষরা। মহিলা প্রধান পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে শতকরা ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এ সংখ্যা ২০১৭ সালের জরিপেও ছিল, কোন পরির্বন হয়নি। দেশের ৯০ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে, ২০১৭ সালে এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতো। ট্যাপ নলকূপের পানি ব্যবহার করে শতকরা ৯৮ শতাংশ পরিবার। স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করে ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার।

সারাবাংলা/জেজে/এমআই/এসআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন