বিজ্ঞাপন

নিভৃত ‘মাসুদ রানা’র সঙ্গে এক সন্ধ্যায়…

September 8, 2019 | 5:18 pm

প্রতীক আকবর

শুক্রবার। ছুটির দিন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা হয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি–সবখানেই মানুষ গিজগিজ করছে। সবাই আড্ডায় মুখর, কেউ কেউ প্রেমেও। এতসব কথা, আড্ডা, গান, আলো-ছায়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছেন মাসুদ রানা! রাস্তায় কখনো তার ছায়া পড়ে, মুহূর্তেই আবার মিলিয়ে যায়। এই খেলার মতো মাসুদ রানা’র মাথাতেও মুহূর্তে খেলে যাচ্ছে রাজ্যের অনেক কিছু। ভাবছেন-কীভাবে সফল হবে মিশনটি।

বিজ্ঞাপন

কিসের মিশন? মাসুদ রানা চরিত্রটি পর্দায় তুলে ধরার মিশন। হাজার মানুষের মধ্যে যিনি এসব ভাবছেন আর হাঁটছেন, তিনি ‘মাসুদ রানা: ধ্বংস পাহাড়’ উপন্যাসটি থেকে সিনেমার জন্য তৈরি করেছেন চিত্রনাট্য। নাজিম উদ দৌলা তার আসল নাম। তাকেও একপ্রকার মাসুদ রানা বলা যায়। মাসুদ রানা’র মত তিনিও নিভৃতচারী।

মাসুদ রানা চরিত্রটি তৈরিসহ সিনেমাটি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন হলিউডের অনেকেই। শেষমেস মাসুদ রানা চরিত্রটিকে প্রযুক্তি আর সম্মোহনের মায়াজালে হলিউড নিজেদের করে নেবে নাতো! নাকি চরিত্রটিকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে-সেই শঙ্কা সবার মনে। নাজিম তারই সমাধান খুঁজছেন।

হলিউডের হাত থেকে বাঁচাতে হবে মাসুদ রানা চরিত্রটিকে, ফিরিয়ে আনতে হবে বালাদেশে, তার জন্য যে যুদ্ধ, সেটি নাজিম উদ দৌলা অনেক আগে থেকেই করে আসছেন। আর এখন ভাবছেন ভবিষ্যত নিয়ে। কারণ এখনো কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন :  ধবধবে সাদা শাড়িতে ‘ভূতপরী’ জয়া


ভাবছেন-হাঁটছেন, কখনো একটু বসছেন। মূলত এসব কাজের মধ্যে নাজিম নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছেন আর উত্তর দিচ্ছেন। যুক্তি আর বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন উপায় তৈরি করে নিজেই তা ভাঙার চেষ্টা করছেন। যাচাই করছেন কাজটি কতটা শক্ত হলো। নাকি দুর্বলই রয়ে গেল।

এই ধরুন- ভয়াবহ প্রযুক্তির এই যুগে উঁচু দেয়ালে কাঁটাতার লাগিয়ে রাখাটা কী মানায়? সেই কাঁটাতার আবার বিদ্যুতায়িত। মাসুদ রানা সেই উঁচু দেওয়াল টপকাতে চাইবেন এবং বিদ্যুতায়িত কাঁটাতার স্পর্শ করার কারণে একঘণ্টা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবেন-এটা কি সময়ের সঙ্গে যায়? নাজিমের মন বলছে- যায় না। তাহলে কি এটা সময়পোযোগী করা উচিত নয়?

আবার মাসুদ রানা’র বাড়িতে দু’জন মানুষ থাকেন। একজন পুরুষ একজন নারী। পুরুষ কাজের মানুষ কিছুটা সহজ-সরল। আর নারী কাজের মানুষটি স্নেহময়ী। সময়পোযোগি করতে গিয়ে এই দুই চরিত্র বাদ দিয়ে মাসুদ রানা’র বাসায় রোবট ব্যবহার করা কি যৌক্তিক হবে?

বিজ্ঞাপন

এসব নিয়েই নিজের সঙ্গে যুক্তি-তর্ক আর প্রশ্ন-উত্তরের খেলায় নেমেছেন নাজিম উদ দৌলা। হঠাৎ করেই কিছুটা খিদে পেয়ে গেলো তার। কজের মধ্যে থাকলে নাজিমের খিদে পায় না। দোকান থেকে চা অর্ডার করে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সে ভাবছে সমাধান কিছু পেয়ে গেছে সে। এখন তা শুধু প্রয়োগের পালা।

আনমনে যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেললেন, ‘স্পাইদের জীবন খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্পাইরা তাদের জীবনে অপুর্ণতা রাখতে চায় না। এই ক্ষেত্রে অন্যান্য স্পাইদের সঙ্গে মাসুদ রানারও মিল থাকবে। তারা খুব আলিশান জীবন যাপন করবে।’

কিংবা, ‘মাসুদ রানা: ধ্বংস পাহাড়’ উপন্যাসে দেশের বাইরের কোনো বিষয় নেই। তাহলে ছবির শুটিং কেন মরিশাস ও থাইল্যান্ডে হবে? কিন্তু সমস্যা তো শুধু দেশের ভেতরেই হয়না। মাফিয়ারা বিভিন্ন দেশে তাদের ঘাটি রাখে। তাই কাজের প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাবার প্রয়োজন তো হবেই। আর স্পাইয়ের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই। তাছাড়া জেমস বন্ড যুক্তরাজ্যের স্পাই বলে কী অন্যদেশে গিয়ে মিশন করেন না?

এমন আরও অনেক যুক্তি তর্কের পরে তৈরি হয়েছে মাসুদ রানা চরিত্র এবং সিনেমার চিত্রনাট্য। মাসুদ রানা চরিত্রের বিয়ে না হলেও নিভৃত মাসুদ রানা বিবাহিত। আর তার বিয়ের আয়োজনের কিছুদিন আগে ছবিটির জন্য চিত্রনাট্য লেখার প্রস্তাব পান নাজিম। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর জমা দেন প্রথম লাইন-আপ।

বিজ্ঞাপন

এই কাজে যুক্ত হওয়ার পর উপন্যাসের মতো নাজিমের জীবনেও রহস্য-থ্রিল বেড়ে গেছে বহুগুনে। নানা অভিজ্ঞতা আর বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে চিত্রনাট্যকার হিসেবে। সেসব গল্পের অনেক কিছুই রয়ে যাবে অপ্রকাশিত। কারণ তা সবার সামনে বলার নয়। চেপে থাকতে থাকতে তা মিশে যাবে কোনো কালে।

চিত্রনাট্য তৈরির কাজ নাজিমের জন্য প্রথম হলেও থ্রিল বা মাসুদ রানা নতুন ছিল না। নাজিম নিজেও থ্রিলার লেখক। এখন পর্যন্ত তার লেখা পাঁচটি থ্রিলার বই রয়েছে বাজারে। ২০১২ সালের দিকে ব্লগে লেখার মাধ্যমে লেখালেখি শুরু।

লিখছেন ভালো কথা কিন্তু সিনেমার সঙ্গে নাজিমের যুক্ত হওয়া মা পছন্দ করেননি। তার পেছনেও রয়েছে অনেক বড় ঘটনা। নাজিমের বাবা সরদার নজরুল ইসলাম। যার হাতে লেখা হয়েছে দেশের ৫০ থেকে ৬০টি সিনেমার চিত্রনাট্য। নাজিমের বাবার এই কাজ নাজিমের পরিবারকে কিছুটা বিচলিত করেছে কোনো কোনো সময়।

বাবার একটি চিত্রনাট্য এখনো রয়েছে নাজিমের কাছে। এই চিত্রনাট্য থেকে সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন নাজিমের বাবা। কিন্তু হয়নি।

এরকম কিছু স্মৃতি আবার মনে করে কোলাহলে মিশে যেতে চাইলেন নাজিম উদ দৌলা বা নিভৃত মাসুদ রানা। আরও অনেক ভাবনা-চিন্তা তখনও তার মাথায় ঘুরছে।


আরও পড়ুন :

.   শাহরুখের অপেক্ষা শেষ হবে কবে!

.   অস্কারে প্রতিযোগিতার জন্য দেশের চলচ্চিত্র আহ্বান


সারাবাংলা/পিএ/পিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন