বিজ্ঞাপন

মুমিনুলদের জবাব ভালোই দিচ্ছেন ধনঞ্জয়ারা

February 1, 2018 | 5:24 pm

মোসতাকিম হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে

বিজ্ঞাপন

 

চট্টগ্রামের উইকেট তাহলে কি রহস্যময়ই থাকবে?

ম্যাচ শুরুর আগে থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে ‘স্পিন, স্পিন’ মুখর, প্রথম দুই দিনে সেই জুজুর দেখা খুব একটা দেখা পাওয়া গেল না। দ্বিতীয় দিন শেষেও তা চট্টগ্রামের সেই চিরন্তন উইকেটই, যেখানে একবার থিতু হয়ে গেলে আউট করা কঠিন। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের জবাবটাও শ্রীলঙ্কা দিচ্ছে ভালোমতোই। ৫১৩ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা এর মধ্যেই করে ফেলেছে ১৮৭, হারিয়েছে মাত্র ১ উইকেট। অবশ্য বাংলাদেশ ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ‘সুযোগ’ করে দেওয়ার আফসোস করতেই পারে!

বিজ্ঞাপন

সেজন্য অবশ্য শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যানের কীর্তি কোনোভাবেই খাটো করা যাবে না। উইকেট অন্তত কালকের মতো একদম নিখাদ ব্যাটিং স্বর্গ ছিল না আজ, শেষ দুই সেশনে হঠাৎ হঠাৎ একটু অসমান হয়েছে বাউন্স, কয়েকটা বল হুট করে টার্নও নিয়েছে। কিন্তু সেটা ব্যাটসম্যানদের খুব কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। দিন শেষে তাই টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ফর্মে থাকা ডি সিলভা, মেন্ডিস পাচ্ছেন সেঞ্চুরির সুবাস।

এর মধ্যেও দুবার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৪ রানের মাথায় মুস্তাফিজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন মেন্ডিস। মিরাজ কঠিন ক্যাচটা ধরতে পারেননি। ৫৪ রানের মাথায় এবার মিরাজই ‘ভুক্তভোগী’, এবারও মেন্ডিসের বলে খোঁচা লেগে বল গিয়েছিল স্লিপে। কিন্তু ইমরুল কায়েস যখন হাত বাড়িয়েছেন, বল তার আগেই চলে গেছে। ঠিক শতভাগ সুযোগ বলা যাবে না, তবে এমন উইকেটে হাফ চান্সও কাজে লাগানো উচিত।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবশ্য যে সুযোগ আসতে পারত, সেটাও তারা হারিয়েছে। দুবার রিভিউ নিতে পারত, কিন্তু এর মধ্যেই দুইটি খরচ করে ফেলেছে। তিন বারই তাইজুল ইসলামের বলেই রিভিউ নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। একবার ‘আম্পায়ারাস কলে’ একটা রিভিউ বেঁচে ছিল, কিন্তু ধনঞ্জয়ার ক্যাচের আবেদনে হারাধনের একটা মাত্র রিভিউও খরচ হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

মেন্ডিস-ধনঞ্জয়ার ব্যাটিংয়ে অবশ্য তার প্রভাব পড়েছে সামান্যই। দুজনেই উইকেটের চারপাশে খেলেছেন দারুণ সব শট। বিশেষ করে পা জোড়া দারুণ কাজে লাগিয়েছেন ধনঞ্জয়া, কোনো বোলারকেই থিতু হতে দেননি। অথচ শুন্য রানেই প্রথম উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন করুনারত্নে। সেই আনন্দ দিন শেষে মিলিয়ে গেছে হতাশার বুদবুদ হয়ে।

অথচ তার আগে টেল এন্ডারদের নিয়ে মাহমুদউল্লাহ যেভাবে লড়াই করে গেছেন, সেটা হতে পারত দারুণ একটা অনুপ্রেরণা। ৪৭৮ রানে নবম উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ বোধ হয় ৫০০ পেরুতে পারবে না। আগের দিন থিলান সামারাবীরা এসে বলে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে ৫০০’র নিচে আটকে রাখাটাই তাদের লক্ষ্য। সেই কাজটা শ্রীলঙ্কা তখন করে ফেলবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু মোস্তাফিজকে নিয়ে শেষ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ যোগ করলেন মূল্যবান ৩৫ রান। সেঞ্চুরির বাতিঘরটাও কি দেখতে শুরু করেছিলেন?

মোস্তাফিজ যেভাবে সঙ্গ দিচ্ছিলেন, তাতে দেখতেই পারেন। দুজনে জুটি বাঁধার পর সান্দাকানের বলে চার-ছয় মেরে মাহমুদউল্লাহ পৌঁছে গেলেন সত্তরের ঘরে। দুই হাজার রানও হয়ে গেছে এর মধ্যেই, বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়কের অভিষেকে প্রথম সেঞ্চুরির হাতছানি তখন আরও কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা কাছে এসেও হয়ে রইল অনেক দূর।

বাংলাদেশের অবশ্য আজ সকালে আফসোস করার অনেক কিছুই ছিল। মুমিনুল হকের ডাবল সেঞ্চুরি দেখতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিস্তরঙ্গ গ্যালারিও কিছুটা সরব হয়ে রইল। কিন্তু আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ১ রান যোগ করেই আউট হয়ে গেলেন মুমিনুল। মোসাদ্দেক হোসেনও যখন ৮ রানে সেই হেরাথের বলেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেটটা দিয়ে এলেন, বাংলাদেশের জন্য ৫০০ মনে হচ্ছিল অনেক দূর। ৩৯০ রানেই যে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ!

বিজ্ঞাপন

এরপর মিরাজ শুরু করলেন পালটা আক্রমণ, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিলে পার করলেন ৪০০। ১৯ বলে ২০ রান করে শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ সপ্রতিভ। কিন্তু দুই রানকে তিন রান বানাতে গিয়েই হলো সর্বনাশ, ডাইভ দিয়েও রান আউট ঠেকাতে পারেননি মিরাজ। ৪১৭ রানে বাংলাদেশ হারায় সপ্তম উইকেট।

বাংলাদেশের আজকের দিনের সবচেয়ে সফল অধ্যায়ের শুরুটা তখনই। সানজামুল ইসলামের প্রথম শ্রেণিতে ১৭২ রানের ইনিংস আছে। আজ মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিতে গিয়েই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, সেটা এমনি এমনি পাননি। দুজন মিলে অষ্টম উইকেটে যোগ করলেন ৫৮ রান। দুজন যখন ৫০০র দিকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই সান্দাকানের বলটা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে গেলেন সানজামুল। তাইজুলও খানিক পর ১ রান করেই হেরাথের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন। উইকেটে যে টার্ন আর বাউন্স আছে, সেই ইঙ্গিতও পাওয়া গেল পরিষ্কার

কে জানত, দিন শেষে তা শুধুই মরীচীকা হয়ে থাকবে?

 

 

সারাবাংলা/ এএম/এসএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন