বিজ্ঞাপন

কেউ হতে চান না রাষ্ট্রপতি!

February 7, 2018 | 12:04 am

মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দেশের সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে যে কোনো নির্বাচনে গণতান্ত্রিক দলগুলো থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচনকে সরগরম করে রাখে। এমনকী একই পদে সর্বাধিক প্রার্থী কিংবা একই দল থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় কোনো কোনো সময় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হয়। কখনো কখনো সেটা দ্বন্দ্ব সংঘাত, হানাহানি পর্যন্ত গড়ায়। কেউ কেউ তাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফসল বলে মেনেও নেন। তবে দেশে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।

সাংবিধানিক এ পদে নির্বাচনে দাপ্তরিক সব প্রক্রিয়া, বিধি-বিধান কিংবা আইনি সুযোগ থাকা সত্বেও আগ্রহী প্রার্থী খুব একটা পাওয়া যায় না। দশকের পর দশক দেশের শীর্ষ এ পদটিতে যারাই আসীন হয়েছেন, তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে খুব একটা হৈচৈ শোনা যায়নি। তাতে সাধারণ জনগণের কোনা উৎসাহ-উদ্দীপণা এ নিয়ে ধীরে ধীরে কমে এসেছে। ফলে এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন আর হয়ই না। গত ছাব্বিশ বছরে একটি বারের জন্যও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কোনও ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আর রাষ্ট্রপতি পদটি ধীরে ধীরে তার জৌলুস এতটাই হারিয়েছে যে, এই পদে যাওয়ার আগ্রহও দিন দিন কমছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজেও একাধিকবার তার এই পদে আসীন থাকা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জনবিচ্ছিন্ন এই পদ তার ভালো লাগে না। বন্দি জীবন মনে হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতি। তিনি সংবিধান ও আইনবলে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করেন। দেশের এই অভিভাবক নির্বাচনের প্রক্রিয়াও গণতান্ত্রিক। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান রয়েছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ায় ওই বছরই শেষ এ পদে নির্বাচনে প্রদিদ্বন্দ্বীতা হয়। এরপর গত ২৬ বছরে এ পদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি সংসদ সদস্যরা। তাই সব রাষ্ট্রপতিই এসেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর ঘরোয়া আয়োজন থেকে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি পদটি যে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট কোনো পদ সে বিষয়টিও মানুষ ভুলতে বসেছে।

দেশ এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এই নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। কি হতে যাচ্ছে এই দিনে? রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সে নিয়ে যে উৎসাহ উদ্দীপনা থাকার কথা তার কিছুই নেই। কারণ এবারেও এখানে প্রার্থী মাত্র একজন। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। দলের মনোনয়ন ফের পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আর কোনও প্রার্থী নেই।

বিজ্ঞাপন

তবে একাধিক প্রার্থী থাকুক আর না থাকুক একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হয় নির্বাচন কমিশনকে।

গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সোমবার ছিলো মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন। তবে শেষ দিনে এ পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মনোনয়নপত্র জমা দেন। যদিও তার এসব কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফের তিনিই হচ্ছেন বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি।

নবম জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে ওই পদ শূন্য হলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ হতে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ছিল গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর বুধবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হচ্ছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছৈ। যেহেতু রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী তাই আজই হচ্ছে যাবতীয় কাজের শেষ সময়। আর আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদে ভোটগ্রহণের বিধান থাকলেও আর কোনো প্রার্থী না থাকায় সেটি হচ্ছেনা।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি এবং ২১তম। দেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত ১০ বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে।

তবে বিষয়টি অতীতে এমন ছিলো না। ১৯৭৮ সালের ৩ জুলাই সাধারণ ভোটারদের ভোটে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। একই পদ্ধতিতে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী। সেসময় ৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। একইভাবে তৃতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১২ জন। সে সময় জয়লাভ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

১৯৯১ সালের পর এই পদে নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, মো. জিল্লুর রহমান ও মো. আবদুল হামিদ।

সারাবাংলা/এমএস/এমএম

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন