বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সংকটে ব্যাংককের সমর্থন চায় ঢাকা

September 2, 2019 | 11:36 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংককের সহযোগিতা চায় ঢাকা। রোহিঙ্গাদের মাঝে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ঢাকা ব্যাংককের উদ্যোগ চায়। এ ছাড়া আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট) রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে যেন চাপ চাপ দেয়, ব্যাংককের কাছ থেকে এমন উদ্যোগও আশা করে ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পরপর দুই দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ায় এই বিষয়ে সফল হতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে ঢাকা। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর গত ২৮ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সঠিক সমাধানের পথ বের করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: এনজিওদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নানামুখী তৎপরতার মধ্যে একটি হচ্ছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা। থাইল্যান্ড এখন আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছে। আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংককে ৩৫তম আসিয়ান সামিট অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা চাচ্ছে, আসন্ন সামিটে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সরব সমর্থন, যেন মিয়ানমার চাপে পড়ে এই সংকটের সমাধানে এগিয়ে আসে। এরই মধ্যে থাইল্যান্ডসহ আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রমুদউইনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে খুবই অ্যাকটিভ। গত এপ্রিলে তিনি যখন ঢাকা আসেন, তখন আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। এ ছাড়া গত জুন ও আগস্টে তার সঙ্গে জেদ্দা ও ব্যাংককে আরও দুইবার কথা হয়েছে। তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের পাশে থাকবে।’

আরও পড়ুন- তালিকায় থাকা সব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তথ্য জানত না

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ও তাদের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে অবিশ্বাসের সম্পর্ক বিরাজ করছে, সেখানে আসিয়ানের সদস্যরা আস্থার সম্পর্ক গড়তে ভূমিকা রাখতে পারে। মিয়ানমার রাখাইনে কী কী করেছে, তা যদি আসিয়ান সদস্যরা পরিদর্শন করে এবং তারা যদি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে, তবে এই সংকটের একটা ভালো সমাধান আশা করা যায়।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত জুলাইয়ে আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশ মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আব্দুল্লাহ ঢাকা সফরে এসে বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চাই। এই সংকট সমাধানের জন্য আমরা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছি। এই সংকট সমাধানে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।’

সাইফুদ্দিন বিন আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারাও ফিরে যেতে চায়। কিন্তু ফিরে গেলে যে তাদের ওপর আবার নির্যাতন হবে না, তারা এ বিষয়ে নিশ্চয়তা চায়। তাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখতে হবে, যেন তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে সবকিছু দেখে নিতে পারে। আমরা বিষয়টি মিয়ানমারকে বলেছি। পাশাপাশি এই সংকট সমাধানে আসিয়ান সদস্যদের নিয়েও কাজ করছি। আশা করছি, এই বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।’

আরও পড়ুন- ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি, এখনো আশায় বুক বেঁধে আছি’

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে জানিয়েছে যে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয়।

বিজ্ঞাপন

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন