বিজ্ঞাপন

মাদরাসা থেকে ছাত্রী নিখোঁজ, শিক্ষিকার দাবি জ্বিন নিয়ে গেছে

September 18, 2019 | 4:42 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গত ৩১ আগস্ট মাদরাসা শিক্ষিকা আফরোজা বেগম ফোন করে বলেন, ‘আপনার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনার মেয়ের সঙ্গে জ্বিন ছিল, সেই জ্বিন তাকে নিয়ে গেছে।’ মাদরাসা শিক্ষিকার কথায় আশ্বস্থ হতে পারছেন না ছাত্রীর বাবা-মা। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মেয়ের সন্ধান বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন বাবা শরীফ উল্লা ও মা শিল্পী আক্তার।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মাদরাসা ছাত্রী সাজনিন আক্তার সৌরভীর বাবা ও মা।

সংবাদ সম্মেলনে সৌরভীর মা শিল্পী বলেন, ‘২০১৫ সালের শুরুর দিকে সৌরভীকে পল্লবীর বাউনিয়াবাদের ব্লক-ডিতে জামিয়া কোরবানিয়া তালিমিয়া মহিলা মাদরাসায় রেখে আসি। অসুস্থ হলে আর ঈদের ছুটিতে সৌরভীকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। এছাড়া সারাবছর ওই মাদরায় থাকত সৌরভী। গত কোরবানির ঈদের ছুটি হলে ৮ আগস্ট তাকে বাসায় নিয়ে আসি। বাসায় এসে সৌরভী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২৫ আগস্ট মাদরাসা খুললে শিক্ষিকা আফরোজা বেগম ফোন করে মেয়েকে রেখে আসতে বলেন। গত ২৭ আগস্ট সৌরভীকে মাদরাসায় রেখে আসি। গত ৩১ আগস্ট ওই শিক্ষিকা ফোন করে বলেন, ‘আপনার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সঙ্গে জ্বিন ছিল। তাকে জ্বিনে নিয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

মা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘শিক্ষিকার কাছে খবর পেয়ে মেয়ের বাবাকে পাঠাই। মেয়ের বাবাকে মাদরাসায় প্রবেশ করতে না দিয়ে বাইরে থেকে উল্টাপাল্টা কথা শোনানো হয়। একবার বলেন, ‘মেয়ে বের হয়ে গেছে আর ফেরেনি।’ আবার বলেন, ‘তাকে জ্বিন নিয়ে গেছে।’

পাশেই পুরুষ মাদরাসা শাখার সহকারী অধ্যক্ষ মাসুম আকবর বলেন, ‘ওই মেয়ের সমস্যা আছে। সে বের হয়ে গেছে।’

সৌরভীর মা অভিযোগ করে বলেন, ‘সৌরভীকে গুম করা হয়েছে। কী কারণে কেন গুম করা হয়েছে তা জানি না। আমার একমাত্র মেয়েকে ফেরত চাই। আর যদি আমার মেয়ে কোনো কারণে মারা গিয়েও থাকে তবে মরদেহ চাই। ওই মাদরাসার ভেতর এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে তাতে কেউ বের হয়ে যাবে এমন সাধ্য নেই।’

বিজ্ঞাপন

সৌরভীর বাবা শরীফ উল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওই মাদরাসায় ৯টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সব সময় সচল রয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তারা বলেন, ৩০ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ফুটেজ নাই। কারণ ওই সময় নাকি সিসি ক্যামেরার তার ছেঁড়া ছিল। পুলিশও আমাদের তেমন কোনো সহায়তা করছে না। একটি জিডি (১ সেপ্টেম্বর-৯১ নম্বর জিডি) নিয়েছে অথচ এখনও কোনো মামলা গ্রহণ করেনি পল্লবী থানা।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সৌরভীর বাবা-মা বলেন, ‘সৌরভী আমাদের একমাত্র মেয়ে। আমাদের আর কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। তাকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না। আমাদের একমাত্র মেয়েকে আমরা জীবিত ফেরত চাই। সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েটিকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ কাজ করছে। ওই মাদরাসায় গিয়ে সকলকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। নরসিংদী থেকে একটি কল আসে যে, তাদের কাছে মেয়ে আছে, এক লাখ টাকা দিলে তারা দেবে। সেখানে পুলিশসহ রওয়ানা হলে, অর্ধেক রাস্তায় তারা আবার ফোন করে বলেন, মেয়ে অসুস্থ আজ সাক্ষাৎ করা সম্ভব হবে না। তখন তাদের প্রতারক চক্রের সদস্য ভেবে পুলিশ ফেরত আসে। ছাত্রীর পরিবার মামলা দিতে চাইলে পুলিশ মামলা নেবে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

সৌরভী কীভাবে হঠাৎ মাদরাসা থেকে হাওয়া হয়ে গেল জানতে চাইলে মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওই সময় আমি হজের জন্য সৌদি আরবে ছিলাম। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। মহিলা শাখার বিষয়টি আমি জানি না।’

বিজ্ঞাপন

এরপর মহিলা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আফরোজা বেগমকে ফোন করা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সৌরভীর সঙ্গে সবসময় জ্বিন থাকে তা আমি বলিনি। এটি সৌরভীর বান্ধবী আনিকা বলেছে। আর আনিকাকে সৌরভীই বলেছে যে, তার সঙ্গে সবসময় জ্বিন থাকে।’

সৌরভী আনিকাকে (৩০ আগস্ট) একটি ডায়েরি দিয়ে বলেছে, ‘আমি সাকিব নামে একটি ছেলেকে ভালোবাসি। তার সঙ্গে আমি চলে যাব। তোর কাছে এই ডায়েরিটা রাখবি। পরে সেই ডায়েরিটা পুলিশ জব্দ করেছে।’

আর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষিকা বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা তার ঝাড়ু দিয়ে গিয়ে ছিড়ে গেছে। সে জন্য বন্ধ ছিল। ফলে সৌরভীর চলে যাওয়ার বিষয়টি আমরা কেউই দেখতে পারিনি। তদন্ত হোক, সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসুক। মেয়েটি উদ্ধার হোক আমরাও চাই।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন