বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা-এনআরসি ইস্যুতে সরকার সফল হতে পারবে না

September 18, 2019 | 2:18 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা ও এনআরসি ইস্যুতে কখনও সফল হতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এ মানববন্ধন আয়োজন করে।

মানবন্ধনে ব্যারিস্টার মওমদুদ আহমদ বলেন, ‘এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ বিরাট সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। এই সংকটের একটি হল- রোহিঙ্গা, আরেকটি ভারতের আসাম রাজ্যের এনআরসি।’

রোহিঙ্গা সংকট বর্তমান সরকারের সৃষ্টি— এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই রোহিঙ্গা সংকটের জন্য সরকারই সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও তারা দেশে ফেরাতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

মওদুদ বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির একজন নেতা বলেছেন- দুই প্যাকেট খাবার দিয়ে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে। তার মানেটা কী? কোনো বাংলাদেশি আসামে নেই। আসামে যারা আছেন, তারা আসামের নাগরিক, ভারতের নাগরিক।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে ভারতে কেন লোক যাবে? আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কি আসামের চেয়ে খারাপ? আমাদের অর্থনীতি আসামের চেয়ে অনেক ভাল। কেন আমাদের মানুষ আসামে যাবে? একটা মিথ্যা বাহানা তুলে, একটা মিথ্যা অজুহাত তুলে আসামের কিছু মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

‘এই সরকার যেহেতু একটা নতজানু সরকার। সেহেতু এই সরকার রোহিঙ্গা ও এনআরসি ইস্যুতে কখনও সফল হতে পারবে না। কারণ, তারা দুর্বল, তাদের শক্তি নেই, জনগণের সমর্থন নেই। সেই জন্য তারা জোর গলায় এই ইস্যুগুলো তুলে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না’— বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়া ইস্যু

সাবেক আইনমন্ত্রী মওদদু আহমদ বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। এক বছর সাত মাস ধরে তিনি (খালেদা জিয়া) জেলখানায়। একটা বানোয়াট মামলায় তার সাজা হয়েছে। তার শরীর খুবই খারাপ। সাধারণত এই ধরনের অপরাধের জন্য আপিল করার পর কারও সাতদিনও জেলখায় থাকার কথা নয়।’

‘কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে তারা ভয় পায়, তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এ কারণে তিনি শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও এই অমানবিক সরকার বিভিন্ন অজুহাতে, কৌশলে ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জামিন আটকে রেখেছে। আমরা তার জামিন নিশ্চিত করতে পারিনি’—বলেন মওদুদ আহম।

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করছি, করে যাব। কিন্তু আইনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তার মুক্তি হবে রাজপথে। যদি রাজপথে আন্দোলন করতে পারি, তাহলেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। সেদিনের জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গ ছাত্রলীগ-যুবলীগ

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যুবলীগ-ছাত্রলীগ গত ১০ বছর সারাদেশে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করেছে। আজ তাদের মুখোশ খুলে গেছে। আজকে বিরোধীদল নাই। কিন্তু তার পরও সরকার এমন অবস্থায় পড়েছে যে, বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণ করতে হয়েছে। কেন? ঘুষের জন্য! তারা দুর্নীতি করেছে। একটা তালিকা তারা বের করেছে- ছাত্রলীগের ৫০০ নেতাকর্মী চাঁদাবাজ। এটা ৫০০ না, এটা ৫,০০০ হাবে, বা তার চেয়ে বেশিও হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার কী বোঝাতে চাচ্ছে? সরকার আজ পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশে মানুষের কাছে বলছে যে, এই ছাত্রলীগ-যুবলীগ টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ। এরা মানুষের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন করে, এরা জমি দখল করে, এরা মানুষের ওপর অত্যাচার করে আর্থ নেয়, মানুষকে গুম করে, গুম করে টাকা নেয়—এই সবই তো আজ তারা প্রমাণ করেছে।’

প্রসঙ্গ দুর্নীতি

চলমান দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম যে, দৈনিক নাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা কাদের টাকা? জনগণের টাকা। কিন্তু কারা এটা ভোগ করছেন, যারা লুট করছেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, যারা এই ব্ল্যাক মার্কেটিং করেছেন, স্মাগলিন করেছেন এবং অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন, তারাই বিদেশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন আইন লংঘন করে।‘

বর্তমান সরকারের দুর্নীতি সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘একটা পিয়নের চাকরির জন্য, সরকারি বা আধা সরকারি যেকোনো সংস্থায় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য টাকা দিতে হয়। একজন পিয়নের জন্য তিন লাখ টাকা, একজন নার্সের জন্য পাঁচ লাখ টাকা, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার নিয়োগের জন্য ব্রাউন এনভেলপ লাগে। টাকার খাম লাগে। অর্থাৎ এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ঘুষ-অন্যায় বা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা নেই।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিয়ার্স বাংলাদেশের (এ্যাব) সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, সহ-প্রচার সম্পাদক শামিমুর রহমান শামীম, ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন