বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের এনআইডি ‘প্রাপ্তিতে’ ইসির কেউ জড়িত নয়, দাবি কমিশনারের

September 16, 2019 | 2:46 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভোটার করা বা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আছে বলে মনে করেন না নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। তবে সুর্নিদিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর লাভ লেইনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হতে না পারে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র না পায়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন সতর্ক আছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন রোহিঙ্গার কাছে কার্ড (স্মার্টকার্ড) পাওয়া গিয়েছিল। ওটা ছিল ২০১৫ সালের কার্ড। এরপর ৪৬ জন রোহিঙ্গার তথ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। অবশ্য তারা কোনো কার্ড পায়নি। আমরা তাদের আলাদা করে ফেলেছি। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সম্প্রতি যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে তাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা হয়েছে জানিয়ে কবিতা খানম বলেন, ‘তাদের বায়োমেট্রিক নেওয়া আছে। আমরা প্রথমে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করি। তারপর তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এনআইডি দেওয়ার আগে আমরা যখন বায়োমেট্রিক নেব, তখন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্যের সঙ্গে তা যাচাই করব। রোহিঙ্গা কাউকে পাওয়া গেলে তাদের আলাদা করে ফেলব। এভাবেই আমাদের সিস্টেমটা আমরা তৈরি করেছি। রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার তালিকায় আসতে না পারে বা তারা যাতে এনআইডি না পায় সেজন্য আমরা সতর্ক আছি।’

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাওয়া বা ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার ঘটনায় আরও অনেকের দায় আছে উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘জন্ম নিবন্ধনসহ সব ডকুমেন্ট তৈরি করে আমাদের কাছে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন থেকে আমরা সেগুলো ভেরিফাই করব। কিন্তু যারা সেগুলো দিচ্ছে বা যাদের মাধ্যমে পাচ্ছে এবং যারা রোহিঙ্গাদের আত্মীয় পরিচয় দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই কোন ডকুমেন্টস না পায়। কারণ এসব ডকুমেন্টসের মাধ্যমেই কিন্তু তারা ভোটার তালিকায় আসছে বা এনআইডি পাচ্ছে।’

কবিতা খানম বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে, নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী রোহিঙ্গাদের ভোটার করছে বা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহযোগিতা করছে। তারপরও আমরা বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করছি। আমাদের একটা টিম আবার এখানে আসবে। অভিযোগ যদি আসে, আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। নির্বাচন কমিশন অবশ্যই নিজের মতো করে তদন্ত করবে। তথ্যপ্রমাণ থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

পাসপোর্ট করতে গিয়ে যারা ধরা পড়ছে বা যারা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বের করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও এনআইডি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, ‘দুদকের বিষয়টা আসলে এখনও আমাদের নোটিশে নেই। আমি শুনেছি যে গতকাল (রোববার) একটা টিম তদন্ত করতে এসেছিল। দুদকের মাধ্যমে কোনো কিছু প্রমাণ হলে নির্বাচন কমিশনও সেটা নিজস্বভাবে তদন্ত করে দেখবে।’

রোহিঙ্গারা কিভাবে এনআইডি-পাসপোর্ট পাচ্ছে, অনুসন্ধানে দুদক

চট্টগ্রামের কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারী রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়ার ক্ষেত্রে জড়িত থাকার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ বা তথ্য-প্রমাণ আছে বলে আমার জানা নেই।’

উল্লেখ্য, লাকী নামের এক নারী গত ১৮ আগস্ট স্মার্টকার্ড তুলতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গেলে তার হাতের পুরনো এনআইডিতে ১৭ ডিজিটের নম্বর দেখে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জেরার মুখে লাকী নিজের প্রকৃত নাম রমজান বিবি এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পর টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিলেন বলে স্বীকার করেন। ওই রোহিঙ্গা নারী ভুয়া ঠিকানা দিয়ে তৈরি করিয়েছেন ওই জাল এনআইডি। অথচ ওই ভুয়া পরিচয়পত্রের তথ্যও নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে।

বিজ্ঞাপন

এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে দুর্ধর্ষ ডাকাত নূর মোহাম্মদ। এই রোহিঙ্গা ডাকাতেরও স্মার্টকার্ড ছিল। তার ঠিকানা উল্লেখ আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে।

লাকী আক্তারের বিষয়টি শনাক্তের পরই চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস তদন্ত করে ৪৬ জন ভূয়া রোহিঙ্গা নাগরিককে শনাক্ত করে, যারা বাংলাদেশি এনআইডি পেয়েছে এবং তাদরে তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে আছে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি টিমও এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

এর প্রেক্ষিতেই রোববার চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধানে যায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক কর্মকর্তা রতন কুমার দাশ জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কার্যালয় থেকে হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট ল্যাপটপ ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা এনআইডি পাচ্ছে বলে সন্দেহের কথা দুদককে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে দুদক অনুসন্ধানে নির্বাচন অফিসের কোনো ল্যাপটপ হারিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো সাধারণ ডায়েরি পায়নি।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন