বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি

July 16, 2019 | 3:05 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢল মিলে নদ-নদীর পানি বেড়ে চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ গত পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে পানিবন্দি মানুষগুলো। গ্রামীণ সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় চলাচলেও দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর ফসলের ক্ষেত।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে সবকটিতেই ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৩ উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। উপজেলাগুলো হচ্ছে- সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী ও লোহাগাড়া।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও ফটিকছড়ি উপজেলা। এরপর রাউজান উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সন্দ্বীপ এবং মীরসরাইয়ে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হলেও সেভাবে মানুষ পানিবন্দি নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৩টি উপজেলায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সব উপজেলায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এলাকা এফেক্টেড হয়েছে। কিন্তু ১৩টি উপজেলায় বেশি। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার পুরো অংশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফটিকছড়ি এবং রাউজানে পানির পরিমাণ অনেক বেশি।’

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসনের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের তিনটি নদীর পানি গত চারদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর মধ্যে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি বিপৎসীমা থেকে নেমে গেছে। সাঙ্গু নদীর পানি এখনো বান্দরবান পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার এবং দোহাজারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার প্রায় সব গ্রামই প্লাবিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর, সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড এলাকায় অন্তঃত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি আছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

হাটহাজারী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে গুমানমর্দন, নাঙলমোড়া, ছিপাতলি, মেখল, গড়দুয়ারা, উত্তর মাদার্শা ও দক্ষিণ মাদার্শা এবং ফরহাদাবাদ (আংশিক) ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। তবে হালদা নদীর পানি কমতে থাকায় ঘরবাড়ি-রাস্তা থেকেও পানি সরতে শুরু করেছে।

ফটিকছড়ি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটিতেই কমবেশি পানি উঠেছে। সমিতির হাট ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে।

স্বর্নিভর রাঙ্গুনিয়া, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ও ইছাখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, রাঙ্গুনিয়ায় বন্যার পাশাপাশি পাহাড়ধসের ঝুঁকিও আছে। সেখানে পাহাড় থেকে শতাধিক পরিবারকে ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চন্দনাইশ উপজেলার বরমা, দিয়াকূল, দোহাজারী, হাশিমপুর, দক্ষিণ হাশিমপুর, সুচিয়া, বৈলতলীসহ বিভিন্ন এলাকা মিলে ৮০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রায় ৪ হাজার ৩০০ পুকুরের মধ্যে ৩ হাজার পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ১ হাজার ৮০০ হেক্টর আউশ ধান এবং ১০০ হেক্টর আমনের বীজতলা ও ৩০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষেতও তলিয়ে গেছে পানিতে।

পটিয়া উপজেলার শোভনদণ্ডী, আশিয়া, ভাটিখাইন, বরলিয়া, কচুয়াই, কুসুমপুরা, জিরিসহ কয়েকটি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ১ হাজার ২০০ হেক্টর আউশ ধান এবং ১২০ হেক্টর আমনের বীজতলা ও প্রায় ১ হাজার ২০০ পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।

বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, ঝুলধা এলাকায় শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলার সব ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। এক উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন।

আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর, জুঁইদণ্ডী, বারখাইন ও হাইলধর ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ, শ্রীপুর, জৈষ্ঠপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে সেখানে পানিবন্দি মানুষের চেয়ে ফসলের ক্ষেত ও পুকুরের ক্ষতি হয়েছে বেশি। বাঁশখালী উপজেলায় পুকুরিয়া, শিলকূপ, কালিপুর ও পুঁইছড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

লোহাগাড়া উপজেলার দুটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ২৫টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে নগদ ১১ লাখ টাকা বানভাসী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে আছে- চাল, ডাল, চিড়া, চিনি, তেল, মুড়ি ও দিয়াশলাই। এছাড়া ৪০০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত থেমে গেছে। আর বৃষ্টি না হলে এবং নদীর পানি নেমে গেলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন