বিজ্ঞাপন

শ্রবণশক্তির স্থায়ী ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন শেখ হাসিনা

August 21, 2019 | 12:48 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২১ আগস্টের ভয়াল সেই গ্রেনেড হামলার দেড় দশক পূরণ হচ্ছে আজ। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে দলের সভাপতি ও ওই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল দেশের ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হামলার উদ্দেশ্য। দলের নেতাকর্মীদের তৈরি মানবঢালের কারণে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে সেই হামলায় তার একটি কানের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই স্থায়ী ক্ষত নিয়েই বেঁচে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রেনেডের বিকট শব্দে ক্ষতিগ্রস্ত একটি কানে এখনো বঙ্গবন্ধু কন্যাকে কখনো কখনো ব্যবহার করতে হয় ‘হিয়ারিং এইড’।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, শ্রবণজনিত সমস্যার কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে মাঝে মাঝেই চেকআপ করতে হয়। দেশে থাকতে যেমন নিয়মিত চিকিৎসকদের কাছে চেকআপ করান তিনি, তেমনি দেশের বাইরে গেলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হয় তাকে।

আরও পড়ুন- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: বর্বরোচিত নৃশংসতার দেড় দশক

সেদিনের সেই ভয়াবহ হামলায় নিজের শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অবশ্য তা নিয়ে কখনো মাথা ঘামাননি শেখ হাসিনা। বরং সেই হামলায় হতাহতের শিকার দলের নেতাকর্মীদের নিয়েই চিন্তিত ছিলেন তিনি। এমনকি সেই হামলার দিনও তিনি যখন বুঝতে পেরেছেন যে নিজের কানে আঘাত পেয়েছেন, তখনো তিনি চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছেন আহত নেতাকর্মীরা যেন আগে চিকিৎসা পান।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সারাবাংলাকে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমাদের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আমাদের কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই সেই ভয়াল দিনের যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তাই। সেদিনের হামলায় তার শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সেই ক্ষত নিয়েই তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ফারুক খান। যারা বেঁচে আছেন তাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও কামান করেন তিনি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য দেশবাসীসহ নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া কামনা করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী।

আরও পড়ুন- ‘২১ আগস্ট হাঁটার শক্তি কেড়ে নিয়েছে, তবু রাজনীতি ছাড়িনি’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বাংলাদেশ আওয়ামীকে শূন্য করার জন্যই এই হামলা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বাংলার মাটিতে ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা সেটা পারেনি। তবে আমাদের নেত্রী একটি কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওই হামলার কারণেই তার চোখেও সমস্যা হয়েছিল। দীর্ঘ চিকিৎসায় তার চোখের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে এখনো তিনি আঘাতপ্রাপ্ত কানের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি ফিরে পাননি। আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী যেমন শরীরে স্প্লিন্টারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন, আমাদের নেত্রীও তেমনি শ্রবণশক্তির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় ১৫ বছর আগের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালায় হত্যাকারীরা। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই সেই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও ওই সময়ে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান সেদিন। বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। তাদের কেউ কেউ এখনো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন স্প্লিন্টারের ক্ষত।

ইতিহাসের নৃশংসতম সেই হামলার ১৪ বছর পর বিচারিক আদালত ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। রায়ে হামলার সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত।

এই রায়ের ফলে ইতিহাসের কলঙ্ক কিছুটা হলেও কমেছে বলে মনে করেন লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি বলেন, এটা বিশ্বের ইতিহাসেরই একটি কলঙ্কজনক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদতেই সেই হামলা হয়েছে। বাংলাদেশকে তালেবানি, জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা ছিল তাদের। আমরা নানা ঘটনার তদন্ত করে, বিচার করে, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় এনে সেসব অপবাদ থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পেরেছি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/টিআর/কেকে

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন