বিজ্ঞাপন

একমাত্র বৃষ্টিই আমাদের বাঁচাতে পারে: সাকিব

September 8, 2019 | 8:23 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম থেকে: ব্যাটে বলে পারফর্ম করলেও সংবাদ সম্মেলনে সাকিব খুব কমই আসতে চান। আর এলেও সংবাদ মাধ্যমের করা প্রশ্নের মাপা উত্তর দিয়ে চলে যান। অনীহা ঠিক বলা যাবে না, হয়তো লম্বা ম্যাচ শেষে তিনি ক্লান্তি বোধ করেন। কিন্তু চট্টগ্রামে আফগান্তিানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সাকিবকে আবিষ্কার করা গেল। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে অপ্রত্যাশিতভাবে এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। চতুর্থ দিন শেষেও এলেন! কথা বললেন মন খুলে। বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজারের ঠিক করে দেওয়া নির্ধারিত সংখ্যক প্রশ্ন শেষে কয়েক সাংবাদিক হাত তুললেও তাকে বিমুখ করেননি। বললেন, ‘বলেন দেখি কত প্রশ্ন আছে আপনাদের। আজ সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাব।’ মনের গহীন কোনো প্রশ্নের উদ্রেক হলো… এ কোন সাকিব?

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের পরিণতি কি? সেটা আঁচ করা গিয়েছিল ম্যাচের তৃতীয় দিনেই। ক্রিকেটে সদ্য ভূমিষ্ট আফগানদের বিরদ্ধে অবধারিত হারের দিকে এগিয়ে চলেছে ১৯ বছরের অভিজ্ঞ বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে এ যাবতকালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড মাত্র ২১৫। চতুর্থ দিন শেষে সেই সম্ভাবনা আরো প্রবল হলো। রশিদ খানদের দেওয়া ৩৯৮ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে ১৩৬ রান তুলতে হারিয়েছে ৬ ব্যাটসম্যানকে। এমতাবস্থায় একমাত্র বৃষ্টিই বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন টাইগার দলপতি। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) চতুর্থ দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি একথা বলেন।

কথা বলেছেন অসংখ্য বিষয় নিয়ে। ম্যাচটিতে দলের পরিকল্পনা নিয়ে বিসিবি সভাপতির করা মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন, দলের ব্যাটিং অর্ডারের রদবদল, টেস্টে ভালো করতে এনসিএল-বিসিএল কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ম্যাচটি কোন দিকে যাচ্ছে, চতুর্থ দিনে কোথায় কোথায় ভুল ছিল, একেবারে নতুন হয়ে আফগানদের বডি ল্যাংগুয়েজ কেমন ছিল? এমন নানাবিধ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বেশ হাসিখুশি মুখে।

সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: সাকিব কি খুব চাপে আছেন?
সাকিব: হ্যাঁ, অবশ্যই। যে ধরণের ম্যাচ আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত। স্বাভাবিকভাবে চাপ তো থাকবেই।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে চাপটা কী সব দিক থেকেই কমাতে চাচ্ছেন? মাঠে পারফর্ম করছেন আবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনেও আসছেন!
সাকিব: এটা টিম মেটদের ওপর থেকে চাপ কমানোর একটি প্রক্রিয়া, সেটা বলতে পারেন। মাঠের চাপ, ওটাতো থাকবেই। যতদিন ক্রিকেট খেলব ততদিন থাকবে। এটা মেনেই নিতে হবে এবং এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।

প্রশ্ন: বোর্ড সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপন) আজ ঢাকায় বলেছেন সব পরিকল্পনাই ভুল ছিল। আপনার কী মনে হয়?
সাকিব: যখন ফলাফল পক্ষে আসবে না, স্বাভাবিকভাবেই পরিকল্পনা ঠিক মতো যদি বাস্তবায়ন হতো এরকম হতো না। যেহেতু হয়নি সেহেতু এরকম হয়েছে। এভাবে বলাটা স্বাভাবিক যে পরিকল্পনা ভুল ছিল।

প্রশ্ন: আপনি বললেন যে টিম মেটদের চাপ আপনি কমাতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু টিম মেটরা তো আপনার চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মোসাদ্দেক আজকে যেভাবে আউট হলেন সেটা কতখানি হতাশার?
সাকিব: সত্যি কথা বলতে প্রথম ইনিংসে আমরা যতজন ব্যাটিং করেছি স্পিন বোলিংয়েল বিরুদ্ধে সবচাইতে কমফোর্টেবল লেগেছে মোসাদ্দেককে। যেহেতু আমরা বেশি স্পিন বোলিংই মোকাবেলা করছিলাম সেহেতু গতকাল রাত থেকেই আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছিল যে সে উপরের দিকে যদি ব্যাটিং করে, আর যেভাবে সে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করেছে ওভাবে যদি ব্যাটিং করতে পারে ভালো হবে। যেহেতু মোসাদ্দেকের বড় ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সে প্রথম শ্রেণিতে বোধ হয় চারটা কি পাঁচটা ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। আমাদের ৪শ টপকাতে এরকম কিছু প্লেয়ারদের দরকার ছিল যারা বড় ইনিংস খেলে অভ্যস্ত। সে কারণেই আসলে এই পরিকল্পনাটা। একই সাথে যেহেতু মোহাম্মদ নবী বাঁহাতির বিরুদ্ধে অনেক বেশি কার্যকর, সে কারণেই আমাদের ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন দেওয়ার একটি পরিকল্পনা ছিল। সে কারণেই মোসাদ্দেককে ব্যাটিংয়ে ওপরে পাঠানো হয়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাটিং করেছে, খুবই ভালো করেছে। এক্সিকিউট করতে পারেনি এটা ওর ব্যর্থতা। মেনেই নিতে হবে। এটা যদি সে উপরে না মেরে নিচে মারত তাহলে চারটা রানও হতো এবং সে আউটও হতো না। ওই সময় সে থাকলে হয়তো পরিস্থিতিটাও অন্যরকম হতো। প্রথম ইনিংস ও দ্বিতীয় ইনিংসে যতক্ষণ খেলেছে কখনও মনে হয়নি যে স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আউট হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: ওভারল কীসে সমস্যা? টেকনিক নাকি মানসিকতায়?
সাকিব: দুইটাই বলতে পারেন। টেকনিক্যালি সমস্যাও বলতে পারে। যেহেতু আমরা রিস্ট স্পিনার খেলি না। সেটা ডান বা বাঁহাতি দুইটাই আমাদের জন্য নতুন কিছু। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অ্যাডজাস্ট করার একটা ব্যাপার থাকবে এখানে। যদিও আমরা পরিকল্পনা করেছি বা প্রিপারেশন নিয়েছি। আমাদের যারা নেট বোলার আছে এরকম, ওদের এনে আমরা প্র্যাকটিস করেছি। যতক্ষণ না আপনি ম্যাচ খেলছেন বা সাকসেসফুল হচ্ছেন, ততক্ষণওই প্র্যাকটিসটা খুব একটা কাজে আসবে না। যখন ম্যাচে সাকসেসফুল হবেন তখন ওটা কাজে আসবে। আমি বলব না কারও অ্যাপ্রোচে সমস্যা ছিল। আমি বলব এক্সিকিউশনে অনেক সমস্যা। ওই বড় মন নিয়ে খেলার একটা প্রবলেম। আপনি এক্সিকিউট করতে না পারার একটা প্রব্লেম হচ্ছে, যখন আপনি ভয়ে ভয়ে মারতে যাবেন তখন এক্সিকিউশনে সমস্যা হবে। লিটন যখন টি-টোয়েন্টিতে খেলে তখন রিভার্স সুইপ কেন, যত শটই খেলে ওর ব্যাটে লাগে। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে ও এটা করতে পারেনি। এটা ওরও ব্যর্থতা, আমাদের দলের জন্যও ব্যর্থতা যে আমরা এরকম করতে পারছি না। কোচও এই কথাই বলেছে যে আমরা যেন মন খুলে খেলি। আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা অনেক ভয় নিয়ে খেলি, অনেক প্রেশার নিয়ে খেলি। আসলে দিন শেষে এটা ক্রিকেট ম্যাচ, অবশ্যই ইম্পর্ট্যান্ট আমাদের জন্যে। কিন্তু দুনিয়ার সব কিছুই এটা না। কিন্তু আমরা অনেক সময় এরকম ভেবে যেটা করি যে, এত বেশি প্রেশার নিয়ে ফেলি নিজেদের ওপরে পারফর্ম করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়। যখন করতে পারি না তখন প্রেশারটা আরও বেশি পড়ে।

প্রশ্ন: প্লেয়াররা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে বেশির ভাগই এনসিএল বা বিসিএল খেলে না। দেখা গেছে একটা টেস্টের ভুল ত্রুটি সংশোধন করতে হয় আরেকটা টেস্ট খেলে। এমতাবস্থায় খেলোয়াড়দের এনসিএল, বিসিএল খেলা বাধ্যতামূলক কি না? অধিনায়ক হিসেবে আপনি কী মনে করেন?
সাকিব: আমি তো চার পাঁচ বছর খেলিনি, কোনো সমস্যা হয়নি। এখন বুঝতে হবে ওদের কী সমস্যা হচ্ছে। এখন এনসিএল খেলেই সমস্যা হচ্ছে, নাকি না খেলে সমস্যা হচ্ছে। দুইটারই সমস্যা থাকতে পারে। খেলাও একটা সমস্যা হতে পারে। ওখানে গেলে এত সহজ বোলিং পেয়ে যায়, ডাবল সেঞ্চুরি করে। চার পাঁচটা ডাবল সেঞ্চুরি মারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার-পাঁচ রান করাও সমস্যা হয়ে যায়। অতএব দুইটারই সমস্যা থাকতে পারে। ওটা আপনার বুঝতে হবে কার জন্য কী সমস্যাটা। সবার জন্য এক ওষুধ কাজ হবে এটা বলা ভুল।

প্রশ্ন: তাহলে কি করতে হবে? পরিকল্পনাটা কেমন হতে হতে হবে?
সাকিব: দেখুন এরকম প্লানিং বলতে হয় অনেক বড় প্লান। সেগুলো ঠিক করার পরে এরকম কিছু করতে হবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অনেক লম্বা। যখন খারাপ করি এইগুলো নিয়ে অনেক কথা হয়। যখন ভালো রেজাল্ট করি এইগুলো (কথা) বন্ধ হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো ব্যালেন্স করা জরুরি।

প্রশ্ন: আজ ব্যাটিং অর্ডারে বেশ পরিবর্তন দেখা গেল। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তিনে খেললো, মুমিনুল হক পাঁচে, সৌম্য সরকার আট নম্বরে নামল। টেস্টে এমন ব্যাটিং অর্ডার মেন্টাল প্রস্তুতিতে বাধা নয় কি?
সাকিব: না। চারশো তাড়া করতে গেলে আপনাকে অন্য কিছু করতে হবে। আমরা তো কখনো চারশো চেজ করিনি। যদি দুইশো তাড়া করতাম আমাদের ব্যাটিং অর্ডার ওরকমই থাকত। যেহেতু চারশো তাড়া করছি আমাদের কিছু প্রস্তুতির দরকার ছিল। আমরা প্রথম ইনিংসে তো খেলেছি। একই উইকেট ছিল দুইশোই করেছি। এখানে এর থেকে আর কতইবা খারাপ হতে পারে। ভালো করার ইচ্ছাতেই পরিকল্পনাগুলো করা হয়। যখন পরিকল্পনা কাজে আসে তখন বলি ওয়াও কি পরিকল্পনাটাই না ছিল! যখন কাজে আসে না তখন মনে হয় ভুল ছিল।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন: উইকেটে আপনি ও সৌম্য আছেন। পঞ্চম দিনে কতদূর যাওয়া সম্ভব?
সাকিব: রান কত দরকার? ২৭০? দুইজনের একশো একশো করতে হবে। একশো একশো না। একজনের ১২০ আরেকজনের ১৫০ করলে মোটামুটি ঠিক আছে মনে হবে (হাসি)। দুনিয়াতে কিছুই অসম্ভব নয়। দেখা যাক না কি হয়। আরেকটা আছে বৃষ্টির হাত, ওটাও আমাদের বাঁচাতে পারে। বেশ কয়েকটা পথ আছে। এখন বাকিটা দেখা যাক।

প্রশ্ন: কার্ডিফ ফিরে আসবে নাকি?
সাকিব: কার্ডিফ ফিরতে অন্য পাশে থাকা লাগবে একজন। দুই জনেরই রান করা লাগবে। আমি যদি ১৭০ করি সৌম্যর অন্তত ১২০ তো করা লাগবে। তারপর আমরা জিততে পারব। কিংবা আমার ১৫০ আর ওর ১২০ করা লাগবে। অসম্ভব না কিন্তু অনেক কঠিন কাজটা।

প্রশ্ন: আপনারা ডান-বাম কম্বিনেশনের চিন্তা থেকে বেরুবেন কবে?
সাকিব: জিনসটা যেটা ছিল ওদের একটা পেস বোলার। আর নবী এক পাশ থেকে বল করবে। পেস বোলার হয়তো হোল্ড করবে চার-পাঁচ ওভার রান না দিয়ে, বল পুরান করার জন্য। ডান–বাম হওয়াতে একটা জিনিস ভালো যে নবী দেখেন প্রথম স্পেলে কোনো উইকেট পায়নি। প্রথম ইনিংসে কিন্তু প্রথম স্পেলে উইকেট পেয়েছিল। সাকসেসফুল এখানে হইনি কারণ যাদের বড় ইনিংস খেলার কথা ছিল তারা খেলতে পারেনি। পরিকল্পনায় খুব যে সমস্যা তা কিন্তু না। একটা প্লেয়ার যেকোনো জায়গায় ব্যাট করতে পারে। আপনি যদি চারশো চেজ করেন, সৌম্য আটে নেমেছে আমি মানলাম। তার তো দ্বিতীয় নতুন বলও খেলা লাগতে পারত, পারত না? সাদমানকেও তো দ্বিতীয় নতুন বল খেলতে হতে পারত। আপনি যদি চারশো চেজ করেন আপনাকে ব্যাট করতে হবে ১৩০ ওভার চোখ বন্ধ করে। ১৩০ ওভার ব্যাট করা চাট্টিখানি কথা না। আমাদের ওই প্লান ছিল সেকেন্ড নিউ বল যখন ওরা ফেস করবে তখন খেলা আমাদের হাতে থাকার মতো অবস্থায় থাকবে। এই কারণে আমরা অনেক প্লান করি। প্লানিং আসলে কখনো ভুল হয় না, কিংবা ঠিক হয় না। প্লানিং যখন সফল হয় তখন ওটা ঠিক, যখন সফল হয় না তখন ওটা ভুল।

আমি তো কালকে এই আলোচনাও করেছি যে দুই ডানহাতি আমি পাঠাব কিনা। আমি মোসাদ্দেককে ওপেন করতে পাঠাতে চেয়েছিলাম। সত্যি কথা, এটা আমি এখন বললাম। সবাই মিলে এই আলোচনার পরে এই প্লান করা হয়েছে যে এভাবে যাই তাহলে আমাদের কাছে একটা সুযোগ আছে। সকাল বেলা টিম মিটিংয়ে ওটা সেট করে আমরা মাঠে এসেছি। ওই বিশ্বাসটা সবার ছিল। এমন না আমি বিশ্বাস করেছি বা কোচ বিশ্বাস করেছে। পুরো পনেরো জন এই বিশ্বাস করেছে। শুধু আমার সিদ্ধান্ত হলে মোসাদ্দেক আর লিটন ওপেন করত। যেহেতু আমার সিদ্ধান্ত পুরো ছিল না সেহেতু সাদমান গিয়েছে। সাদমান খুব ভালো ব্যাট করেছে। সে যদি বড় ইনিংস খেলতে পারত ওইখানে আমাদের একটা জুটি হওয়ার চান্স থাকত।

আরেকটি জিনিস নবী যখন আবার বোলিংয়ে এসেছে আমরা তখন দুজন বাঁহাতি, তখন কিন্তু সাদমানের উইকেট নিয়ে নিয়েছে। আমরা ওই প্লান করেছি যে ওই প্রভাবটা তার না থাকে। তাহলে তো একটা দিক থেকে আমরা বাঁচতাম।

প্রশ্ন: ৩৯৮ চেজ করা সম্ভব মনে হয়েছিল নামার আগে?
সাকিব: ৩৩০ রান পর্যন্ত মনে হয়েছিল সম্ভব। কারণ উইকেটটা এখনো খারাপ হয়নি। যথেষ্ট ভালো আছে। রিষ্ট স্পিনাররা ওদের বাড়তি সুবিধা পাবেই সেটা যেকোন ফ্লাট উইকেটেই পায় চার নম্বর বা পাঁচ নম্বর দিনে। কিন্তু উইকেটটা আনপ্লেয়েবল না। আমার মনে হয় আমরা বেটার এপ্লিকেশন কিংবা বড় মন নিয়ে যদি খেলতে পারতাম আরও বেটার কিছু করা সম্ভব হত। আমি যেমন শুরুতে বলেছিলাম ব্যাটসম্যানরা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। উইকেট হয়তো আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমন পাইনি। তার মানে এই না যে আমরা ভেঙে পড়ব। এখানে আমাদের কোয়ালিটি শো করার জায়গা ছিল যেটা আমরা খুব ভালোভাবে ফেল করেছি।

প্রশ্ন: আপনার টিম মেটদের মধ্যে সামর্থ্যের অভাব ছিল?
সাকিব: সামর্থ্য সবার ভেতরেই আছে। আমাদের দলে যতো প্লেয়ার খেলছে, একমাত্র সাদমান বাদে এমন কেউ নাই যে বড় ইনিংস খেলে নাই বা দলকে জেতানোর পেছনে বড় ভূমিকা ছিলো না কখনও। তারা যেহেতু পারে, তার মানে সামর্থ্য অবশ্যই আছে। একটা বিষয় হলো আপনার ট্যালেন্ট আছে এবং সেটা মাঠেও প্রদর্শন করা। আরেকটা হলো ট্যালেন্ট আছে কিন্তু সেটা কখনও দেখাতে না পারা। এটা খুবই সূক্ষ্ম একটা পার্থক্য। কিন্তু এটাই আপনার বড় খেলোয়াড় ও ছোট খেলোয়াড়দের আলাদা করে দেয়।

প্রশ্ন: আফগানিস্তানের অভারঅল পরিকল্পনা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনার কাছে কেমন লেগেছে?
সাকিব: ভালো! কিন্তু আমরা তো ওদের সেই পজিশনে আনতেই পারিনি যখন ক্যারেক্টার শো করা দরকার। যদি আনতে পারতাম, তখন আসলে বোঝা যেত যে ওদের কত ক্যারেক্টার আছে। যেহেতু ঐ পজিশনেই আনতে পারিনি, তাহলে ওদের ক্যারেক্টার কী দেখব! আমরা যদি আজকে ২ উইকেটে ২০০ রান করতে পারতাম, তখন ওদের ক্যারেক্টার, ডিটারমিনেশন আরও সব দেখতাম। যেহেতু আনতেই পারিনি, এখন এ প্রশ্নের উত্তর কী দেব?

প্রশ্ন: এমন ম্যাচ পার্ট অব গেম নাকি ক্রিকেটের জন্য ধাক্কা?
সাকিব: ভালো একটাই জিনিস যে, ম্যাচটা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্যে পড়বে না। আমাদের ক্রিকেটের জন্য, আমাদের জন্য হতাশাজনক অবশ্যই যে নতুন একটা দলের কাছে আমরা হেরে গেলাম। তবে নতুন দল মানেই যে তারা জিততে পারবে না, এমনটাও ঠিক না। তাহলে ইংল্যান্ড ২০০ বছর ধরে খেলে, আমরা ১৫-২০ বছর ধরে খেলে তাদের বিপক্ষে জিতেছি। তখন তাদের কেমন লাগার কথা? তাই বিষয়টা এমন না। অবশ্যই তাদের (আফগানিস্তান) সম্মান দিতে হবে। তারা ভালো খেলেই এমন একটা পজিশনে এসেছে যেখান থেকে তারা জিততে পারে। আমি যেটা বললাম, হয়তো আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারতাম। তখন ওদের একটা চ্যালেঞ্জের মুখে আনতে পারতাম, টেস্ট ক্রিকেটের যে পরীক্ষা সেটা আমরা নিতে পারিনি। এটা অবশ্যই হতাশার।

প্রশ্ন: ম্যাচের ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে?
সাকিব: আমরা এই ম্যাচ হারের খুব কাছাকাছি। একমাত্র বৃষ্টি আছে আমাদের বাঁচাতে পারে। এখানেও আসলে একটা চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। আমরা যে ৪ জন বাকি আছি, তারা যদি কিছু একটা করে দেখাতে পারি। বা কিছু করতে না পারলেও, লড়াই করার যে মানসিকতা, আমরা যে এতোদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছি, এটলিস্ট ঘরের মাঠে ভালো কিছু করেছি, তার যে একটা প্রমাণ অন্তত আমরা রেখে যেতে পারি। হয়তো হারতে পারি, তবে ঐ যে লড়াই করার যে একটা ছাপ, সেটা যেন আমরা দেখাতে পারি।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন