অর্থমন্ত্রীর মেয়ের কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা, গ্রেফতার ২

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কণ্ঠস্বর নকল করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল সেজেছিল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের যুবক মো. শাহীন। সেই পরিচয় দিয়ে পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। ‘অর্থমন্ত্রীর মেয়ে পাঠিয়েছেন’ জানিয়ে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় তদবির করতে এসে গ্রেফতার হয়েছে শাহীন ও তার এক সহযোগী। এরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে প্রতারণার বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘জোরারগঞ্জ থানায় একজনকে গ্রেফতারের তদবির করতে এসেছিল শাহীন। অর্থমন্ত্রীর মেয়ে পাঠিয়েছে বলার পর আমাদের সন্দেহ হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। আমরা শাহীন ও তার সহযোগীকে আটক করে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করি। এরপর মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে তাদের তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’

‘সে (শাহীন) আমাদের এসপি-ওসি স্যারের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। সে মেয়েদের কণ্ঠস্বর খুব ভালো নকল করতে পারে। কণ্ঠস্বর নকল করে অর্থমন্ত্রীর মেয়ে সেজে সে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে,’— বলেন মোজাম্মেল হক।

গ্রেফতার মো. শাহীন (৩০) ও মো. হারুনের (৩৫) বাড়ি কুমিল্লার জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায়। হারুনের প্রাইভেট কারে চড়ে থানা, জেলা প্রশাসকের অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে দু’জন তদবির করত বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল জানান, ২০১৬ সালে শাহীন ‘তানিশা আক্তার’ নাম দিয়ে একটি ফেসবুক আইডি খোলেন। সেই আইডি থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী দিদারুল আলমের কাছে। দিদারুল ও তানিশার (শাহীন) মধ্যে ফেসবুকে বন্ধুত্বের একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তানিশা প্রথমে নিজেকে স্কুলশিক্ষিকা ও পরে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘মিরসরাইয়ের এসি ল্যান্ড’ পদে আছে বলে পরিচয় দেয়। দিদারুলের কিছু জমি নিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় শাহীন ওরফে তানিশা। সম্প্রতি দিদারুল দেশে ফিরে আসেন এবং শাহীনের প্রতারণার বিষয়টি অবগত হন।

‘এরপর থেকে দিদারুলকে গ্রেফতারে উঠেপড়ে লাগেন শাহীন। কণ্ঠস্বর নকল করে অর্থমন্ত্রীর মেয়ে পরিচয়ে প্রথমে এসপি ও এরপর জোরারগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করে। এসপি বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখার জন্য ওসিকে নির্দেশ দেন। এরপর শাহীন সশরীরে তদবির করতে এসে ধরা পড়ে,’— বলেন পুলিশ পরিদর্শক।

মোজাম্মেল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন জানিয়েছে, কণ্ঠস্বর নকল করে কুমিল্লার জেলা প্রশাসককে ফোন করে শাহীন বেশকিছু তদবির করেন এবং জায়গা-জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করেন। কুমিল্লা ও মিরসরাইয়ের এসি ল্যান্ডকেও সে একইভাবে কয়েকবার ফোন করেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর