বিজ্ঞাপন

কৃষ্ণার পায়ে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার, দ্রুত বিচার চান চালক-মালিকের

September 3, 2019 | 12:54 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা:বাংলামোটরে বাসের চাপায় গুরুতর আহত কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর পায়ে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় ব্যথায় কাতরাতে থাকা কৃষ্ণা রায় গাড়িচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তিনি গাড়ির মালিকেরও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) কৃষ্ণা রায় চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ফুটপাতের ওপরে হাঁটছিলাম। সেখানে তো গাড়ি চলার কথা না। সেখানে কেন গাড়ি আমাকে চাপা দিলো? কারণ আমাদের দেশের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা আমাদের মানুষই মনে করে না। শুধু চালকের দোষ দেবো না, গাড়ির মালিকও এর জন্য সমানভাবে দায়ী। তারা গাড়ির স্টাফদের ট্রিপ ফিক্সড করে দেয়। আর সেটা পূরণ করতে গিয়ে চালকেরা রাস্তায় যেভাবে খুশি সেভাবে চালায়।’

পঙ্গু হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর) বেডে শুয়ে তখনো কাতরাচ্ছিলেন কৃষ্ণা। তবে নিজের শরীরের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তিনি তার চেয়েও বেশি ক্ষুব্ধ সড়কে নৈরাজ্য নিয়ে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষ্ণা রায় বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, ফুট ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার বানাচ্ছেন দেশের জন্য। কিন্তু যাদের জন্য বানাচ্ছেন, তারাই যদি নিরাপদে না থাকেন, তবে এসব বানিয়ে লাভ কী? সেই বাস চালক ও মালিকেরা কি শোধরাচ্ছে? রমিজউদ্দিন স্কুলের বাচ্চা দুইটা যে মারা গেল, সেটার জন্য আন্দোলনও হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তন কোথায়? সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, দয়া করে বাস মালিকদের সঙ্গেও কথা বলুন যেন তারা রাস্তায় অন্তত প্রতিযোগিতায় নামতে মানা করে তাদের চালকদের।

বিজ্ঞাপন

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রোববার (১ সেপ্টেম্বর) কৃষ্ণা রায়ের পায়ে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাকে সুস্থ করে তুলতে আরও একাধিক অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হবে।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল গনি মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষ্ণা রায়ের পায়ে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করেছি। তার মাসলে (মাংসপেশী) পচন ধরেছিল। পায়ের ইনফেকশন থেকে কিডনি ও পেটে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা খুবই ক্রিটিকাল অবস্থা। এখান থেকে তার কিডনি ও লিভারও আক্রান্ত হতে পারে। গতকাল ১০ জন অধ্যাপককে নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তাদের পরামর্শেই দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করে কৃষ্ণা রায়ের হাঁটু ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আবদুল গনি মোল্লা আরও বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে কৃষ্ণা রায়ের সুস্থতার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবস্থার কোনো রকমের অবনতি ঘটলে যেকোনো সময় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হতে পারে। আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। ড্রেসিং করা হচ্ছে একদিন পর পর। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মানা হচ্ছে। আমাদের সবার চেষ্টাই এখন কৃষ্ণা রায়কে দ্রুত সুস্থ করে তোলা।’

আহত কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর ছেলে কৌশিক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত বিচার দাবি করছি সেই চালকের, যার জন্য আমার মাকে আজ পা হারাতে হলো। আজীবন তাকে এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে। তাই আমরা দ্রুত বিচার আশা করছি।’

গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে গেলে আহত হন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) হিসেবে কর্মরত কৃষ্ণা রায় চৌধুরী।

এই ঘটনায় বুধবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় কৃষ্ণা রায়ের স্বামী রাধেশ্যাম বাদী হয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসটির চালক-মালিক ও হেলপারকে আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন