বিজ্ঞাপন

এভাবে কেউ কাউকে মারতে পারে!

September 16, 2019 | 6:40 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাভারের আমিনবাজারের শিবপুরে চাঞ্চল্যকর হাসি আক্তার হত্যা মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে সোহেল জানিয়েছে, অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে হাসিকে হত্যা করা হয়। সেই বর্ণনা শুনে হাসির বাবা মা সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বামী হয়ে স্ত্রীকে এভাবে কেউ মারতে পারে, তা বিশ্বাসই হচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে হাসির বাবা আবুল হোসেন এবং মা আমেনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

হাসির মা আমেনা বেগম, গত ১ মে সকালে সোয়া ৮টার দিকে হাসি ফোন করে বলে, ‘আম্মু, তুমি আব্বুকে একটু আমার কাছে পাঠাও। তাড়াতাড়ি পাঠাও, সোহেল এসেছে, আমাকে নাকি মেরে ফেলবে।’

এর কিছুক্ষণ পর আবার তাকে ফোন করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর আধাঘণ্টা পরই নাহিদ নামে সোহেলের এক বন্ধু ফোন করে জানায়, হাসি অজ্ঞান হয়ে গেছে, তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

হাসির মা আমেনা বলেন, ‘নাহিদের কথা মতো আমরা হাসপাতালে গিয়ে হাসিকে পাইনি। সেখান থেকে তাকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পাই হাসি অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে।’

হাসির বাবা আবুল হোসেন বলেন, আমি শিশু হাসপাতালে চাকরি করি। সেখান থেকে নিউরো সায়েন্সে গিয়ে দেখি, হাসির ডান চোখের মনি গলে গেছে, মাথায় বড় ধরনের আঘাত, নাকের নিচে ঠোট আর মুখ ফুলে কালচে হয়ে গেছে, কানের নিচেও কালো দাগ, গলায় চেপে ধরার দাগ স্পষ্ট। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন দেখেছি। গত ৭ মে বিকেল পৌঁনে চারটায় হাসি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে হাসি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।’

আবুল হোসেনের অভিযোগ, ঘটনার দিন থেকেই সোহেল রানা পলাতক ছিলেন। এ ঘটনার পর সাভার থানায় একাধিকবার যোগাযোগ করেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। এমনকি হাসি মারা যাওয়ার পর মামলা করতে গেলে সকার নাম বাদ দিয়ে শুধু সোহেলের নামে মামলা নেয়। মামলার পর আসামি ধরতে পুলিশ কোনো তৎপরতা দেখায়নি বলে জানান হাসির বাবা আবুল হোসেন। উল্টো গত চার মাস ধরে আসামি সোহেল রানা হাসির পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে আসছে এবং মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। এসব ঘটনা র‌্যাবের কাছে অভিযোগ আকারে জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

সোহেল রানা গ্রেফতার হয়েছে। এ খবর জানামাত্রই র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ছুটে আসেন আবুল হোসেন ও আমেনা।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পার্কে হাসির সঙ্গে সোহেলের পরিচয় হয়। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে উভয়ের মধ্যে। একপর্যায়ে হাসিকে বিয়ে করতে চাইলে পরিবারের মধ্যস্থতায় গত নভেম্বর মাসে উভয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর হাসি সোহেলের মিরপুর মাজার রোডের বাসায় ওঠে। বিয়ের দুই মাসের মাথায় সোহেলকে আলাদা বাসা নিতে বললে সোহেল রাজি হয়নি। একে অপরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখায় উভয়ের মধ্যে মৌখিকভাবে ছাড়াছাড়ি হয়। তখন থেকেই দু্জনে আলাদা থাকতে শুরু করেন।

র‌্যাবের সিও বলেন, আমিন বাজারের শিবপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত হাসি। আর স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকরি করত। পরিবারের অজান্তেই সোহেল আর হাসির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সোহেল মাঝে মধ্যেই হাসির বাসায় যেত। গত এপ্রিলের দিকে হাসির কাছে টাকা চেয়ে বসে সোহেল। টাকা দিলে ব্যবসা করবে আর তাকে আবার ঘরে তুলে নেবে। এ কথায় হাসি কখনও সায় দিত না।

র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গত ১ মে হাসির ঘরে যায় সোহেল। প্রথমে টাকা চেয়ে বসে। হাসি দিতে রাজি না হলে এলোপাথারিভাবে চড়, থাপ্পর, কিল-ঘুসি মারতে থাকে। হাসি চোখে ও মাথার এক পাশে আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এরপর সোহেল হাসির চুল ধরে ফ্লোরে টাইলসের সঙ্গে আঘাত করতে থাকে। সবশেষে খাটের নিচে থাকা ইট দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। আরও একবার আঘাত করলে হাসির মাথা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। তখন হাসির ড্রয়ার ভেঙে তিন ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এরপর বাড়ির মালিক বুঝতে পেরে হাসিকে উদ্ধার করে সোহেলের বন্ধু নাহিদকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাবের সিও বলেন, চার মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামি সোহেল রানা কুমিল্লায় অবস্থান করছে। অবশেষে গতকাল রাতে কুমিল্লার ধর্মসাগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোহেল দাড়ি রেখে চার মাস ধরে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে বেড়ায়। হাসিকে হত্যা এবং স্বর্ণ-টাকা লুটের কথা স্বীকার করেছে সোহেল।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন