বিজ্ঞাপন

৭০ টাকার ভাড়া ৪০০!

August 9, 2019 | 9:59 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গাবতলী পৌঁছাতেই চোখে পড়লো অনেকগুলো গাড়ি সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে, গন্তব্য আরিচা-পাটুরিয়া। ঈদযাত্রায় বাসের আগাম টিকিট যারা সংগ্রহ করতে পারেননি, নৌপথে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রার জন্য তাদের ভরসা এই বাসগুলোই। সেই বাসগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যাত্রী ডাকছেন হেলপাররা। কিন্তু ভাড়া শুনেই চক্ষু চড়কগাছ! গাবতলী থেকে আরিচার ভাড়া নাকি ৪০০!

বিজ্ঞাপন

ঈদ এলেই এমন চিত্র। ঈদযাত্রার আগাম টিকিট বিক্রির একদিনের মধ্যেই শেষ। এরপর ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেলেও বড় একটি অংশের মানুষের হাতে নেই টিকিট। তখন ভরসা নদীপথ। গাবতলী থেকে আরিচা-পাটুরিয়া। সেখানে নদী পার হয়ে উত্তর বা দক্ষিণের জেলাগুলোতে রওনা। একটু ভেঙে যেতে হলেও তাতে আপত্তি নেই যাত্রীদের। কিন্তু গোলটা বাঁধে ওই গাবতলীতেই। সারাবছর যে রাস্তা ৭০ টাকায় যাতায়াত করা যায়, সেই পথের ভাড়া বেড়ে হয়ে যায় কয়েকগুণ!

এ বছরের অবস্থা আরও খারাপ। শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে গাবতলী গিয়ে দেখা গেল, আরিচাগামী বাসগুলো ‘একদাম’ ৪০০ টাকা ভাড়া হাঁকিয়ে বসে আছে। তা শুনে কোনো কোনো যাত্রী ফিরে যাচ্ছেন বিরস বদনে। কেউ কেউ এত ভাড়া শুনে হেলপারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়ছেন। তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই বাসের হেলপার-চালকদের, তারা ৪০০ টাকা ভাড়া না পেলে যাত্রী তুলতে নারাজ।

বিজ্ঞাপন

অধিকাংশ বাসের হেলপার-চালকরা বলছেন, রাস্তায় যে পরিমাণ জ্যাম, তাদের যেতে-আসতে প্রচুর সময় লাগে। দিনে একটির বেশি ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া যাওয়ার সময় বাসভর্তি যাত্রী থাকলেও ফিরতে হয় খালি গাড়ি নিয়ে। সে কারণেই তারা ‘একটু বেশি’ ভাড়া আদায় করে ‘পুষিয়ে নেওয়া’র চেষ্টা করছেন।

অস্বাভাবিক এই ভাড়ায় ঈদে ঘরে ফিরতে মরিয়া মানুষদের জিম্মি হয়ে পড়তে হচ্ছে। তবে এর চেয়েও বেশি ভুগতে হচ্ছে আরিচা-পাটুরিয়া কিংবা মানিকগঞ্জের ওই এলাকার বাসিন্দাদের। ঈদযাত্রা নয়, তাদের নিত্য যাতায়াতের পথেই যে এভাবে পকেট কাটা পড়ছে!

গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গ যাবেন রাকিব চৌধুরী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ঈদে বাড়ি যাব, কিন্তু আগাম টিকিট নিতে পারিনি। টিকিট যখন ছেড়েছে, নিতে এসে দেখি সব টিকিট আগেই শেষ। আজ এসেও সব কাউন্টারে টিকিট খুঁজলাম, পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে ভেঙে নৌপথে যেতে হবে। আমাদের এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে লোকাল বাসগুলো। আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি।

বিজ্ঞাপন

আরেক যাত্রী রেদোয়ানও বাসের টিকিট না পেয়ে পাটুরিয়া হয়ে পাবনা সদরে যাবেন। কিন্তু পাটুরিয়া পর্যন্ত যেতেই ৪০০ টাকা গুনতে হবে জেনে খানিকটা দমে গেছেন তিনি। বলেন, প্রতিটা জায়গায় আমরা ধরা খেয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে দেখেন পাটুরিয়ার ভাড়া নিচ্ছে ৪০০ টাকা। আবার ঘাটে যাবেন, স্পিডবোটের নিয়মিত ২০০ টাকা ভাড়া এখন হয়ে যাবে চার-পাঁচশ টাকা। নৌপথে যেখানে ৩০০ টাকায় বাড়ি যাওয়া যায়, এখন হাজার টাকাতেও যেতে পারব না! ‘এর কি কোনো প্রতিকার নেই?’— ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন রাখেন রেদোয়ান।

মৌমিতা পরিবহনের যাত্রী রিয়াজ বলেন, এমনিতে ভাড়া ৭০ টাকা, এখন না হয় দুই-আড়াইশ টাকা নিতে পারে। কিন্তু তাই বলে ৪০০ টাকা! দেখেন, আশপাশে পুলিশ প্রশাসনও কিন্তু আছে। তাদের নাকে ডগাতেই এই অন্যায্য ভাড়া নিচ্ছে পরিবহনগুলো। অথচ তারা এখন যেন কিছুই দেখে না!

তিনি আরও বলেন, ঈদ সামনে রেখে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভাড়া নিচ্ছে পরিবহনগুলো। এদের কড়া শাস্তি না দিলে কিভাবে আমরা অনিয়ম দূর করব?

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে গাবতলীর বাস মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, আমরা সব ড্রাইভার-হেলপারকে বলেছি, কেউ যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে। আমার জানামতে কেউ বেশি টাকা নিচ্ছেও না। তারপরও কেউ যদি বাড়তি ভাড়া নেয়, আমরা বিষয়টি দেখব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বাস মালিক অবশ্য পরক্ষণেই স্বীকার করে নিলেন, ঈদে ‘একটু বেশি ভাড়া’ আদায় করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ঈদ বোনাস হিসেবে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হয়। শুধু ঈদ বলে নয়, এই সময় রাস্তায় এত জ্যাম থাকে যে বাসগুলো দিনে একটার বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। তাই একটু বেশি ভাড়া না পেলে তাদের যাওয়া-আসার ভাড়া পোষাবে না।

এদিকে, গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ বাড়ির পথে রওনা দিতে এসে অপেক্ষা করছেন। যারা আগাম টিকিট কাটতে পারেননি, একদম সকালে তাদের ভিড়টাই একটু বেশি। যাত্রীদের এই জনস্রোতে এখন রাজধানীর বাস টার্মিনাল ঘিরেও তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। গাবতলী আসার পথে এই প্রতিবেদককেই শ্যামলী থেকে হাঁটতে হয়েছে। বাসের চালক-হেলপাররা বলছেন, গাবতলী ছাড়িয়ে যানজটের লাইন নবীনগর পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সারাবাংলা/এআই/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন