বিজ্ঞাপন

তদারকি সক্ষমতা প্রকল্পে তৃতীয় সংশোধনী, বাড়ছে মেয়াদও

September 13, 2019 | 7:59 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে সক্ষমতার প্রকল্পে তৃতীয়বারের মতো সংশোধনী আসছে। ‘স্ট্রেংদেনিং মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ক্যাপাবিলিটিজ অব আইএমইডি (এসএমইসিআই)’ শীর্ষক এই প্রকল্পের এবারের সংশোধনীতে শুধু ব্যয়ই নয়, বাড়ছে মেয়াদও। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এই প্রকল্পের সংশোধনীতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে একবছর, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে কোনো ব্যয় বাড়ানো হয়নি প্রকল্পটির। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় কমিয়ে ধরা হয় ৬৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। কিন্তু তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজুল্লা সারাবাংলাকে বলেন, যেকোনো প্রকল্পে তৃতীয়বার সংশোধনীর পক্ষে আমি নই। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কখনো কখনো এটা করতে হয়। তবে সার্বিকভাবে তৃতীয়বার সংশোধনীকে নিরুসাহিত করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন,  প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। এটি বাস্তবায়ন করছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত (এডিপি) প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন আইএমইডির অন্যতম কাজ। কোনো কারণে এডিপির আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় আইএমইডির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম যেমন সুবিস্তৃত হয়, তেমনি বিভাগটির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হয় জাতীয় সংসদ, একনেক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কমিটি, তথ্য সরবরাহ, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রশাসনিক সংস্কার, নারী উন্নয়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করা সংক্রান্ত কার্যক্রম।

ক্রমবর্ধিত কর্ম পরিসরের প্রেক্ষাপটে বিভাগটির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। ৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় এই প্রকল্পের। পরে মোট ৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর অনুমোদন দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। পরে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনীও পাস করা হয়। বাস্তব প্রয়োজনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে একটি মিরর ই-পিএমআইএস ডাটা সেন্টার স্থাপন কাজ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের চলতি বছরের একবছর বাড়ানোসহ ৬৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন।

প্রকল্পের আওতায় ই-প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ই-পিএমআইএস) প্রণয়ন করে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির তথ্য ই-পিএমআইএসে অন্তর্ভুক্তির জন্য ১৯০০ জন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ই-পিএমআইএস ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও মন্ত্রণালয় বিভাগগুলোর আওতায় চলতি অর্থবছরে এডিপিভুক্ত প্রায় এক হাজার ৫৬৪টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৬১৩টি প্রকল্পের হালনাগাদ তথ্য ই-পিএমআইএসে এন্ট্রি হয়েছে। অবশিষ্ট প্রকল্পগুলো ই-পিএমআইএসের আওতায় আনার জন্য প্রকল্প থেকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিম ই-পিএমআইএসে প্রকল্প এন্ট্রির বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ সংস্থাকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এডিপিভুক্ত শতভাগ প্রকল্পকে ই-পিএমআইএসে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনে প্রায় এক হাজার জন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ই-পিএমআইএস ব্যবহারের ওপর নতুনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া, ই-পিএমআইএসে তথ্য এন্ট্রির বিষয়ে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া ইত্যাদির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুনে নির্ধারণ এবং প্রকল্পের কিছু অংশের জন্য ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এডিপিভুক্ত সব প্রকল্পকে ই-পিএমআইএসের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া এক হাজার জন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ই-পিএমআইএস বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রকল্পগুলোকে সার্বক্ষণিক (২৪/৭) ই-পিএমআইএস টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া, মনিটরিং ও ইভালুয়েশন পলিসি চূড়ান্তকরণ এবং সেক্টর সংশ্লিষ্ট ছয়টি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ম্যানুয়েল গাইডলাইনের ওপর বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ই-পিএমআইএস তৈরি করা ও ডাটা স্টোর স্থাপন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পলিসি ও ছয়টি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ম্যানুয়েল প্রণয়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিষয়ে এ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের প্রায় ২৯৩ জন কর্মকর্তার স্বল্প মেয়াদে স্থানীয় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণ, স্থানীয় পর্যায়ে ৩০ জন কর্মকর্তা ও দেশের বাইরে ছয় জন কর্মকর্তার প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সে অংশগ্রহণ, দাফতরিক কাজে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্ক্যানার, আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় ও পরিবীক্ষণ কাজে গতিশীলতা আনার জন্য ছয়টি জিপ কেনা হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রতিটি প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতির তথ্য অনলাইনে সংগ্রহ এবং সেজন্য প্রকল্পভিত্তিক রিপোর্ট দেওয়া যাবে। এছাড়া যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে আইএইডির জনবলের দক্ষতা বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/টিআর/জেএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন