বিজ্ঞাপন

কেবল নারী শিক্ষকই নেবে ডাচ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

June 19, 2019 | 9:42 pm

রোকেয়া সরণি ডেস্ক

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংখ্যায় নারী-পুরুষ সমতা আনতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এইনদোভেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (টিইউই)। নেদারল্যান্ডসের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্প্রতি একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কেবল নারীরাই আবেদন করতে পারবেন!

বিজ্ঞাপন

রসায়নে নোবেলজয়ী নারী বিজ্ঞানী ইরিন জোলিওট কুরির নামে চালু করা ‘ইরিন কুরি ফেলোশিপে’র আওতায় আসছে ১ জুলাই নারী শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। এতে আরও বলা হয়েছে, ফেলোশিপের আওতায় আগামী দেড় বছর নিয়োগ উন্মুক্ত থাকবে কেবল নারীদের জন্য। তবে কোনো পদে ছয় মাসের মধ্যেও যোগ্য নারী পাওয়া না গেলে তখনই কেবল কোনো পুরুষ সুযোগ পাবেন।

টিইউই’র সভাপতি রবার্ট জ্যান স্মিতস বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই লৈঙ্গিক সমতার কথা বলে আসছি। কিন্তু এতদিন ধরে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা অর্জন করা যায়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে টিইউই’র সহকারী অধ্যাপকদের ২৯ শতাংশ নারী, সহযোগী ও পূর্ণ মর্যাদার অধ্যাপকদের মধ্যে সেই সংখ্যা মাত্র ১৫ শতাংশ। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শুধুই নারী শিক্ষক নিয়োগের এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানে নারী ও পুরুষ শিক্ষকের সংখ্যার মধ্যে ব্যবধান ঘোচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন নিয়োগের মাধ্যমে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকদের ৫০ শতাংশ আর অধ্যাপকদের অন্তত ৩৫ শতাংশ নারী হবেন বলে আশা করছে টিইউই।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন, এ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সমালোচনাও উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, এ বিজ্ঞপ্তি অবৈধ। এর মাধ্যমে পুরুষদের সঙ্গে লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। যদিও এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি টিইউই কর্তৃপক্ষের। তারা বলছে, ডাচ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী, তারা যেকোনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চাকরি দিতে পারবে। তাই এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোটেই অবৈধ নয়।

বিজ্ঞাপন

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে স্মিতস বলেন, আমরা জেনেশুনেই এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। বছরের পর বছর ধরে পুরুষরা নিয়োগ ও বেতনের ক্ষেত্রে নারীর সঙ্গে বৈষম্য দেখিয়েছে। তাই আজ নারীদের সামনে আনার আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্তরা পাঁচ বছরে এক লাখ ইউরো বেতন পাবেন। সেইসঙ্গে গবেষণার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ল্যাবরেটরিও পাবেন। এমনকি চাকরিপ্রাপ্তদের স্বামী বা স্ত্রীদের ক্যারিয়ার গড়ার ব্যবস্থাও করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

টিইউই সভাপতি স্মিতস মনে করেন, পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অনেকসময় ‘বোল্ড অ্যাকশন’ বা সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয়। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঁচশ শিক্ষক নিযুক্ত আছেন। আগামী পাঁচ বছরে অন্তত দেড়শ জনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। দেড় বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে দেখবে, নতুন ফেলোশিপের আওতায় নারী শিক্ষকের অনুপাত কতটা বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে নারীদের উপস্থিতি পুরুষদের তুলনায় কম থাকাটা বিশ্বের অন্যান্য এলাকার মতো ইউরোপের অনেক দেশেরই বড় সমস্যা। এই অঞ্চলের কেবল লিথুনিয়া (৫৭ শতাংশ), বুলগেরিয়া ও লাটভিয়া (৫৩ শতাংশ), পর্তুগাল (৫১ শতাংশ) ও ডেনমার্কেই (৫০ শতাংশের সামান্য বেশি) বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের চেয়ে বেশি। নেদারল্যান্ডসে এই হার ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান কমিশন প্রকাশিত ‘শি ফিগারস’ প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গবেষকদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন নারী। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২১ শতাংশে। এমন পরিস্থিতিতেই এইনদোভেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেবল নারী শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা দিলো।

সারবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন