বিজ্ঞাপন

গবেষণার জন্য শিক্ষককে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না চবি!

September 17, 2019 | 3:51 pm

চট্টগ্রাম ব্যুরো: তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় কারাগারে গিয়ে আলোচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে বিদেশে গবেষণার জন্য শিক্ষা ছুটি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, উচ্চ আদালত থেকে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ছয়মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়ে বিদেশযাত্রায় কোনো বাধা নেই বলে আদেশ এসেছে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে তার বিদেশযাত্রা আটকে রেখেছে।

মাইদুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ইউরোপের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গবেষক হিসেবে এক বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।

মাইদুল সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিতের পর রায়ের কপিসহ বিভাগে ছুটির জন্য গত ৪ সেপ্টেম্বর আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি সভা করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। কিন্তু মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তিনি কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

পদাধিকারবলে প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি পারভিন সুলতানা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষক মাইদুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা আছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশযাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু উনি একটি চিঠি দিয়েছেন যে, সেই নিষেধাজ্ঞা উচ্চ আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আসলেই প্রত্যাহার করা হয়েছে কি না সেটি যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। সেই কাগজপত্র আমি রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে প্ল্যানিং কমিটিতে পাঠালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি থেকে কোনো চিঠি এখনও আমার টেবিলে আসেনি। আর এটি রেজিস্ট্রার অফিসের কাজ নয়। এ সিদ্ধান্ত প্ল্যানিং কমিটি নিয়ে আমাদের জানাবে।’

শিক্ষক মাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নেদারল্যান্ডসের লাইডেন ইউনিভার্সিটিতে সেশন শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় তিনি যেতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

‘আমি মনে করি, আমাকে হয়রানি করার মধ্য দিয়ে বিভাগের চেয়ারপারসন বা বিভাগ আমার উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ন্যায্য অধিকারকে রদ করছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও সংবিধানসম্মত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী।’ বলেন মাইদুল ইসলাম

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. শিরীন আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি পুরো বিষয়টি জানি না। তবে শিক্ষক মাইদুল সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে জানি। আমি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইব, ওই মামলার কারণে বিদেশ গমনের জন্য ছুটি দিতে কোনো জটিলতা আছে কি না? যদি জটিলতা না থাকে, তাহলে ছুটি যেন দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় বিরুদ্ধে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সে সময়ের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম। মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন মাইদুল।

বিজ্ঞাপন

ওই জামিনের মেয়াদ শেষে ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মাইদুল চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়ার পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৩৭ দিন কারাভোগের পর মাইদুল জামিনে মুক্তি পান।

চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ৫৭ ধারায় এই মামলা চলতে পারে না মর্মে হাইকোর্টে রিট করেন মাইদুল ইসলাম। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মামলার তদন্তকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। এর ফলে মাইদুলের বিদেশযাত্রায় আর কোনো বাধা নেই বলে দাবি তার আইনজীবীর।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন