বিজ্ঞাপন

‘মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি, ব্যালান্স শিট মেলাতে সময় শেষ করিনি’

June 22, 2019 | 2:52 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খাতার পাতা উল্টাতে বা ব্যালান্স শিট মেলাতে সময় শেষ না করে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। তাই আমরা ঝুঁকি নিয়ে হলেও এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ব্যালেন্স শিট মেলাতে গিয়ে সময় শেষ করিনি।

শনিবার (২২ জুন) মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘অর্থনৈতিক শঙ্কা ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গত ১১ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ আমরা দিয়েছি। এই স্থিতিশীলতা হাতছাড়া করতে চাই না। জনগণও চায় না। এই স্থিতিশীলতায় কেউ আঘাত করতে চাইলে জনগণই বাধা দেবে।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমালোচনার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে সরকার সচেতন। আমরা দেখার চেষ্টা করছি। ব্যাংক কলাপ্স করেছে বা চেক ডিজঅনার হচ্ছে— এমন তো কিছু হচ্ছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য সবই তো চলছে। তবে এ কথা বলা যায়, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে মিস ম্যাচ হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আলোচনায় এসেছে— সবই আছে, কিন্তু পাবলিক নেই। এটা ঠিক নয়। কেননা সাধারণ মানুষের কাছে আমরা সম্মান পাই, গ্রামে গেলে চা খেতে পাই। কিছু মানুষের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা যতদিন পাওয়া যাবে, হাততালি যত দিন পাওয়া যাবে, ততদিন আমারাও থাকব।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চেীধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিজিএস নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

বিজ্ঞাপন

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, মাঠে-ঘাটে, নদীর পারে জনগণ তাদের সঙ্গে আছেন। তা প্রমাণ করার জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার, যার ব্যবস্থা দেশে নেই। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে অনির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে যে উন্নয়নের দাবি করা হয়, তাকে ‘উন্নয়নের রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পলিটিক্যাল ক্যাপিটাল। এ কারণে এ প্রবৃদ্ধি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খারাপ। তারল্য সংকট রয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর বলেছেন, ক্ষমতায় না থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধ্বংস হয়ে যাবে— এরকম মানসিকতা দুঃখজনক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ১০-১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প যদি ৩০ হাজার কোটি টাকায় হাতে নেওয়া হয়, তাহলে সেটি কি প্রকৃত বিনিয়োগ হবে? ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ইউএনডিপির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সেলিম জাহান বলেন, প্রবৃদ্ধি সংখ্যাগত দিক থেকে নয়, ভাবতে হবে কিসের প্রবৃদ্ধি, কার জন্য প্রবৃদ্ধি এবং কেমন প্রবৃদ্ধি? এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। প্রবৃদ্ধির জন্য প্রবৃদ্ধি নয়, মানব উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। বৈষম্যের কারণে একসময় রাজনৈতিক বোমায় পরিণত হবে।

বিজ্ঞাপন

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। ব্যাংকিং খাত বিষয়ে শক্ত কোনো সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। এ খাতে নজর দিতে হবে।

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বন্ড মার্কেট চালু করা সম্ভব নয়। কেননা এখানে করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে। সরকারিভাবে হলে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তবে বিশ্বাসের অভাবেই বন্ড মার্কেট কার্যকর হবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। ভারসাম্য না থাকলে কিছুই হবে না।

বিআইডিএসের গবেষক ড. নাজনীন আক্তার বলেন, উৎপাদনশীলতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে পোশাক খাতের শ্রমিকদের দিকে নজর দিতে হবে।

যুব মহিলালীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, যারা বছরে তিন কোটি টাকা আয় করেন, তারা যদি সঠিকভাবে কর দেন তাহলে দারিদ্র্যদের ঘাড়ে করের চাপ আসত না।

বাংলাদেশ মহিলা দলের সভাপতি সৈয়দা আসিফা আশরাফ পাপিয়া বলেন, উন্নয়নের প্রকৃত তথ্য জানার অধিকার সবার আছে। প্রকৃত তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশ বলা হলেও কোনো ব্যাংক মানছে না। তার ওপর গ্যাসের দাম বাড়ার কথা শুনলে ভাবি, আমরা শিল্পে প্রবৃদ্ধি চাই কি না। সেবা খাতে ৫ টাকা বাড়ালে বড় সমস্যা হবে না। কিন্তু শিল্প খাতে ২ টাকা খরচ বাড়লে তার প্রভাব ব্যাপক।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, জাতীয় আয় বা জিডিপি হচ্ছে বিনিয়োগ, ভোগ, সরকারি ব্যয় এবং আমদানি-রফতানির সমষ্টি। এই চলকগুলোয় পরিবর্তন এলে জিডিপি কমে বা বাড়ে। কিন্তু দেশে জাতীয় আয়ের হিসেবে গরমিল রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, রাজস্ব আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে সাম্প্রতিককালের বাজেটের লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী কর আদায়ের পরিমাণ যেমন কম, তেমনি করের আওতাও বাড়েনি। ফলে অন্যান্য বছরের মতো গত বছরের জুনে ঘোষিত এ বছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। ঘোষিত ও সংশোধিত বাজেটের কর আদায়ের পরিমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন