বিজ্ঞাপন

ভূস্বর্গ এখন আতঙ্কের নগরী, বিচ্ছিন্ন বহির্বিশ্ব থেকে

August 11, 2019 | 8:40 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের একটি রাস্তা। চেক পয়েন্টগুলোর পেছনে মাথায় কালো ব্যান্ডানা পরা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বন্দুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছেন কিন্তু বাইরে পা ফেলার সাহস পাচ্ছেন না। অনেক বাড়িতেই শেষ হয়ে গেছে খাবার।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিলে কাশ্মীরি জনগণের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের পর শনিবার থেকে ওই অঞ্চলে এরকম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দোকানপাট বন্ধ। এটিএম মেশিনগুলোও টাকা শূন্য হয়ে পড়েছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের সব মাধ্যম ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন এমনকি ল্যান্ড ফোনের মতো সব পথই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কাশ্মীরে জরুরি অবস্থা জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিক কাশ্মীরের এই অবস্থার বর্ননা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি তার প্রতিবেদনে লিখেছেন জরুরি অবস্থা জারির পর কাশ্মীরিদের মধ্যে এক ধরনের ভয়, বিহ্বলতা, ও হতাশা দেখতে পেয়েছেন।

শ্রীনগরের রাস্তায় টহল অব্যাহত রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা

যেসব কাশ্মীরি নাগরিক বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বালির বস্তা দিয়ে চিহ্নিত সীমারেখা অতিক্রম করেছে তাদেরই ক্ষমা চাইতে হয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছে নিত্য প্রযোজনীয় দ্রব্য কিনতে বাইরে যাওয়ার কারণে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

গত ৫ জুন সোমবার ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকেউ বিচলিত করেছে। যারা কাশ্মীরের একটা অংশ নিজেদের বলে মনে করে। ওই অঞ্চলটি ভারত-পাকিস্তান দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মাঝে অবস্থিত। এছাড়া কাশ্মীর এশিয়ার সবচেয়ে বিবাদমান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।  যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। তবে ভারতের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলকে আরও বেশি উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার হাজার হাজার কাশ্মীরি শ্রীনগরের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। সেসময় তারা কাশ্মীরের পতাকা হাতে স্বাধীনতা চেয়ে শ্লোগান দিলে ভারতীয় বাহিনী তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে।

ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় জম্মু ও কাশ্মীর যুব কংগ্রেসের এক সদস্যকে আটক করা হচ্ছে

এরপর হইচই, আতঙ্ক শুরু হয়। তাদের ওপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি বর্ষণ করা হলে অনেকের চোখে ও শরীরে গুলির ছররা লাগে।

বিজ্ঞাপন

সেসময় দৌড়াতে গিয়ে আফসানা ফারুখ নামে ১৪ বছরের এক কিশোরী পদদলিত হয়।

আফসানার বাবা ফারুখ আহমেদ শ্রীনরের একটি হাসপাতালে মেয়ের বিছানার পাশে বসে বলেন, ‘নামাজ শেষে আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করছিলাম। তখন তারা আমাদের ওপর গুলি চালায়।’

শ্রীনগরের রাস্তায় বিক্ষুদ্ধ কাশ্মীরিদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একটি ট্রাক ভেঙে ফেলে পুলিশ সদস্যরা 

অনেক কাশ্মীরি নাগরিক মনে করে ভারত একটি বিদেশি ও দখলদার রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালের পর ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর তাদের অনেক কিছু পরিবর্তনের কথা থাকলেও ভারক সরকার তার খুব একটা করেনি বলে মনে করে তারা।

কাশ্মীরের এই অবস্থার যে পরিবর্তন দরকার সে বিষয়ে কাররই দ্বিমত নেই। কয়েক দশক ধরে সেখানে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অর্থনীতিও হয়ে পড়েছে দুর্বল।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর গত শুক্রবার প্রতিবাদ জানায় কাশ্মীরের নাগিরিকরা

নয়া দিল্লীর একজন কর্মকর্তা গত শনিবার একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায় একটি ফলের মার্কেট ও জনাকীর্ণ সড়ক। যেখানে বলা হয় কাশ্মীরের অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীরা জানাচ্ছেন শনিবারের পরও সেখানে অব্যাহত রয়েছে।

বড়মোল্লা এলাকায় নিয়োজিত রবি কান্ত নামে এক সেনা সদস্য জানিয়েছেন, দিনে রাতে যেকোনো সময়, যখনই তারা সময় পাচ্ছে দশ জন, বিশ জন বা তার বেশি মানুষ এক সঙ্গে হয়ে, মাঝে মধ্যে নারীদের নিয়েও বেরিয়ে আসছে এবং আমাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাচ্ছে।

সেখানকার জনগণ খুবই ক্ষুব্ধ, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের দাবিতে কঠোর এবং একদমই ভয় পাচ্ছে না।’

 গত শুক্রবার কাশ্মীরের নারীরাও বেরিয়ে এসে ভারতের বিপক্ষে শ্লোগান দিতে থাকে

জরুরি অবস্থার চিহ্ন সব জায়গাতে দৃশ্যমান। স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পার্কগুলোও জনমানব শূন্য। ফুরিয়ে গেছে শিশু খাদ্যও। অনেক এলাকার বাসিন্দাদের কারফিউ পাস দেওয়া হয়েছে যাতে চিকিৎসার জন্য বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারে।

সেখানকার লালা দেব হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে অসুস্থ রোগীরা ভিড় করতে শুরু করেছে। তাদের দেখাশোনার জন্য আছে মাত্র কয়েকজন ডাক্তার-নার্স। অনেক চিকিৎসকই কাজে যেতে পারেনি। হাসপাতালের মেঝেতেও অনেক রোগী শুয়ে ছিল।

জামিলা নামে একজন ডাক্তার বলেন, ‘এখানকার পরিস্থিতি জীবন্ত নরকের মতো।’

শ্রীনগরের রাস্তায় একদল ভেড়া

কয়েক দশক আগে থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে নিজস্ব মুখ্যমন্ত্রী ছিল। ভারতীয়দেরও সেখানে ভ্রমণ করতে হলে আলাদা ভ্রমণ ভিসার প্রয়োজন হতো। গত সপ্তাহ থেকে ভারত সরকার তাদের সেই অধিকার তুলে নিয়ে নিজেদের সংবিধান চালু করেছে।

কাশ্মীরের ডাল লেক ছেড়ে যাচ্ছে পর্যটকরা 

সারাবাংলা/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন