বিজ্ঞাপন

গল্পটা গল্পকারের

July 3, 2019 | 2:49 pm

প্রতীক আকবর

জীবন গল্পের মতো? নাকি গল্পটাই জীবন?- কারো কারো ক্ষেত্রে হয়ত দুটোই ঠিক। গল্পেই জীবন খুঁজে ফেরেন কিনা আসাদ জামান, তা নিশ্চিত নয়। নিশ্চিত হওয়ার দরকারও নেই। কারণ নানা নাটকীয়তায় ভরা জীবন তো গল্পের মতোই। জীবনের কোন বাঁকে কী দাঁড়িয়ে আছে কে জানে!

বিজ্ঞাপন

একটি লাইব্রেরি কাম আড্ডাখানায় তখন মুড়ি চিবোতে চিবোতে আসাদ জামান নিজের গল্পটাই বলছিলেন। তার আগে বুদ্ধদেব বসুর কোনো একটি লেখা পড়ছিলেন তিনি। আড্ডা দেওয়ার কথা বলে সেই মনোযোগে বাগড়া দিয়ে শুরু হলো গল্প শোনা।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার সংলাপ, ‘যদি একদিন’ সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখা আসাদ জামানের কণ্ঠে তখন জীবনানন্দ-তার প্রিয় কবি। উইলিয়াম ওর্ডসওয়ার্থও ভাবনা তাড়িত করছে আসাদকে। দু’জন কবির গুণের মিশেলে আসাদের কাব্যময় কথাগুলোই তখন শুধু কানে আসছিল। অথচ রাস্তায় তখন প্রচণ্ড যান্ত্রিক কোলাহল।


আরও পড়ুন :  খুনি কে?


ইংরেজি সাহিত্যে পড়া বা থিয়েটারে কাজ করাই গল্প বলার কারণ নয় আসাদের জন্য। আপাতত গল্প বলতেই ভালো লাগছে তার, তাই গদ্য করা। যেদিন আসল সুযোগ পাবেন, সেদিন গল্পবলাকে গৌণ করে নিজেকে মুখ্য করে তুলবেন ক্যামেরার পেছনের কারিগর হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

আর সে জন্যই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন সিনেমা দেখা তার নেশা, সঙ্গে বই পড়াটাও। সিনেমার এই ভূত মাথায় চড়েছিল ইরানি সিনেমা ‘বারান’ দেখার পর। এভাবেও গল্প বলা যায়- উপলব্ধি তাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে।

এই অবস্থানে এসে কী পেলেন তিনি? সুনাম না কি অর্থ?
না, তার না কি কোনোটাই পাওয়া হয়নি এখনো। ভালোবাসা আছে বলে কষ্ট করেই পড়ে আছেন এই লাইনে।

বিজ্ঞাপন

 

কী সংলাপ লেখো? তোমার চিত্রনাট্য ভালো হয়নি? এই ধরণের কথাও শুনতে হয় কম হলেও। তাতে কি, কাজ করেই এসব কথার উত্তর দিতে চান আসাদ জামান। প্রতিটি কাজ করে নিজেকে উন্নত করেন, সংশোধন করেন, দেখে নেন নিজের ভুলগুলো।

মুড়ি চিবোনো শেষে এলো চা। সেখানেই বসে, এবার একটু হেলান দিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ।
বিরতি ভাঙলেন কষ্টের কথা দিয়ে। বললেন, ‘অনেক পরিশ্রম করে গল্প ভাবি, লিখি। কিন্তু তবুও দেশের চারদিকে নকল সিনেমা অভিযোগ।’

একথা শেষ করতে না করতেই নতুন উদ্যম পেলেন আসাদ জামান। ‘আমি চিনি এমন অনেক নতুন গল্পকার আছেন। যারা দুর্দান্ত অনেক গল্প নিয়ে বসে আছেন।’ নতুনদের কথা মনে হতেই এই উদ্যম। ‘কিন্তু তাদেরকে সুযোগ দেওয়ার মানসিকতা নেই আমাদের অধিকাংশ প্রযোজক-পরিচালকদের।’ একথা বলে আবার হেলান দিয়ে বসে পড়লেন আসাদ।

বিজ্ঞাপন

বলতে লাগলেন, ‘আমাদের দেশের গল্পকে ‘‘চৌধুরী সাহেব’’র পায়ের তলা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তার জন্য যে ধরণের নতুন গল্প প্রয়োজন আমরা নতুনরা তা দিতে পারব। আমাদেরকে সেই সুযোগ এবং সময় দিতে হবে।’

তিনি থামছেন না, ‘নতুন হিসেবে একটা সিনেমার গল্প বলার জন্য দুই মিনিট পেয়েছি, এমন ঘটনাও আছে। নতুন গল্প গ্রহণ করার জন্য প্রযোজক ও পরিচালকের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন আছে। সামাজিক ক্রাইসিস নিয়ে গল্প লিখলে সেখানে সেন্সর বোর্ডের কাচির ভয় আছে। ভালো গল্প হয়ে উঠতে এসব ভয় ও দৃষ্টিভঙ্গি অন্যতম অন্তরায়। যার কারণে ওই প্রেম আর ভালো কথা ছাড়া কোনো গল্প হচ্ছে না।’

একটু থেমে আবার বললেন, ‘তাছাড়া নতুন গল্পকারদের তো বেঁচেও থাকতে হবে। এদের যা টাকা দেওয়া হয়, তা দিয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব না। অনেক প্রেডাকশন আছে যারা মনেই করে না যে সিনেমায় একজন চিত্রনাট্যকার বা সংলাপ লেখার মানুষ প্রয়োজন হয়।’

নতুন কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখার প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সেগুলো এখন তিনি বলতে চাননি। শুরু হয়েছে তার লেখা সংলাপের সিনেমা ‘ঢাকা ২০৪০’।

এতক্ষণে দুটি চায়ের কাপ জমে গেছে টেবিলে। কমে এসেছে রাস্তার যানযট, শব্দ। কিছুটা ঠাণ্ডা বাতাস আসছে চিকন গলি ধরে। সঙ্গে মনে হয় আশাবাদটাও এলো জানালা দিয়ে।
আসাদ জামান আশাবাদি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গল্পের দারুণ সব পরিবর্তন আসবে, পরিবর্তন আসবে পরিচালতেও।

এমন আশাবাদ নিয়ে প্রতিদিন ঘরে ফেরেন আসাদ জামান। রাত হয় বাড়ি ফিরতে। কেরানীগঞ্জে পৌঁছাতে শেষ পথটা নৌকার। আধারে সবকিছু তেমন ভালো দেখা যায় না। জলের থৈ থৈ শব্দে শুধু ভেসে থাকে স্বপ্ন।

সারাবাংলা/পিএ/পিএম


আরও পড়ুন :  আছে নাকি নাই!


Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন