বিজ্ঞাপন

‘বিদায় চট্টগ্রামের শ্রীকান্ত’

July 13, 2019 | 5:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম ব্যুরো:

গান, নাটক আর সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন শান্তনু বিশ্বাস। মধ্যষাটে এসে থেমে গেছে তার যাত্রাপথ। প্রয়াণের খবর পৌঁছার পর কবি অরুণ শীল ফেসবুকে লেখেন, ‘আমাদের শহরের শ্রীকান্ত আর নেই।’ বাস্তবেই গায়কি আর কন্ঠের গুণে শান্তনু বিশ্বাস অনেকের হৃদয়েই ঠাঁই করে নিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম শহরের শ্রীকান্ত হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

শুধু কি গান, নাটক লেখা, নির্দেশনা, অভিনয়- কোথায় পদচারণা ছিল না বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই ব্যক্তির। চট্টগ্রাম শহরের এম এম আলী রোডের শিল্পকলা একাডেমির বিশাল শিশুগাছের নিচে ছায়া-সুনিবিড় চত্বরটায় জড়িয়ে আছে তার অনেক স্মৃতি। বিভিন্ন নাট্যদলের হয়ে শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয়ও করেছেন নিয়মিত। তার লেখা ও নির্দেশিত নাটকও প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্নসময়। আপাদমস্তক সংস্কৃতিবান মানুষটির অন্তিম যাত্রারও সাক্ষী হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ শান্তনু বিশ্বাস। শনিবার সকালে তার মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছার পর প্রথমে নেওয়া হয় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে।

বিজ্ঞাপন

বৃষ্টিস্নাত সকালে শহীদ মিনারে মরদেহ যখন নেওয়া হয়, আগে থেকে জড়ো হওয়া সংস্কৃতিকর্মীদের চোখেও তখন বৃষ্টি। মাত্র ৬৫ বছর বয়সে আকস্মিকভাবে সবার প্রিয়মুখ শান্তনু বিশ্বাস হারিয়ে যাবেন, মানতে পারছিলেন না কেউই। ঝড়-জলের দিনে তাই শান্তনু বিশ্বাসকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য শহীদ মিনার এবং বিকেলে শিল্পকলায়ও ভিড় জমে সংস্কৃতিকর্মীদের।

শান্তনু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন কবি কামরুল হাসান বাদল সারাবাংলাকে বলেন, ‘শান্তনু দা মারা যাবার সংবাদ শোনার পর থেকেই চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষগুলোর মধ্যে প্রিয়জন হারানোর বেদনা তৈরি হয়েছে। এমন শূন্যতা, এমন হাহাকার অনুভব হচ্ছে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বহুমাত্রিক প্রতিভা আর ব্যক্তিজীবনের সহজাত গুণের মানুষটি সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। আমাদের মনে হচ্ছে- আমরা সবাই আছি, এই শহর আগের মতোই আছে, শুধু নেই শান্তনু দা। একজন মানুষের জন্যই শহরজুড়ে বিশাল শূন্যতা।’

শান্তনু বিশ্বাসের স্ত্রী শুভ্রা বিশ্বাসও নাটকের সঙ্গেই আছেন। তিনি একজন নাট্যশিল্পী, পাশাপাশি নাট্য নির্দেশকও। শিল্পকলা একাডেমিতে দীর্ঘদিনের সঙ্গীর শিয়রে বসেছিলেন নির্বাক হয়ে, সঙ্গী হারানোর শোকে মুহ্যমান। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বাবা হারানোর বেদনা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেন মেয়ে অমৃতা বিশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

আবেগাক্রান্ত মন নিয়েই শিল্পকলা ও শহীদ মিনারে শান্তনু বিশ্বাসের স্মৃতিচারণ করেন চট্টগ্রামের আপামর সংস্কৃতিকর্মীরা। শহীদ জায়া বেগম মুশতারি শফি, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী আবুল মনসুর ও কুন্তল বড়ুয়া, নাট্যজন শিশির দত্ত, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি ডা.চন্দন দাশ ও সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা, কবি কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দের সভাপতি শৈবাল চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ম. সাইফুল আলম, কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও ওমর কায়সার, অধ্যাপিকা রীতা দত্ত, শিক্ষিকা সেলিনা শেলী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সংস্কৃতিকর্মী প্রবাল দে, খেলাঘর সংগঠক রোজী সেনসহ অনেকেই প্রয়াতের স্মৃতিতর্পণ করেন।

সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া শান্তনু বিশ্বাস ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবনেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি নাটক লেখা, অভিনয় ও নির্দেশনার সঙ্গে যুক্ত হন। অঙ্গন থিয়েটার ও গণায়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর নিজেই কালপুরুষ নামে একটি নাট্যদল গড়ে তোলেন।

মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখেন নাটক ‘ইনফরমার’। দেশের মঞ্চ ছাড়িয়ে সেই নাটক পরিবেশিত হয় বিদেশেও। তার লেখা নাটক ‘কালো গোলাপের দেশ, নবজন্ম, দপ্তরী রাজ দপ্তরে, নবজন্ম, ভবঘুরে ও নির্ভার’ প্রশংসিত হয়েছে। জুলিয়াস সিজারের শেষ সাত দিন, মানুষ ও নিয়তি, মৃণালের চিঠি- মঞ্চে এসব নাটকের নির্দেশনা দিয়ে তিনি প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নাটকের পাশাপাশি সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও শান্তনু বিশ্বাসের খ্যাতি ছিল। চারটি একক ও দুটি যৌথ অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তার। দেশের মঞ্চে নিজস্ব গায়কীতে সঙ্গীত পরিবেশন করে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, তেমনি দেশের বাইরেও গেছেন আমন্ত্রিত হয়ে।

তিনি অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ ইস্পাহানী শিল্প গোষ্ঠীর চিফ অপারেটিং অফিসার ছিলেন। এছাড়া টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে দুই মেয়ের বাবা শান্তনু বিশ্বাস। এক মেয়ে থাকেন ফিলিপাইনে, আরেকজন নেদারল্যান্ডে।

কবি কামরুল হাসান বাদল সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, শিল্পকলায় শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শান্তনু বিশ্বাসের মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনাটমি বিভাগকে মরণোত্তর দেহ দান করেছেন। তার এক মেয়ে দেশে ফিরেছেন। আরেক মেয়ে ফেরার পর মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সারাবাংলা/আরডি/পিএম


আরও পড়ুন :

.   গণিতবিদ হিসেবে সফল হৃত্বিক

.   দিলদারের জায়গা আজও খালি

.   এবার খুলনায়

.   সোনক্ষীর বাড়িতে পুলিশ!

.   মাকে হারালেন অভিনেতা জিতু আহসান

.   সিতারা ভাগ্যাহত এক নারীর গল্প: রাইমা সেন

.   বাবার ছবিতে আলিয়ার গান

.   কঠিন বাস্তবতা ও জীবনবোধের সিনেমা ‘আদম’


Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন