বিজ্ঞাপন

দুপুরের খাবার আর টাকায় মেলে মানববন্ধনের জনবল

September 10, 2019 | 2:54 pm

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সপ্তাহজুড়েই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিভিন্ন দল ছাড়াও নামি-বেনামি বিভিন্ন দল-সংগঠনের এসব মানবন্ধনের কোনো কোনোটিতে উপস্থিত জনবলের সংখ্যা থাকে হাতেগোনা। অভিযোগ আছে, প্রেস ক্লাবের আশপাশেই থাকেন একদল মানুষ, দুপুরের খাবার আর ‘অল্প কিছু’ টাকা দিলেই তারা কোনো সংগঠনের ব্যানারে দাঁড়িয়ে যান মানববন্ধনে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কুয়েত ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক’ নামের এক সংগঠনের মানববন্ধন নিয়েও উঠেছে একই অভিযোগ। এই মানববন্ধনে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। প্রেস ক্লাবের সামনে দায়িত্ব পালন করা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরাও মানববন্ধনের জন্য লোক ভাড়া করার এই চর্চার কথা স্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেখা যায়, ‘কুয়েত ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক সংগঠনে’র ব্যানারে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. ফরিদ হোসেন ও তৌহিদুল ইসলাম নামে দুই কর্মকর্তার অত্যাচার থেকে বাঁচতে তাদের বিচারের দাবি তোলা হয় মানববন্ধন থেকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গেলে মানববন্ধনে উপস্থিত কেউই তেমন কিছু বলতে পারেননি। বিষয়টি এ প্রতিবেদকসহ উপস্থিত সাংবাদিকদের সন্দেহ হলে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কয়েকজন স্বীকার করেন, স্রেফ টাকার বিনিময়ে তারা ‘ভাড়া খাটছেন’।  কুয়েতের ঘটনার বিন্দু-বিসর্গও তারা জানেন না তারা। সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের কাছে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অনেকেই স্বীকার করেন, তারা দুপুরের খাবার আর টাকার বিনিময়ে এখানে এসেছেন। তাদের কেউ কোনোদিন কুয়েতে যাননি।

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া দিনমজুর নূর আলম সারাবাংলাকে বলেন, তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। যেদিন কাজ থাকে না, সেদিন প্রেস ক্লাবে চলে আসেন। কোনো না কোনো সংগঠনের পক্ষে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে যান টাকা আর দুপুরের খাবারের বিনিময়ে। তিনি বলেন, ‘আজকে ছুটি ছিল। তাই এখানে দুইশ টাকার বিনিময়ে চলে আসছি।’

নূর আলম জানান, তাদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মানববন্ধনের জন্য যত মানুষ দরকার, তারা ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। টাকা দিতে হবে সময় অনুযায়ী। যদি একঘণ্টার মানবন্ধন হয়, তাহলে এক থেকে দেড়শ টাকা করে দিতে হবে জনপ্রতি। আর তিন-চার ঘণ্টার মানববন্ধন হয়, তাহলে সকালের নাস্তাসহ আড়াই থেকে তিনশ টাকা করে গুণতে হবে একেকজনের জন্য। নূর আলম বলেন, ‘আমার জানামতে এখানে (কুয়েত প্রবাসীদের মানববন্ধন) যারা অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে আমাদেরও ৫০/৬০ জন আছে।’

আশিকুর রহমান মাহবুব নামের আরেকজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পল্টনের আশপাশেই থাকি। কাজ না থাকলে টাকার বিনিময়ে মানববন্ধন, মিছিলে অংশগ্রহণ করি। আমাদের যেকোনো সময় কল দিলেও পাওয়া যাবে। তবে টাকা আগে পরিশোধ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

নাম না প্রকাশের শর্তে এক রিকশাচালক বলেন, ‘একশ টাকার বিনিময়ে এখানে আসছি। সবসময় আসি না, মাঝে মধ্যে এখানে আসি। আপনারা তো সবই জানেন।’

এদিকে, কুয়েতের ঘটনা নিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনের আয়োজকরাও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। মানববন্ধনে উপস্থিত নাসির ও কবীর নামে দু’জন নিজেদের পাসপোর্ট দেখিয়ে কুয়েত ফেরত বলে দাবি করেন। বাকিদের কারও কাছে পাসপোর্টও ছিল না। নাসির আর কবিরও কোনো তথ্য জানানো পারেননি।

সারাবাংলার প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে আয়োজক নাসির স্বীকার করে বলেন, ‘এখানে তিন-চার জন কুয়েত ফেরত আছেন, বাকিরা আশপাশে আছেন।’ যারা মানববন্ধন দাঁড়িয়ে আছে, তারা কারা— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি অন্যদিকে চলে যান।

কুয়েত ফেরত অভিযোগকারীদের একজন কবীর সারাবাংলাকে বলেন, কুয়েতে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও তাদের সঙ্গে অত্যাচার বা হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। সরকারের কাছে এই তথ্য দিলে যদি সরকার তাদের সরিয়ে দেয়, তাহলে অনেক মানুষ বেঁচে যাবেন। এজন্যই মানববন্ধন করা হচ্ছে। তবে মানববন্ধনের সভাপতি কে, জানতে চাইলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান।

বিজ্ঞাপন

প্রেস ক্লাব এলাকায় দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রেস ক্লাবের সামনে অনেক মানববন্ধনেই এমন অনেকেই আছে, যারা নিয়মিতই সব মানববন্ধনে অংশ নেয়। তাদের অনেককেই বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ সব দল-সংগঠনের অনুষ্ঠানেই অংশ নিতে দেখা যায়।

সারাবাংলা/এআই/জেএএম/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন