বিজ্ঞাপন

৪ মাসে ২৮৬টি বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড

July 24, 2019 | 9:56 am

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় গত ৪ মাসে ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড এবং ৪টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্র জানায়, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে আগে নিষ্ক্রিয় ছিল ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৪ মাসে (মার্চ-জুন) তারা ১০৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড ও ৪টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানে ৪৭টি যানবাহন আটক, ৫টি গুদাম সিলগালা ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ৭৩টি মামলা করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। এই মামলাগুলোতে জড়িত রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং আদায়কৃত রাজস্ব ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

এদিকে অভিযানে মামলা হওয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজেএমইএ)-ভুক্ত গার্মেন্টস। যেসব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বন্ড ফাঁকির অভিযোগে কাস্টমস মামলা করেছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে বিজেএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অধীনে মোট বন্ড লাইসেন্স রয়েছে ৬ হাজার ৮১৩টি।  এর মধ্যে সক্রিয় বন্ড লাইসেন্স রয়েছে ৩ হাজার ৮৩০টি এবং নিষ্ক্রিয় বন্ড লাইসেন্স ২ হাজার ৯৮৩টি। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অভিযান, প্রিভেনটিভ অভিযান ও নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। এ কারণে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড ও বিন লক করে দেয় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। ফলে এসব লাইসেন্স ব্যবহার করে কেউ বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি বা রফতানি করতে পারে না। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও শুনানি গ্রহণসহ আইনগত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাইসেন্সটি চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আরও জানা গেছে, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কতিপয় ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার আওতায় পণ্য তৈরি ও রফতানির পরিবর্তে কাঁচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে দেশীয় শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত শুল্ককর পরিশোধ করে যেসব ব্যবসায়ী বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি করে তারা বাজারে অসমপ্রতিযোগিতার কারণে ঝরে পড়ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার আল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করছে। আসলে এটা রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণার শামিল। তারা নিজেরা যেমন একদিকে কালো টাকা উপার্জন করে বড়লোক হচ্ছে অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। সুতরাং সৎ ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি অসৎ ব্যবসায়ীদের বিপরীতে সবধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান থাকবে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্ড দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে এনবিআরকে আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে। বেশি বেশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। একই সাথে বন্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও এনবিআরকে কঠোর হতে হবে। তাহলে বন্ড কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে এবং দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে।’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্ড কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এনবিআর থেকে বন্ড কমিশনারেটগুলোতে কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী বন্ড কমিশনারেটগুলো কাজ করছে। আমরা চাইলেই রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করতে পারব না। এজন্য কিছু সময় লাগবে। তবে নিয়মিত অভিযানের ফলে বন্ড দুর্নীতি এখন কমে এসেছে।  দেশীয় শিল্প রক্ষায় এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ’

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন