বিজ্ঞাপন

বিদায় বেলা বিএনপির কাছ থেকে যা পেলেন এরশাদ

July 14, 2019 | 6:54 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে সামরিক আইন জারি করে শাসনকাজ শুরু করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তারপর দীর্ঘ ৯ বছর টানা সংগ্রাম চালিয়ে যায় বিএনপি। সে সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিজ্ঞাপন

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শুধু বিএনপি নয়, দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সে আন্দোলনে শরিক হয়েছিল। বর্তমানের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক ঐক্য কেবল এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়-ই দেশবাসী দেখেছে। এরপর আর কোনো জাতীয় ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঐক্য সম্ভব হয়নি। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রশ্নেও নয়।

তবে রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে এরশাদ আজ যেমন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক মিত্র, তেমনি বিএনপিরও রাজনৈতিক মিত্র ছিলেন।

১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী শাসনামলের মাঝামাঝি এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা), গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী, আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শুরু হয় ‘রাজাকার’-এর পাশাপাশি ‘স্বৈরাচার’ নিয়ে বিএনপির পথচলা!

বিজ্ঞাপন

কিন্তু রাজনৈতিক লাভালাভের হিসাব কষে এরশাদ চারদলীয় জোটের ভবিষ্যৎ দেখে ফেলেন। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারেন, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে একই সঙ্গে তুষ্ট করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না। ভাগ-বাটোয়ারার রাজনীতিতে তিনি পিছিয়ে পড়বেন। বিএনপির কাছ থেকে তার চেয়ে গোলাম আযমই বেশি পাবেন। অতঃপর এক বছরের মাথায় চারদলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যান।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করেন এরশাদ। সে বছর ১৪টি আসনে জয় পায় তার দল জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করেন এরশাদ। সেই থেকেই বিএনপি ও জাপার মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব।

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ২০১১ সালের পর থেকে সরকারবিরোধী প্রতিটা আন্দোলন-সংগ্রামে এরশাদকে পাশে চেয়েছেন খালেদা জিয়া। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাপাকে পাশে চেয়েছে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নয়, নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে আওয়ামী লীগেরই পাশে থেকেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবেই তার জীবনাবসান ঘটে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে এরশাদ যখন বিরোধী দলের নেতা হিসেবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন, ঠিক সেই সময় রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন রয়েছেন কারাগারে। ‘মারাত্মক অসুস্থ’ খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তাই হয়তো প্রয়াত এরশাদের ব্যাপারে বিএনপির প্রতিক্রিয়া খুবই দায়সাড়া গোছের। বেলা পৌনে ১২ টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে এরশাদের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তির আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। এরশাদের ব্যাপারে পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।’

সংবাদ সম্মেলনের পৌনে ২ ঘণ্টা পর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদের স্বাক্ষর করা একটি শোক বার্তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এক লাইনের ওই শোক বার্তায় বলা হয়, ‘বিএনপি মহাসচিব আজ এক শোকবার্তায় মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারবর্গ ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ছিলেন এরশাদের উপরাষ্ট্রপতি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন এরশাদের উপপ্রধানমন্ত্রী। বিএনপির এমন অনেক নেতাই আছেন, যারা এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। কিন্তু বিদায় বেলায় তাদের কেউ-ই এরশাদের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ন্যুনতম স্মৃতিচারণ বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। বরং বিষয়টি একেবারে এড়িয়ে যান তারা।

বিজ্ঞাপন

এরশাদের ব্যাপারে প্রতিক্রিযা জানতে চাইলে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে অনেকেই ফোন দিয়েছে, আমি কারও সঙ্গে কথা বলিনি। তোমার সঙ্গেও বলব না। মৃত ব্যক্তির সমালোচনা করা যায়?’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তার (এরশাদ) বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তবে তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাব না।’

অর্থাৎ সাবেক রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের নেতা এরশাদের মৃত্যুতে বিএনপির প্রতিক্রিয়া আর দশজন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ার মতোই! বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ বা চাঞ্চল্য নেই বিএনপিতে!

সারাবাংলা/এজেড/এসআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন