বিজ্ঞাপন

‘সুপ্রিমকোর্টকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন নতুন প্রধান বিচারপতি’

February 6, 2018 | 9:03 am

আবদুল জাব্বার খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। রোববার আপিল বিভাগে সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতির কাছে আদালতের নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী সারাবাংলাকে জানান, দীর্ঘদিনের এসব সমস্যার সমাধান করবেন নতুন প্রধান বিচারপতি এমনটাই তারা প্রত্যাশা করছেন। তবে দুর্নীতির বিষয়টি ওপেন কোর্টে না বলে ব্যক্তিগতভাবে প্রধান বিচারপতিকে জানানো উচিত ছিল বলেও মনে করছেন সিনিয়র এই আইনজীবীরা। গত ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় ওপেন কোর্টে দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমরা যাকে পেয়েছি তিনি অত্যন্ত সৎ ও একনিষ্ঠ। বিচারাঙ্গনে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা আমলে নিয়ে নতুন প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগকে এই অপবাদ থেকে মুক্তি দেবেন বলে আমি আশাবাদী।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আইন পেশা একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা। এ পেশায় থেকে মানুষকে অনেক সাহায্য করা যায়। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই আদালত ও আইনজীবীরা রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করা উচিত। যাতে এই ধরনের অপবাদ আইনজীবীদের কেউ না দিতে পারে।’

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল অনেক অভিযোগই তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্যে আদালতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা উঠে এসেছে। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা, এভাবে প্রকাশ্যে এসব অভিযোগ তুলে না ধরে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারতেন।’

বাসেদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বর্তমান প্রধান বিচারপতি অনেক বিচক্ষণ। তিনি দীর্ঘদিন হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগগুলো উপস্থাপিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এ সব সমস্যার সমাধান করবেন বলেই আমরা আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, `প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল যেসব বিষয় উপস্থাপন করেছেন বিচার প্রার্থীদের পাশাপাশি আইনজীবীরাও এখানে ভুক্তভোগী। এই সমস্যাগুলো অনেক আগের। তবে কখনো রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার মুখে এ ধরনের অভিযোগ উপস্থাপিত হয়নি। তিনি আরও আগে ভূমিকা নিলে হয়তো সমস্যা কমে যেত।’

তিনি  আরও বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের ভাবমূর্তি ও বিচারাঙ্গন সম্পর্কে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আদালত অঙ্গনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বারের সদস্যদের নিয়ে কমিটি করে কোথায় দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা হচ্ছে সেটা চিহ্নিত করা যায়। আশা করি, বিচারবিভাগের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে নতুন প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নেবেন।’

আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্ট বিভাগের কতিপয় বেঞ্চ অফিসারসহ কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দুর্নীতির বিষয় এতদিন গোপনে আলোচনায় হলেও এই প্রথম প্রকাশ্যে তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘ইতিপূর্বে কোনো এক প্রধান বিচারপতির সংর্ধনায় আদালতের অবক্ষয়ের কিছু নমুনা তুলে ধরেছিলেন তিনি। এতে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তদন্তের পদক্ষেপ নেন। তদন্ত অনেকটা অগ্রসরও হয়। তবে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি আসার উনার দফতর থেকে ফাইলটি নিখোঁজ হয়ে গেল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আদালতের কিছু অসাধু কর্মচারী দিনের কার্যতালিকা থেকে মামলা নিচের থেকে উপরে উঠিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আগে একটি কি দুটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হতো। এখন মাসের পর মাস রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হচ্ছে না মাসের পর মাস।’

সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ/এমএইচ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন