বিজ্ঞাপন

ঢাবি শিক্ষার্থী মানসিক হাসপাতালে মারধরের শিকার

June 24, 2019 | 8:37 pm

ঢাবি প্রতিনিধি

মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের মারধরের শিকার হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ স্বীকার করে জানিয়েছে, ওই ওয়ার্ড বয়কে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ জুন) রাতে মারধরের শিকার হন ঢাবি শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনে বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়।

রাকিবুল ইসলাম বাচ্চুর বন্ধু আব্দুল্লাহ আল সাঈদ সারাবাংলাকে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় বাচ্চুকে গত ১৭ জুন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে ওই হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয়ের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই ওয়ার্ড বয় তাকে মারধর করে।

সাঈদ বলেন, গতকাল (রোববার) বিকেলে বাচ্চুর মায়ের জবানবন্দি ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজনের সই নিয়ে আমরা হাসপাতালের পরিচালক বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তির আগে বাচ্চুর মায়ের কাছ থেকে এক দালাল পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

রাকিবের আরেক বন্ধু দেওয়ান আশরাফুল জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে রাকিবের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটে। অতিরিক্ত কথা বলা, কারও কারও প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে পড়া, নিজেকে সুপিরিয়র মনে করাসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানেই এক ওয়ার্ড বয়ের হাতে মারধরের শিকার হতে হলো তাকে।

মারধরের বিষয়ে বাচ্চুর মা ছবেদা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ছেলের গলা ভেঙেছে, তাই গরম পানি চাইল। আমি গরম পানি আনতে গিয়েছি, ও দরজায় দাঁড়ায়ে ছিল। ওকে বেডে পাঠিয়ে দিচ্ছিল, কিন্তু সে যায়নি। না যাওয়ার কারণে ধরে মারিছে। কয়ডা বাড়ি যা মারিছে, মানুষ হয়ে সহ্য করা যায় না।

বাচ্চুকে কী দিয়ে মেরছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেতের লাঠি দিয়ে মারিছে।

বিজ্ঞাপন

বাচ্চুর মা আরও জানান, ঈদের তিন দিন পর বাচ্চুর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সে বেশি কথা বলতে শুরু করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

জানতে চাইলে যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, ছেলেটা বেশ মেধাবী। কিন্তু মানসিক হাসপাতালে তাকে মারধর করা হয়েছে। তার পরিবার অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে চিঠি লিখেছিল। আমি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। মানসিক হাসপাতালে কর্তব্যরতদের আরও সহনীয় হওয়া উচিত— এমন মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ স্বীকার করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল সারাবাংলাকে বলেন, ওয়ার্ড বয় খায়রুল মামুন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বিষয়টি জেনেছি এবং এর পরপরই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ এ ধরনের কোনো ঘটনা এ হাসপাতালে ঘটবে— সেটা আমরা চিন্তাও করতে পারি না।

ডা. মোহিত কামাল জানান, ওই শিক্ষার্থী হাসপাতালে ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের অধীনে ভর্তি ছিল। আমরা নিজেরাই এ ঘটনা জেনে স্বম্ভিত, হতভম্ব হয়ে গেছি। কারণ এই হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য যারা রয়েছেন, তাদের রোগীদের সঙ্গে আচরণ বিষয়ে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণই দেওয়া থাকে। তাদের বলাই আছে, প্রয়োজনে তারা নিজেরা মার খাবে, কিন্তু কোনো রোগীর গায়ে হাত তোলা যাবে না। সেখানে ওই ওয়ার্ড বয় কী করে এই কাজ করল, এটাই বুঝতে পারছি না। তবে আমরা ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেডএফ/কেকে/জেএ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন