বিজ্ঞাপন

‘দলকে দলের মতো চলতে হবে, এমপি-মন্ত্রীদের ইচ্ছায় নয়’

June 15, 2019 | 11:08 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে হলে দলকে দলের মতো চলতে হবে, এমপি-মন্ত্রীদের ইচ্ছানুসারে নয়। দলের অস্তিস্ব ঠিক থাকলে এমপি ও মন্ত্রিসভার অস্তিত্ব ঠিক থাকবে। তাই আগামী দিনে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কলহ-কোন্দল মুক্ত করার দাবি তুললেন তৃণমূলের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৫জুন) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ঢাকা বিভাগের বিশেষ সাংগঠনিক সভায় জেলা ও মহানগর নেতারা এমন দাবি তোলেন। আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সভায় গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, ‘সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আর একটি সংগঠনের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকীগুলোর কমিটি কেন্দ্র থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এই সংগঠনগুলো নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হয়। যাদের আওয়ামী লীগের ঢোকার যোগ্যতা নাই; বিভিন্ন সময় তাদের দিয়েই কেন্দ্র থেকে এই কমিটিগুলো করে দেওয়া হয়। তারা কাজ করে তাদের নিজেদের মতো। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দিতে হবে। কোনো কমিটি করতে গেলে জেলা কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।’

নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘আমাদের ৬ থানার ১২ জনের মধ্যে ৬ জনই ভারপ্রাপ্ত। এগুলো আমরা ভারমুক্ত করতে চাই। তূণমূলের প্রশাসন এমপি-মন্ত্রীদের বেশি গুরুত্ব দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এবিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না বা নির্দেশনা দেওয়া যায় কী না, সে বিষয়ে ভেবে দেখতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাই।’

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন। ২০১৫ সালে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়েছি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এখনও ওয়ার্ড কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে পারি নাই। কারণ সীমানা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা জটিলতা রয়েছে।’

সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিভিন্ন সময় মহানগরের অর্ন্তগত সহযোগী সংঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিগুলো আসলে কাদের নির্দেশে গঠন করা হয়? এই সহযোগী সংগঠনগুলো মহানগর আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে না। আমাদের কোনো সহযোগিতাই করে না। ’

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক বলেন, ‘আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনোভাবেই দ্বিধাবিভক্ত হওয়া যাবে না। একে অপরের বিরুদ্ধে কেউ যেন কোন সুযোগ নিতে না পারে, তিনি এমপিই হন বা মন্ত্রীই হন। দল দলের মতো চলবে। দলের অস্তিস্ব ঠিক থাকলে মন্ত্রিসভার অস্তিত্ব ঠিক থাকবে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ। এটার মানেই হলো সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানেই সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামের বিজয়। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে কয়টা আন্দোলন করেছে তার সবকটিতেই সফল হয়েছে। আমরা শুধু এক জায়গায় ব্যর্থ হয়েছি। সেটি হলো- আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। ’

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সহযোগী যে সংগঠনগুলো আছে, এগুলোর কমিটি নাই। আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফলপ্রসু ও কার্যকর হয় নাই। ’

কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠনের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কারের সুপারিশসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন সেন্ট্রাল কমিটি থেকে এব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। ’

সহযোগী সংগঠন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কিছু অযাচিত হস্তক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করি। সংগঠনের কমিটি করার জন্য বিভিন্ন রকম চাপ সৃষ্টি করা হয়। আমাদের সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারা আছেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া উচিত। এগুলোতে যেন কোনভাবেই তারা ইন্টারফেয়ার না করে। এতে সংগঠনের ক্ষতি হয়। ‘

বিজ্ঞাপন

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের মধ্যকার অনৈক্য ও কলহ দূর করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়। আর আপন ঘরে যার শত্রু, তার বাইরের শত্রু র কোনো প্রয়োজন নেই। ’মাঝে মাঝে এমন অবস্থায় আমরা নিপতীত হই। আমরা নিজেরাই আমাদের মধ্য শত্রুতা সৃষ্টি করি। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ, জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতা যারা আছেন তারা বসে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে কলহ-কোন্দল দূর করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শক্তিতে সংহত হতে হবে। কলহ-কোন্দল আমাদের দুর্বলতা। এই দুর্বলতার ওপর শত্রু রা আঘাত হানতে পারে। কাজেই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। ’

সভায় ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল-এর সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন, গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, রেমন্ড আরেংসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন