বিজ্ঞাপন

পা দিয়ে লিখেই এইচএসসিতে ‘এ’ গ্রেড

July 19, 2019 | 3:32 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের মেয়ে বিউটি পা দিয়ে লিখে এবারের এইচএসসিতে পেয়েছেন ‘এ’ গ্রেড। এর আগে জেএসসি ও এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ ফাইভ। বিউটি এখন চান উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে, আত্মনির্ভশীল হতে।

বিজ্ঞাপন

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্ম বিউটি খাতুনের। জন্ম থেকেই নেই বিউটির দুই হাত। বিউটি জন্মানোর পর বাবা বায়োজিদ হোসেন ও মা রহিমা খাতুনের প্রধান দুশ্চিন্তা ছিল- মেয়েটা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবে তো? পারবে তো এই কঠিন সমাজ আর বাস্তবতায় টিকে থাকতে?

তবে যত দিন যাচ্ছে, মা-বাবার কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে, আর ঠোঁটে ফুটে উঠছে হাসি। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন বিউটি। দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পা দিয়ে লিখে ‘এ গ্রেড’ পেয়েছেন তিনি। এর আগে জেএসসি ও এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ ফাইভ।

ইচ্ছাশক্তি থাকলে সব সম্ভব, পা দিয়ে লিখে সেটিই প্রমাণ করলেন বিউটি। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অর্জন করেছেন সাফল্য। বিউটি এখন চান উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে, আত্মনির্ভশীল হতে। জীবনের সব বাধা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে।

বিজ্ঞাপন

বিউটি সারাবাংলাকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক শাখায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চান তিনি। তার পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও খুশি হবেন তিনি। ভবিষ্যতে একজন শিক্ষক হতে চান বিউটি।

বিউটি বলেন, ‘লেখাপড়ার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা তার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

বিউটির বাবা বায়োজিদ হোসেন বলেন, ‘মেয়ে যখন দুটি হাত ছাড়াই জন্ম নিল, তখন সত্যিকার অর্থে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। বিউটি লেখাপড়া করতে পারবে, এটাই আমাদের ভাবনাতে ছিল না। শুধু চিন্তা হতো, মেয়েটা একা একা তার প্রয়োজনীয় কাজ সামলাতে পারবে তো।’

মা রহিমা বেগম বলেন, ‘বিউটি পড়ালেখা করবে, এই বিষয়ে আমাদের কোনো চিন্তা-ভাবনাই ছিল না। কারণ, আমরা ভেবেছিলাম পড়তে পারলেও লেখাটাই হবে বিউটির জন্য প্রধান সমস্যা।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা বিউটিকে পা দিয়ে লেখা শেখানোর চেষ্টা করতাম। ঘরের মেঝেতে বসিয়ে তার ডান পায়ের আঙুলের ফাঁকে পেনসিল অথবা কলম ধরিয়ে দিতাম। শুরুর দিকে বিউটির খুব সমস্যা হতো, তবে হাল না ছেড়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে গেছে বিউটি। একসময় পা দিয়ে লেখা আয়ত্ত্বে আনে বিউটি।’

দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সামছুল হক বলেন, ‘মেয়েটি মেধাবী। নিয়মিত ক্লাস করত। পা দিয়ে লিখলেও তার ইংরেজি ও বাংলা দুই লেখাই ভালো। তবে পা দিয়ে দ্রুত লিখতে সমস্যা হওয়ার কারণে তার মেধা অনুযায়ী ফলাফল করতে পারেনি বিউটি।’

বিজ্ঞাপন

ক্ষেতলাল উপজেলার আকলাস শিবপুর শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকাম উদ্দীন আকন্দ বলেন, ‘বিউটি পা দিয়ে লিখে এই বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতেও সে বৃত্তি পেয়েছে।’

বিউটির বড় ভাই বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর করেছেন। তবে এখনও চাকরি পাননি। অভাবের সংসার হওয়ায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট সয়েছেন বিউটির মা-বাবা ।

বিউটির স্বপ্ন, উচ্চতর লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে দেশ ও দশের সেবা করবে। অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণে সকলে এগিয়ে আসবেন, এমনটাই প্রত্যাশা তার পরিবারের।

সারাবাংলা/ওএম/জেএএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন