বিজ্ঞাপন

‘আমরা রাস্তার ফকির হয়ে গেলাম ভাই’

August 15, 2019 | 5:11 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর লালবাগ এলাকায় প্লাস্টিক কারখানা চালান মো. মুজিবুল ও তার বাবা জয়নাল। বুধবার (১৪ আগস্ট) তাদের কারখানায় আগুন লেগে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৫০ লাখ টাকার পণ্য। অগ্নিকাণ্ডে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে এখন চিন্তাগ্রস্ত মো. মুজিবুল।

বিজ্ঞাপন

আগুন লাগার ঘটনা বর্ণনা করে মো. মুজিবুল বলেন, ‘পোস্তায় হাজী জয়নাল নামে প্লাস্টিক কারখাটি আমার বাবা দেখাশোনা করেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বাবা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি গেছেন। আমি বুধবার বিকেলে আমি এক কর্মচারীসহ গ্রাম থেকে এসেছি। কারখানা বন্ধই ছিল। কিন্তু রাত দশটার দিকে হঠাৎ কারখানার পাশে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটারের একটি তারে আগুন ধরে যায়। এটি দেখে আমরা দ্রুত আমাদের দোকানে থাকা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে প্রায় ৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিভায়। এরপর শুধু ধোঁয়া ছিল। আমরা ভেবেছি, আগুন নিভে গেছে। তাই হোটেলে গেছি খেতে। কিন্তু সেখানে খেতে বসছি মাত্র, তখনই লোকজনের মুখ থেকে শুনি আবারও আগুন লাগছে। একথা শুনে দৌড়িয়ে এসে দেখি আগুন জ্বলছে।’

হতাশা প্রকাশ করে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের সব শেষে। ৪০/৫০ লাখ টাকার মালামাল সব শেষ। আমরা রাস্তার ফকির হয়ে গেলাম ভাই।’

পোস্তা এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় চারটি প্লাস্টিক কারখানা এবং জুতার কারখানা ও মালামালের ‍দুটি গোডাউন পুড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোস্তফা মহসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত দশটা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার খবর পায়। দশটা ৪৭ মিনিটে মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে থাকে। কিন্তু কী কারণে আগুন লেগেছে তা এখনও জানা যাায়নি। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’

তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে ১৫ ইউনিট কাজ করেছে। কিন্তু আগুন লাগার খবরটি একটু দেরিতেই পেয়েছি বলে মনে হয়। কারণ সাত মিনিটের ব্যবধানে আগুন এতটা ভয়াবহ হয় না। আর যদি আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যেই খবর পেতাম তাহলে পাশেই লালবাগ স্টেশন ছিল। যদিও খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ছুটে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুন দুই ধাপে লেগেছে। প্রথমবার আগুন নেভানোর কিছু সময় পর একই স্থান থেকে দ্বিতীয়বার ফের আগুন লাগে। আর ততক্ষণে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে খুব অল্প সময়েই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে দেরি হয়েছে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

রোকসানা নামে সেখানকার একজন বাসিন্দা বলেন, প্রথম আগুন লাগলে সেটি আমরা সবাই মিলে পানিতে নেভায়। এরপর সবাই যে যার ঘরে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর দেখি আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। কিন্তু কীভাবে আগুন লেগেছে জানি না। প্রথমবার দুটি বিদ্যুতের খুঁটির মাঝখানের একটা তার থেকে আগুন লাগবে। দ্বিতীয়বারের টা আর দেখতে পায়নি।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ‘যদি প্রথমবার আগুন ভালোভাবে নেভানো হতো তাহলে আগুন পরেরবার এত ভয়াবহ হতো না।’

অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী রুহুল ট্রেডার্সের কর্মচারী রিফাত বলেন, ‘প্রথমবার আগুন লাগার পর উচিৎ ছিল ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া। কিন্তু খবর দেয়নি। নিজেরা নিজেরা আগুন নিভিয়েছে। আগুন লাগার অন্তত আধাঘন্টা পর ঘটনাস্থলে আসছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ওদের তো দোষ নেই, খবর না দিলে তারা আসবে কীভাবে।’

ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের খুঁটির সেখান থেকে আগুন লাগার পর প্রথমে জয়নালের গোডাউনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই গোড়াউনে প্লাস্টিকের খেলনা সামগ্রী ছিল। এরপর আগুন পাশের রুহুল ট্রেডার্স ও টিপুর জুতার কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন