বিজ্ঞাপন

নাটক, সিনেমা আর ওয়েব ধারাবাহিকের পার্থক্য কোথায়?

June 25, 2019 | 4:50 pm

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিনোদনের সবথেকে কনিষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। টেলিভিশন, সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে কতিপয় মানুষ ওয়েবমুখী হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। চাইলেই ইচ্ছা মতো পছন্দ অনুযায়ী অনুষ্ঠান দেখা যায় বলেই ওয়েবে ঝুঁকছে মানুষ। প্রযুক্তিকে আশীর্বাদ মনে করলে এই ওয়েব দুনিয়াকে স্বাগত জানাতেই হবে। এক্ষেত্রে টেলিভিশন বা সিনেমা হল হুমকির মুখে পড়লেও কিছু করার থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে ওয়েব প্লাটফর্মটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সদস্য হয়ে এখানকার মানুষ পছন্দসই অনুষ্ঠান দেখছেন। এই টাকার পরিমাণ কিন্তু নেহায়েত কম নয়। দুর্মূল্যের বাজারে তবুও মানুষ টাকা খরচ করে ওয়েবে অনুষ্ঠান দেখছে।

ওয়েব কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নির্মাতারা ওয়েব ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন। কিন্তু সেই ওয়েব ধারাবাহিক সত্যিকার অর্থে ‘ওয়েব ধারাবাহিক’ কিনা— সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে অনেক জায়গাতেই। ওয়েব ধারাবাহিক বা ওয়েব কনটেন্ট আসলে কি? এর কি আলাদা কোনো ভাষা রয়েছে? এমন অনেক কিছুই জানার রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সেই সাথে রয়েছে অভিযোগ; এতদিন টেলিভিশনে যে নাটক বা টেলিছবি দেখত মানুষ সেটাই পর্ব আকারে ওয়েবে দেখানো হচ্ছে। সেই একই শিল্পী, একই কাহিনী। তাহলে ওয়েব প্ল্যাটফর্মের স্বকীয়তা কোথায়?

জনপ্রিয় নির্মাতা অনম বিশ্বাস এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ওয়েব সিরিজ নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। বিশেষ করে গল্প। ওয়েব সিরিজের গল্পটি এমন হতে হবে যেন সেটা দেখে মনে না হয় যে নাটক কিংবা সিনেমা। গল্পের উপস্থাপনা এমনভাবে হওয়া জরুরী যে কনটেন্টটি দেখে মনে হয় এটা ওয়েব সিরিজ।’

বিজ্ঞাপন

তার মানে ওয়েব ধারাবাহিকের নিজস্ব ভাষা আছে। কিন্তু কী সেই ভাষা? ভারতের জনপ্রিয় ওয়েব ধারাবাহিক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টিভিওয়ালা মিডিয়ার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সৌভিক দাশগুপ্ত বলেন, ‘ওয়েব সিরিজের নিজস্ব ভাষা আছে। তিন থেকে চার মিনিট অন্তর একটা চমক রাখতে হবে। ওয়েব সিরিজ মানুষ স্মার্টফোনে দেখে। সেখানে মানুষের মনোযোগ থাকে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট। তাই দর্শক ধরে রাখা জরুরি। আর দর্শক ধরে রাখতে চমক রাখতেই হবে।’

সৌভিক দাশগুপ্তের মতে, ওয়েব ধারাবাহিকের শুরুটা খুব আকর্ষণীয় হতে হবে। হুকিং পয়েন্ট থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘ওয়েব সিরিজ সিনেমা আর টেলিভিশন নাটকের মাঝামাঝি একটা ব্যাপার। ওয়েব সিরিজ কিন্তু সিনেমার মতো নির্মিত হয়। এটা আসলে দর্শক ধরে রাখার পদ্ধতি। শুধু তাই নয়, ওয়েবে নতুন অভিনয়শিল্পীদের সুযোগ দিতে হবে। তবে অবশ্যই ভালো অভিনয়শিল্পী হতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মে স্টারডম খাটে না। তাছাড়া এখানে অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি অন্য প্রকৌশলীদেরও ভার্সেটাইল হতে হবে।’

কিন্তু দেশের নির্মাতা সৈকত নাসিরের মতে বিশ্বব্যাপী ওয়েব সিরিজের কোনো নিজস্ব ভাষা তৈরি হয়নি। নাটক বা সিনেমা পর্ব আকারে দেখানো হচ্ছে ওয়েবে। সৈকত নাসির বলেন, ‘বিশ্বে ওয়েব সিরিজের চাহিদা বাড়লেও এর নিজস্ব কোনো ভাষা তৈরি হয়নি। ধারাবাহিক নাটক সিনেমাটিকভাবে উপস্থাপন করে ওয়েব সিরিজে রূপ দেয়া হয়। আমি অন্তত এটাই করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়েব প্ল্যাটফর্মে টাকা দিয়ে দেখতে হয়। সেজন্য ভালোকিছু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ থাকে। একটু ব্যতিক্রমী উপস্থাপন করতে না পারলে মানুষ টাকা খরচ করে দেখবে না। ওয়েব সিরিজ টাকা দিয়ে দেখতে হয় তাই এটাকে সিনেমার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। আবার নাটকের মতো পর্ব করে প্রচার হয় বলে একে নাটকও বলা যায়।’

বিজ্ঞাপন

সৈকত নাসির মনে করেন, নেটফ্লিক্স কিংবা হইচই প্ল্যাটফর্মে যেসব ওয়েব ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে তার স্বকীয় কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। ভবিষ্যতে এর নিজস্ব ভাষা তৈরি হবে কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে এটা বলা যায় যে, দিন দিন ওয়েব ধারাবাহিকের সংখ্যা বাড়বে।

সম্প্রতি মাসুদ হাসান উজ্জ্বল একটি ওয়েব ধারাবাহিক নির্মাণ করেছেন। এর আগে একাধিক জনপ্রিয় নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। তার পরিচালিত একটি সিনেমাও রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। নাটক ও সিনেমা থেকে ওয়েব সিরিজ বানানোর অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হয়েছে তার।

তিনি বলেন, ‘ওয়েব কোনো দায়সারা প্লাটফর্ম না। টেলিভিশনে যখন মানুষ নাটক দেখে তখন সেটার জাজমেন্টের ক্ষেত্রে উদার থাকে। ওয়েব চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রিপশন করতে হয় বলে দর্শক কড়া জাজমেন্ট করে। কোনো ওয়েব সিরিজ যদি দর্শক পুরোটা না দেখে তাহলে সেটা পুরোপুরি ব্যর্থ হবে। সেই ক্ষেত্রে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়েব সিরিজের অভিনয়শিল্পী বিষয় না। এখানে গল্পটাই আসল। গল্প যাকে ডিমান্ড করে তাকেই শিল্পী হিসেবে নিতে হবে। আমাদের দেশে যেসব ওয়েব সিরিজ হচ্ছে সেসব অনেকটা নাটকের মতো মনে হচ্ছে। এটা আসলে দুঃখজনক। এমন করে সফল হওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কারণ, যে জিনিস ফ্রিতে দেখতে পাওয়া যায় সেই একই স্ট্যান্ডার্ডের জিনিস ওয়েবে আসলে দেখার প্রশ্নই আসে না। এটা ভুল নীতি। বিশ্বব্যাপী ওয়েব সিরিজ হচ্ছে সেগুলো অনুসরণ না কারার কারণে এমনটা হচ্ছে।’

এসময় উজ্জ্বল জনপ্রিয় ওয়েব ধারাবাহিক ‘স্যাক্রেড গেমস’—এর উদারহণ টেনে বলেন, ‘এই ওয়েব সিরিজটিতে কিন্তু মেইন স্ট্রিম শিল্পীদের কোনো প্রাধান্যই নেই। সিরিজটির পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে এর গল্প। গল্পই সেখানে নায়ক। ওয়েব সিরিজের কারণে কিন্তু আয়ুষ্মাণ খুরানা, রাধিকা আপ্তের মতো অভিনয়শিল্পী ভারতীয় উপমহাদেশে আলোচনায় এসেছে। কোনো অভিনয়শিল্পী যখন সবখানে অভিনয় করেন তখন সে শিল্পীকে নিয়ে মানুষ আগ্রহ হারায়। তবে শিল্পী নির্বাচনের দায় একতরফা পরিচালকের ওপর বর্তায় না। প্রযোজকরা নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে বাধ্য হয়ে অনেক পরিচালক এমন সব শিল্পী নির্বাচন করেন যাদের নিয়মিত টিভিতে দেখা যায়।’

পরিচালক, শিল্পীদের মধ্যে যদি ভালো কাজের আগ্রহ থাকে তাহলে বাংলাদেশে ওয়েব ধারাবাহিকের ভবিষ্যৎ ভালো দিকে যাবে বলে তিনি মনে করেন। সেজন্য অভিনয়শিল্পীদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে, কমাতে হবে অস্থিরতা। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের মতে, বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা প্রতিদিন শুটিং করতে চান। যার কারণে তারা কোনো চরিত্রের ভেতর ঢুকে গিয়ে অভিনয় করতে পারেন না। এমনকি অনেক শিল্পী এমন কিছু পরিচালকের সাথে কাজ করেন যাদের তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারেন। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসলে ওয়েব সিরিজ চর্চায় বহুদূর যাবে বাংলাদেশ। আর সেজন্য বাজার গবেষণার ওপর নজর দেয়ার পক্ষে মত দেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ


আরও পড়ুন :

.   গৃহকর্মীর অন্তিম যাত্রায় অমিতাভ-অভিষেক

.   মৃত্যুর পরও থেমে নেই মাইকেল জ্যাকসনের আয়

.   দায়িত্ব নিলো অভিনয়শিল্পী সংঘের নতুন কমিটি

.   বাগদানের পথে আলিয়া-রণবীর!

.   বাদী মিলার বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা

.   বেনেগালের ছবিতে বঙ্গবন্ধু চরিত্রে আহমেদ রুবেল!

.   প্যানেল ছাড়াই প্রযোজক সমিতির নির্বাচন


Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন