বিজ্ঞাপন

বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি: টাকার গতিপথ খুঁজে পাচ্ছে না দুদক

September 16, 2019 | 12:45 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৫৬ মামলার চার বছর পূর্ণ হবে এ মাসেই। কিন্তু এই চার বছরেও কোনো মামলার তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এখন তদন্ত আটকে আছে টাকার গতিপথ নির্ধারণে। টাকাটা সর্বশেষ কার কাছে গিয়েছে— সেটাই এখনো খুঁজে পাচ্ছে না দুদক। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই মামলাগুলোর তদন্ত আদৌ শেষ হবে কি?

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে টাকার সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি, অর্থাৎ কোন অ্যাকাউন্টে, কার কাছে গেছে— সেটা খুঁজে পেতে সময় লাগছে। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকাটা কার কাছে গিয়েছে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হয়। আর এই জায়গাতেই তদন্ত আটকে আছে। এটা খুঁজে বের করতে সময় লাগছে। তবে এরই মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি রিকভারি হয়েছে।’

দুদক সূত্রে জানা যায়, বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রয়েছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন ঋণ নেওয়া ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠানের। তবে কোনো মামলায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করেনি দুদক।

এদিকে, ব্যাংকটির তৎকালীন পর্ষদের ১৩ জন সদস্যের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে শুধু কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেই দায় সেরেছে দুদক। এমনকি তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আইনি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি। বাচ্চুকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৬ ডিসেম্বর। পরে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি বাচ্চুকে তৃতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

বিজ্ঞাপন

এর আগে পর্ষদের অন্য সদস্যদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তারা হলেন— সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, সাবেক বাণিজ্য সচিব (সাবেক পর্ষদ সদস্য) শুভাশীষ বোস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক নিলুফার আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন্নাহার আহমেদ, প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন, ফখরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীর আকন্দ সেলিম, একেএম কামরুল ইসলাম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম (এফসিএমএ), আনিস আহমেদ এবং একেএম রেজাউর রহমান।

তবে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বাচ্চু জানান, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় তিনি কিছুই জানেন না। পর্ষদই সবকিছু জানে। বোর্ডে যেসব ঋণ প্রস্তাব আসত, তা সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলামের মাধ্যমেই উপস্থাপন করা হতো। ফলে তিনি তাকে বিশ্বাস করে ভুল করেছেন, যা তিনি পরে বুঝতে পারেন।

এদিকে বেসিক ব্যাংকের তদন্তের ধীরগতির বিষয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাচ্চুসহ তৎকালীন পর্ষদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে তদন্ত ও আদালতে চার্জশিট দেওয়ার জন্য দুদকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্ত শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে দুদক আইনে সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিলের নিয়ম থাকলেও প্রায় চার বছরেও তা দিতে পারেনি দুদক। এ নিয়ে হাইকোর্ট গত বছর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের ডেকেও ক্ষোভ জানান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মামলা হওয়ার প্রায় চার বছরেও মূলহোতারাও রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আলোচিত এই ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগপত্র কবে দেওয়া হবে, সে বিষয়েও কিছু বলছে না দুদক। এমন অবস্থায় বেসিক ব্যাংকের তদন্ত নিয়ে দুদকের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

সারাবাংলাকে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদকের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখানে দুর্নীতির তথ্য উপাত্তের পাশাপাশি দুদকের দক্ষতারও ঘাটতি রয়েছে। এমনকি দুদকের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা দুদকের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে আমাদের দেশে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত দুদক তাদের পক্ষ নিচ্ছে কিনা সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদেও এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। দুদক সত্যিকার অর্থে এখানে কতখানি নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে পারছে, সেটাই দেখার বিষয়। এই বিষয়টি নিয়ে দুদকের ওপর মানুষের আস্থা ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সর্বোপরি বেসিক ব্যাংকের তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যার দায় দুদক এড়াতে পারে না।’

দুদক আইনে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। এতে দুদক আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে কি না— জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এগুলো নির্দশনামূলক, কিন্তু বাধ্যতামূলক না। এমনকি তদন্ত কতদিনের মধ্যে শেষ করতে হবে, এরকম কোনো সময়সীমাও নেই।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন