বিজ্ঞাপন

রাত পোহালেই ত্যাগ-মহিমার ঈদ

August 11, 2019 | 10:49 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা শুরু হবে রাত পোহালেই। পশ্চিম আকাশে ঊদিত জিলহজ মাসের চাঁদ পশু কোরবানির তাগিদ দিয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। এরমধ্যে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন লাখো লাখো মানুষ। ঈদের ছুটিগুলো তারা কাটাবেন পরিবার-পরিজনদের সান্নিধ্যে।

বিজ্ঞাপন

আগামীকাল সোমবার সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর পথে পশু কোরবানি করবেন। তবে পশু এ ক্ষেত্রে প্রতীকমাত্র। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ নিয়ে মনে যে পশু বাস করে, তাকে পরাভূত করাই পবিত্র ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টলাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে ঈদের সকালে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এরইমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। রোববার মেয়র সাঈদ খোকন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

ঈদ জামাত

এবার রাজধানীতে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি’র উদ্যোগে ৫৮২টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতসহ ঈদুল আজহার ৩১২টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৭০টি স্থানে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমে জাতীয় মসজিদ পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে মহিলাদের অংশ নেওয়ার জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের গাড়ি রাখা ও ঈদগাহকে নামাজ আদায়ের উপযোগী করার জন্য প্যান্ডেল নির্মাণ, অযুর পানি নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।

বিশ্বের মুসলিমরা ১০ জিলহজ আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় পশু কোরবানি করেন। তবে ১১ ও ১২ জিলহজও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঈদুল আজহা পালনে রাজধানীসহ দেশের অন্য এলাকায় যারা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে থাকেন, তারা অনেকেই বরাবরের মতো গ্রামের দিকে ছুটে গেছেন। পথের দুর্ভোগ, কষ্ট ভোগ করে লাখো লাখো মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে স্বজনদের কাছে ছুটে গেছেন। আজও অনেকে বাড়ি যাবেন। এদিকে এবার রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যেই ডেঙ্গু আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও আল্লাহর সন্তুষ্টলাভের আশায় কষ্ট শিকার করে গ্রামে যাচ্ছেন কোরবানি দিতে। সোমবার সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনি-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবেন।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ অন্যরা। এসব বাণীতে তারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ, জাতিসহ গোটা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনা করেছেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোয় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশুসদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।

কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্বারা যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জামাত

প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)’কে কুরবানী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন।

এ জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের সর্বোত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় সোমবার দিনের শুরুতেই ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হয়ে দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন।

ঈদ মোবারক।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন