বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গু আতঙ্কে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম

August 20, 2019 | 1:55 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদের টানা ছুটি শেষে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) খুলেছে রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুল ও কলেজ। তবে রাজধানীর বেশিরভাগ স্কুলে ডেঙ্গু ভীতির কারণে প্রথম দিনে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল খুব কম। ফলে রাজধানীর অনেক স্কুল ও কলেজে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হয়ে যায় ছুটি পরবর্তী প্রথম দিনের ক্লাস।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উদয়ন স্কুল ও কলেজ, আজিমপুর গার্লস, ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (সিদ্ধেশ্বরী) , ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শ্রেণীকক্ষই ফাঁকা।  যে কয়েকটি শ্রেণী কক্ষে ক্লাস হচ্ছে সেখানেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেই বললেই চলে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু ভীতির কারণেই ক্লাসমুখী হচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। তবে যেসব স্কুলে পরীক্ষা চলছে সেখানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।

ভিকারুননিসা নুন স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানহা তাসনিয়া বলেন, ‘আমি ক্লাসে এসেছি কিন্তু আমার বেশিরভাগ বন্ধুরাই আজ ক্লাসে আসেনি। তারা জানিয়েছে, জ্বরের প্রকোপ কমলে এই সপ্তাহের পর ক্লাসে আসবে। আমাদের ক্লাসের বেশ কয়েকজন মেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় সবার মধ্যে  ভয়ও কাজ করছে।

আজিমপুর গার্লসের শিক্ষার্থী রাইদা আঞ্জুম বলেন, ‘আমাদের কলেজের সামনেই বড় একটি ড্রেনেজ। এখানে মশার নিরাপদ আবাস রয়েছে। ক্লাসের সময় এরা পায়ে কামড় দেয় এজন্য ভয়ে অনেকে আসেনি। আমি এসেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী দেখা করতে। একটা ক্লাস করে এখন বাসায় ফিরছি।’

বিজ্ঞাপন

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বসে থাকা অভিভাবকরাও ডেঙ্গু সমস্যা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। উদয়ন কলেজের এক অভিভাবক জানান, ছেলেকে নিয়ে বেশ শংকায় রয়েছেন তিনি। আজিমপুরের যে বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন তার চারপাশে অন্তত দশ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন গত এক মাসে। এদের একজন তার স্বামী রাশেদুল হক। এজন্য ছেলেকে নিয়ে বেশ সাবধানে আছেন তিনি।

তিনি বলেন,‘ছেলেকে ওডোমস মাখিয়ে ক্লাসে নিয়ে এসেছি। কি করবো? বেঁচে থাকতে হবে আবার শিক্ষাও গ্রহণ করতে হবে। এতো মশা আমাদের এলাকায়। ক্লাসেও মশার অত্যাচার থেকে বাঁচার কোন পথ নেই। তারচেয়ে বরং ক্লাসই করুক। অন্তত পড়াটা হবে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ বলেছেন তার প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে মশা মুক্ত রয়েছে। ঈদের সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিলে কলেজের আঙ্গিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেছেন। এজন্য কলেজটিতে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।

নেহাল আহমেদ বলেন, ‘কলেজটা আমাদের নিজের ঘরের মতোই একটা জায়গা। এই জায়গাটাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে আমরাই উপকৃত হই। যদি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচেতন ভাবে পরিস্কার রাখা যায় তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। তবে এই জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে।’

ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা বলেন, আমরা স্কুল কলেজ বন্ধের আগেই পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তা আর বাড়ার কোন আশঙ্কা আমরা দেখছি না। তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ডেঙ্গু প্রতিরোধ সেলের প্রধান পরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে আমরা পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছি। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখন পুরোপুরিভাবে ডেঙ্গু মুক্ত রয়েছে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে করপোরেশনের ড্রেনেজ রয়েছে সেখানে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করিছ।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, ঈদের আগে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন রাজধানীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। পরে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার কাজ শুরু হয়।

এদিকে,  ঢাকার অনেক স্কুল-কলেজে এখনো একই রকম মশার প্রকোপ রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক অভিভাবক। তাদের অনেকের বক্তব্য, এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য নিরাপদ স্থান শ্রেণীকক্ষ। কারণ এখানকার বেশিরভাগ কক্ষ কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। যেখানে মশা লুকিয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের কামড়াতে পারে। এছাড়া মাঠে জমা বৃষ্টি পানিতেও  বংশ বিস্তার করতে পারে।

সারাবাংলা/টিএস/জেডএফ 

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন