বিজ্ঞাপন

গুজবের সুযোগ নিতে চাইছে জঙ্গিরা

July 27, 2019 | 11:00 am

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিদিনই ছেলেধরা গুজব রটিয়ে কোথাও না কোথাও গণপিটুনির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। পদ্মাসেতুতে শিশুদের মাথা লাগবে এই গুজব ছড়িয়ে সুযোগসন্ধানী একটি দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি একই সময়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো অরাজকতার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৩ জুলাই রাতে রাজধানীর খামারবাড়ি ট্রাফিক বক্সের পাশে ও পল্টন মোড়ে হাতবোমা উদ্ধারের ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের কাছে মেসেজ ছিল দেশি জঙ্গি সংগঠনগুলো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের প্রখরদৃষ্টিতে মনিটরিং করা হয়। তারা ইচ্ছা করলে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিবর্তে সরাসরি হামলা চালাতে পারত। তা না করে তারা কার্টনের মধ্যে হাতবোমাগুলো ফেলে রাখে। আতঙ্ক সৃষ্টি করে জঙ্গিরা পরিস্থিতি বোঝাতে চায়।’ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। তবে তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এদিকে বুধবার (২৪ জুলাই) পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রাজধানীতে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় দেশীয় জঙ্গিদের যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে এটি খুবই প্রাথমিক তদন্তের ফল। আলামত সংগ্রহ করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বোমার ধরন ও এর ক্ষমতা সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।’

পুলিশের একজন বোমা বিশেষজ্ঞ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে হাতবোমাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো মাঝারি ধরনের শক্তিশালী ছিল। তবে এসব বোমা দিয়েও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব ছিল। বোমাগুলো ছিল একেবারই নতুনভাবে তৈরি ও তাজা। তবে এই বোমা তৈরির ধরন দেখে মনে হয়েছে, এগুলো দেশেই তৈরি করা হয়েছে। অতীতে জঙ্গি আস্তানা ও বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব বোমা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে মোটামুটি মিল রয়েছে। বোমাগুলোতে আইইডি জেল, বিয়ারিংয়ের বল, তার কাটা, ডেটোনেটর, গ্লাসের টুকরোসহ নানা উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশের জঙ্গিরাও তৎপরতা শুরু করে। প্রতিনিয়ত তাদের নিজস্ব চ্যানেলগুলোতে হামলা চালানোর জন্য তথ্য আদান-প্রদান হতো। পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা থাকা ও জঙ্গিদের হামলা চালানোর মতো ক্ষমতা না থাকার কারণেই জঙ্গিরা সফল হতে পারেনি। এরপর তারা সুযোগ খুঁজছিল। সম্প্রতি পদ্মাসেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে তারা আবার তৎপর হয়। পুলিশও সতর্ক অবস্থা নেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতেই হাতবোমাগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়। মূলত জঙ্গিরা সুযোগ নিতে চেয়েছিল। হামলা চালানোর মতো জঙ্গিদের তেমন কোনো ক্ষমতা নেই। তবে সুযোগ সন্ধানী জঙ্গিরা মাঠে রয়েছে।’

রাজধানীর আলাদা দুই জায়গা থেকে মোট ছয়টি বোমা উদ্ধারের ঘটনার একদিন পরেই খিলগাঁও এলাকা থেকে একটি একে ২২ রাইফেল ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে একে ২২ রাইফেল উদ্ধারের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ কিছু না জানালেও খিলগাঁও থানার একজন পরিদর্শক এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত ৩০ জুন রাজধানীর ওয়ারীর ওয়ান্ডারল্যান্ডের সামনে থেকে একে ২২ রাইফেল উদ্ধার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। ওই অস্ত্র জব্দের ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও এখনো চারজন পলাতক রয়েছে। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারে অস্ত্র হাতবদলের ঘটনায় জামায়াতের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২৯ এপ্রিল সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে গুলিস্তানের ডন প্লাজার সামনে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়া হয়। এতে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৩৭), লিটন (৪২) ও কমিউনিটি পুলিশ মো. আশিক (২৮) আহত হয়। এর একদিন পর জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়।

এর কিছুদিন পর গত ২৬ মে রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন পুলিশের টহল গাড়িতে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, পুলিশের গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় টার্গেট ছিল পুলিশ। হামলায় শক্তিশালী ইমপ্রোভাইজড ককটেল ব্যবহার করা হয়েছিল।

এই দুই ঘটনার তদন্ত শেষে চূড়ান্তভাবে জড়িতদের ব্যাপারে জানানোর কথা ছিল ডিএমপি কমিশনারের। যা কয়েক মাসেও হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন