বিজ্ঞাপন

হাইকোর্টে জামিন পাননি মিন্নি

August 8, 2019 | 4:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিন পাননি হাইকোর্টে। জামিন আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দিতে চাইলে মিন্নির আইনজীবীরা তাতে সম্মত হননি। পরে আদালত জামিন আবেদন ফেরত দেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মিন্নির জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

জামিন শুনানিতে মিন্নির পক্ষে ছিলেন জামিন আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জেড আই খান পান্না। সঙ্গে ছিলেন আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির।

এদিন জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মিন্নির জামিন বিষয়ে রুল দিতে চান। এসময় মিন্নির আইনজীবীরা রুল নিতে সম্মত না হয়ে জামিন আবেদন ফেরত চান। তখন আদালত মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত দেন।

বিজ্ঞাপন

পরে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি ধ্বংস করার জন্য এই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষি ও এক নম্বর সাক্ষিকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের ধরতে তৎপর না, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি এসেছে। বিষয়টি আমরা আদালতের কাছে তুলে ধরে বলেছি, মিন্নির বয়স মাত্র ১৯ বছর। তিনি জামিন পেতে পারেন। তাকে জামিন না দেওয়ায় আমরা মর্মাহত।

রুল না নিয়ে জামিন আবেদন ফেরত নেওয়া প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, রুল নিষ্পত্তি অনেক সময়ের বিষয়। মিন্নি ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা পেলে আমরা আবার জামিন চাইব। সেটা না পেলে আইনি নোটিশ দিয়ে চাইব। না দিলে আবার আদালতের দ্বারস্থ হব। এটা পাবলিক ডক্যুমেন্ট, আমাদের পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

বিজ্ঞাপন

পরদিন মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদন উত্থাপন করা হলে আদালত বলেন, এই মামলা শুনতে অনেক সময় লাগবে। এ কারণে এই মামলা শুনানির জন্য আমরা সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ঠিক করে রাখলাম।

রিফাত হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম সাক্ষী মিন্নিকে পুলিশ গত ১৬ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদ করে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতের হাজির করে রিমান্ড চাইলে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একদিন পর ১৯ জুলাই মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর অভিযোগ করেন, মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ।

পরে ২১ জুলাই বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নির জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি নিয়ে সে আবেদন নাকচ করে দেন। পরে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে দ্বিতীয়বারের মতো মিন্নির জামিন চেয়ে আবাদেন করা হয়। ৩০ জুলাই সে আবেদন খারিজ করে দেন এই আদালতও। বিচারিক আদালতে দুই দফায় জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে এসেও জামিন পেলেন না মিন্নি।

আগে যা হয়েছিল

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে মিন্নির স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মিন্নি তার স্বামী বাঁচাতে চেষ্টা করছেন— এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তবে পরে আরও একটি ভিডিও প্রকাশ পায়, যাতে মিন্নির কিছু আচরণ অস্বাভাবিক মনে হয়। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে রিফাত শরীফের পরিবার। তাদের দাবি, মিন্নি নিজেও রিফাতের হত্যার সঙ্গে জড়িত। এ অভিযোগে মামলাও দায়ের হয়। এর ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্নিকে আটক করে। পরে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড দিলে দ্বিতীয় দিনেই মিন্নিকে আদালতে নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, রিফাত হত্যাকাণ্ডের পরদিন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয় মামলায়। মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মিন্নিসহ মোট ১০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন