বিজ্ঞাপন

বস্তিবাসীদের আশ্রয় দিয়ে ‘বিপাকে’ স্কুল কর্তৃপক্ষ

August 19, 2019 | 7:02 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের রূপনগর চলন্তিকা ও ঝিলপাড় বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঘরহারা মানুষদের আশ্রয় দিয়েছে বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে কোরবানি ঈদের পর আগামী ২০ আগস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কথা থাকলেও খুলতে পারেনি। বস্তিবাসীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে মানবিক কারণে পাঁচ দিন পিছিয়ে আগামী ২৪ আগস্ট স্কুল খোলার ঘোষণা দিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষ এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি, ২৪ তারিখেও তারা স্কুল খুলতে পারবেন কি না। এদিকে মাস দুয়েক পরই বার্ষিক, জিএসসি ও পিইসি পরীক্ষার সূচি থাকায় নির্ধারিত সময়ে স্কুল খুলতে না পারায় খানিকটা ‘বিপাকে’ই পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনের অধ্যক্ষ শাহে আলম সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে বস্তিবাসীদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এ কয়েকদিন সমস্যাও হয়নি। তবে আগামীকাল সোমবার (২০ আগস্ট) স্কুল খোলার নির্ধারিত সময় থাকলেও আজ (১৯ আগস্ট) মেয়রের পক্ষ থেকে আবারও বলা হয়েছে, বস্তিবাসীদের একটা ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত তারা স্কুলগুলোতেই থাকবে। তাই পাঁচ দিন পিছিয়ে আগামী ২৪ আগস্ট স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন- খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম রাত!

২৪ আগস্ট স্কুল খুলতে পারবেন কি না— জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘২৪ আগস্টও যদি স্কুল খোলার অনুমতি পাওয়া না যায়, তাহলে আবার সময় বাড়ানো হবে। মানবিক কারণে সবাইকে জায়গা দিয়েছি। এখন তো কাউকে বের করেও দিতে পারছি না।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ শাহে আলম বলেন, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তবে আগামী অক্টোবর মাসে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা রয়েছে। পড়াতে না পারলে শিক্ষার্থীদের তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাছাড়া নভেম্বর মাসে অন্যান্য ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষাও রয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি।

বস্তিবাসীদের জায়গা দিয়ে একই অবস্থায় রয়েছে মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের বাংলা স্কুল কর্তৃপক্ষও। আনোয়ারুল ইসলাম নামে স্কুলটির একজন সহকারী শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, আগামীকাল (২০ আগস্ট) স্কুল খোলার কথা থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা, স্থানীয় কাউন্সিলর রজ্জব আলী ও মেয়র আতিকুল ইসলামের সিদ্ধান্তে তা খোলা সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত আগামী ২৪ আগস্ট পর্যন্ত স্কুল না খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা স্কুলে নোটিশ দিয়েছি। ২৪ আগস্টও খোলা সম্ভব না হলে ওই দিন বা আগের দিন নতুন করে নোটিশ দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

স্কুল না খুললে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ক্ষতি হবে কি না— জানতে চাইলে এই সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘ক্ষতি তো হবেই। স্কুল অনেকদিন বন্ধ ছিল। এখন না খুলতে পারলে আরও ক্ষতি হবে। তাছাড়া কবে নাগাদ স্কুল খোলা সম্ভব হবে, সেটাও আমরা বলতে পারছি না। আবার স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও ক্লাস চালানোও সম্ভব না।’

আরও পড়ুন- সব পুড়ে ছাই, আশ্রয় স্কুলঘরে

আগুন লাগার রাতেই বস্তিবাসীদের জায়গা হয়েছে বস্তির দক্ষিণ প্রান্তে ৬ নম্বর সেকশনের ইসলামীয়া স্কুলে। আজম আলী নামে এই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, সহায়-সম্বলহীন লোকগুলোকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আপাতত ২০ আগস্ট স্কুল খুলছে না। ২৪ আগস্ট স্কুল খোলার কথা রয়েছে। তবে সেদিনও সম্ভব হবে কি না, জানি না। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে কি না, সেটাই এখন ভাববার বিষয়।

এদিকে, ঝিলপাড় বস্তির ২০ ঘরের মালিক সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, আগুনে সব পুড়ে গেছে। এক কাপড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে বের হয়েছি। আশ্রয় নিয়েছি বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনের চার তলায়। নতুন করে ঘর করব, সেটারও কোনো অনুমতি পাচ্ছি না। আবার না করেই বা কোথায় যাব! স্কুল কর্তৃপক্ষ আগামী ২৪ আগস্টের আগে অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। এতে আমরাও দিশেহারা অবস্থায় আছি।

বিজ্ঞাপন

এরশাদ হোসেন নামে একজন পোশাক শ্রমিক আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধনির্মিত বিজিএমইএ চিকিৎসা কেন্দ্রের মেঝেতে। তিনি বলেন, এই ভবনের শুধু ছাদ হয়েছে, তবে কোনো দেয়াল হয়নি। তাই ছোট বাচ্চা নিয়ে খুবই বিপদে আছি। আশেপাশে ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য খোঁজ করেছি, তবে পাওয়া যাচ্ছে না। দুয়েকটি ঘরের খবর পেয়েছি, তবে অনেক ভাড়া চায় মালিকরা।

এরশাদ আরও বলেন, কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হলেও দুয়েক বেলা খাবার নেওয়া হয় না। একই খাবার (খিচুড়ি) আর কত খাওয়া যায়!

আরও পড়ুন- বস্তির পুড়ে যাওয়া মালামাল যাচ্ছে ভাঙ্গারির দোকানে

আশ্রয় পাওয়া বস্তিবাসীদের কোথায় এবং কতদিন নাগাদ স্কুলগুলো থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হবে— জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর রজ্জব আলী সারাবাংলাকে বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ (সোমবার, ১৯ আগস্ট) এসেছিলেন। সবার সঙ্গে কথা বলে তিনি জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়িই বস্তিবাসীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। মেয়রও চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বস্তিবাসীদের নতুন করে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, পুড়ে যাওয়া বস্তির খালি জায়গায় এখনই ঘর করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিভাবে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব ঘর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আগে যাতায়াতের জায়গা খুবই সংকীর্ণ ছিল। এখন ঘর করার অনুমতি দেওয়া হলে রাস্তাঘাট একটু প্রশস্ত করা হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন