বিজ্ঞাপন

‘মিন্নির জবানবন্দি প্রকাশ পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে’

September 1, 2019 | 9:41 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মিন্নির জবানবন্দি গণমাধ্যমের সামনে যে পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়েছে, তা অযাচিত ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থি বলে মত দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

আদালত বলেন,  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের কাজ প্রত্যাশিত ও কাম্য ছিল না। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেই তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, যা দুঃখজনক ও হতাশাজনক।

পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও বলেন, এছাড়া কোনো তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেফতার ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন সমীচীন নয়।

আরও পড়ুন- মিন্নির জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন

বিজ্ঞাপন

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) মিন্নির জামিন বিষয়ে প্রকাশ হওয়া লিখিত রায়ে এ মত দিয়েছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, গণমাধ্যমের সামনে গ্রেফতার হওয়া  কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সঙ্গত নয় যে তার মর্যাদা ও সম্মানহানি হয়। এছাড়া  তদন্ত চলাকালে অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের আগেই গণমাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া কোনো ব্যক্তি বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো বক্তব্য উপস্থাপনও সমীচীন নয়।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, ‘ইদানীং প্রায় লক্ষ করা যায় যে বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্তের সময় পুলিশ-র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার আগেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করেন। এছাড়া বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতি উৎসাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়ে থাকে, যা অনেক সময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অ-অনুমোদনযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

‘আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না যে তিনি প্রকৃত অপরাধী বা তার দ্বারাই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে। আমাদের আরও মনে রাখা প্রয়োজন, মামলার তদন্ত ও বিচার পর্যায়ে একজন অভিযুক্তের প্রাপ্ত আইনি অধিকার নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে,’পর্যবেক্ষণে বলেন আদালত।

মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে বরগুনার পুলিশ সুপারের (এসপি) সংবাদ সম্মেলনের ঘটনার প্রতি নির্দেশ করে আদালত রায়ে বলেন, ‘একজন আসামি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আইনের নির্ধারিত নিয়মে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার আগেই পুলিশ সুপারের এ ধরনের বক্তব্য তদন্ত সম্পর্কে জনমনে নানাবিধ প্রশ্ন ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার বক্তব্যের বিষয় যদি ধরেও নেওয়া হয় যে সত্য (মিন্নির জবানবন্দি), তাহলেও গণমাধ্যমের সামনে এ পর্যায়ে প্রকাশ ছিল অযাচিত এবং ন্যায়-নীতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থি।’

আদালত বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল অফিসারের কাছ থেকে এ ধরনের কাজ প্রত্যাশিত ও কাম্য ছিল না এবং তিনি নিজেই তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, যা দুঃখ ও হতাশাজনক। এ মামলার তদন্ত যেহেতু চলমান, সে কারণে এ বিষয়ে আদালত এই মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকছে।’ তদন্ত শেষে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল হলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে (বরগুনার এসপি) সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালার তৈরির নির্দেশনা দিয়ে আদালত বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপনের আগেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন এবং কোনো মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্ত বিষয়ে কতটুকু তথ্য গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করা সমীচীন হবে, সে সম্পর্কে একটি নীতিমালা অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ/সুরক্ষা বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের মহা পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিজ্ঞাপন

‘এসব পর্যবেক্ষণ, অভিমত ও নির্দেশনাসহ বর্তমান রুলটি নিরঙ্কুশ (যথাযথ) করা হলো। আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টিসাপেক্ষে জামিননামা সম্পাদনের শর্তে জামিন প্রদান করা হলো। আসামি কর্তৃক অন্তবর্তীকালীন জামিনের সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট আদালত আইনের নির্ধারিত নিয়মে জামিন বাতিল করতে পারবেন,’রায়ে বলেন হাইকোর্ট।

এর আগে, গত ২৯ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) মিন্নিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নিকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন আদালত। এই রায় প্রকাশের পরই জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আগামীকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) চেম্বার আদালতে আবেদনটির শুনানি হতে পারে।

আরও পড়ুন-

জামিনে খুশি মিন্নির পরিবার, হতাশ রিফাতের স্বজনেরা

মিন্নির জবানবন্দির বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট

‘রিফাত হত্যার পরও নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির ৫ বার ফোনালাপ হয়’

সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন