বিজ্ঞাপন

বাড়েনি আন্তর্জাতিক রুট, মালিক সমিতির বাধা অভ্যন্তরীণ রুটে

September 23, 2019 | 12:03 pm

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আগের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়ার সময়ে কোনো আন্তর্জাতিক রুটের সম্প্রসারণ হয়নি। বেসরকারি বাস মালিকদের বাধার মুখে আটকে আছে অভ্যন্তরীণ অনেকগুলা রুট। এসব কারণেও বিআরটিসি লাভের মুখ দেখছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডু পর্যন্ত বাস রুটের চেষ্টা করছে বিআরটিসি। প্রথম দিকে এ রুটের নাম ছিল বিবিআইএন। অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল। সেখান থেকে ভুটান বাদ পড়ে যায়। এরপর ঢাকার চেষ্টা শুরু হয় ভারত হয়ে নেপাল পর্যন্ত যাওয়ার। এ নিয়ে গত বছর সফলভাবে একটি ট্রায়াল রান হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেড় বছর ধরে রুটটি ঝুলে রয়েছে।

এদিকে অভ্যন্তরীণ নতুন রুটে বাস চালাতে গিয়ে বেসরকারি পরিবহন মালিক সংগঠনের বাধার মুখে পড়ছে বিআরটিসি। সম্প্রতি সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বাস চালাতে বাধা দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। তাদের বাধার মুখে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি লাভজনক রুট।

বিজ্ঞাপন

বিআরটিসি সূত্র জানায়, সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়ার মেয়াদে আন্তর্জাতিক কোনো নতুন রুট সম্প্রসারণ হয়নি। এমনকি বাংলাদেশের জন্য ভারতের সিকিম রাজ্য খুলে দিলেও সেখানে বাস রুটের বিআরটিসির প্রস্তাবে এখনও সাড়া দেয়নি দেশটি। সম্প্রতি ভারত আগরতলা থেকে বাস নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে সরাসরি যেতে প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে শিগগিরিই আলোচনায় বসবে দুইদেশ।

বিআরটিসি বাস ৫ টি আন্তর্জাতিক রুটে চলে। এ রুটগুলো ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এতে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে কলকাতা, আগরতলা এবং ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে সরাসরি মেঘালয়-গোয়াহাটি যাওয়া যায়।

৫ টি রুটের মধ্যে ৪ টি রুট দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালনা করছে ‘শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস’। একমাত্র এই পরিবহন কোম্পানির বাস বিআরটিসির ব্যানারে সরাসরি কলকাতা থেকে যাত্রী আনা নেওয়া করে। আর ঢাকা থেকে আগরতলা রুট পরিচালনা একইভাবে পরিচালনা করছে ‘রয়েল কোচ’ পরিবহন কোম্পানি।

বিজ্ঞাপন

বিআরটিসি জানায়, দেড় বছর আগে ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডুতে সরাসরি বাস নিয়ে যেতে কাজ শুরু হয়। এতে ভারত ও নেপাল সম্পৃক্ত হয়ে তিন দেশের যৌথ প্রতিনিধি দলের একটি ট্রায়াল রান করা হয়। শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস-এর দুটি বাস সফলভাবে ঢাকা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু গিয়ে পৌঁছায়।

তবে শেষ পর্যন্ত নেপালের চূড়ান্ত সম্মতি আসেনি। এখনও এ রুট চালুর অপেক্ষায় পড়ে আছে। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে নতুন দুটি রুটের প্রস্তাব। নতুন প্রস্তাবে ভারত আগরতলা থেকে বাস নিয়ে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার যেতে চায়। আগরতলার বাসিন্দাদের সমুদ্র সৈকত দেখতে হলে ভারতের বহু রাজ্য মাড়িয়ে দেড় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। কিন্তু দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের পাশে ফেনী নদীর উপর ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ সেতু তৈরি হচ্ছে। এ সেতু দিয়ে ত্রিপুরা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব দেড়শো দু’শ কিলোমিটারে চলে আসবে। এতে ত্রিপুরার মানুষ সহজে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আসতে পারবে।

প্রস্তাবটি এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বিআরটিসিতে আছে। ভারত বাংলাদেশের আগামী রিভিউ মিটিংয়ে ভারতের নতুন দুটি প্রস্তাবে সায় দিলেই নতুন রুট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের শুরু থেকে বিআরটিসি চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সিকিম যাওয়ার। বাস নিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে সিকিম যেতে বাংলাদেশের প্রস্তাব পাঠানোর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো জবাব দেয়নি ভারত। ফলে কাঠমান্ডুর পর সিকিম যাত্রাও পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশের।

বিজ্ঞাপন

নতুন বিআরটিসি চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন খুব উঁচু মাত্রায়। এ সম্পর্ক আরও বাড়াতে চান তারা। সিকিম যাওয়া এবং আগরতলা থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুট নিয়ে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। প্রতি ছয়মাস পর পর বাংলাদেশ ও ভারতের বাস সেবা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়।

বাস মালিকদের বাধার মুখে বিআরটিসির নতুন রুট

মাসদুয়েক আগে সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে চালু হয় বিআরটিসির নতুন বাস সেবা। চালুর পরপরই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় বাস মালিক সমিতি। বিআরটিসির বাস চালুর বিরুদ্ধে অবরোধ কর্মসূচিও দেয় তারা। স্থানীয়রা বিআরটিসি বাস চালুর দাবি জানিয়ে আসলেও বাস মালিকরা তাদের মুনাফার জন্য সরকারি বাসের চলাচল রুখে দিতে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ৮ টি বাসের জায়গায় ৪ টি বাস দিয়ে সেবা দিচ্ছে বিআরটিসি। এতে যেখানে মাসে ১৯ লাখ টাকা আয় হওয়ার কথা সেখানে ৯ লাখ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যান ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিআরটিসি ভবনে আসলে নতুন চেয়ারম্যান বিষয়টি তখন তুলে ধরেন। এ সময় চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির বাধার কারণে দেশের সব জেলার সব রুটে জনগণের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিআরটিসির গাড়ি পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। শিগগিরই বরিশাল-কেওড়াকান্দি রুটে বিআরটিসির বাস দিতে চান চেয়ারম্যান। এতেও পরিবহন মালিকদের বাধার আশংকা করছে বিআরটিসি। বিষয়গুলোর সমাধানে মন্ত্রীর নির্দেশনা চান চেয়ারম্যান।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যেখানে যেখানে বিআরটিসির বাস দরকার সেখানে বাস নামাতে হবে। এক্ষেত্রে বাস মালিকরা সমস্যা করলে স্থানীয় প্রশাসন নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’

বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালে জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ও বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের কারণে বিআরটিসি বেসরকারি বাস মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়। সমঝোতা অনুযায়ী বেসরকারি বাস মালিকরা নির্ধারণ করে দেয় কোন রুটে বিআরটিসি কয়টি বাস চালাতে পারবে। শুধু বাস বা ট্রিপ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া নয়, সে সময়ে বাস মালিকদের চাপে অনেক রুটই বাতিল করে দিতে হয় বিআরটিসিকে। বাস মালিক ও রাজনৈতিক চাপে একে একে বন্ধ হয়ে যায় অনেকগুলো লাভজনক রুট।

বিআরটিসি’র বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলোর অন্যতম উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলো। ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-চাপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা-গাইবান্ধা, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-সাতক্ষীরা, ঢাকা-পাথরঘাটা, ঢাকা-বাক্ষ্মণবাড়িয়া, ঢাকা-ভৈরব, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ’র মত লাভজনক রুটও বন্ধ করে দিতে হয় বিআরটিসিকে। এভাবে প্রায় একশ’ রুট বন্ধ হয় সরকারি এই পরিবহন সংস্থাটির।

বিআরটিসি অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী বিআরটিসি দেশের যে কোনো রুটে বাস পরিচালনা করার সংবিধিবদ্ধ ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। এমনকি রুট পারমিট না থাকলেও বিআরটিসি যে কোনো রুটে বাসসহ যেকোনো যান পরিচালনা করতে পারবে। এমন আইন থাকার পরও বাস চালাতে পারেনি বিআরটিসি। এখন বিআরটিসির বাস বহর বেড়ে যাওয়ার পর একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়ক মন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপ না থাকার কারণে বেসরকারি মালিকদের চাপে নতুন রুটে বাস চালানো কঠিন হয়ে যেতে পারে বিআরটিসির জন্য, এমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন:  নিজের নির্ধারণ করা ভাড়া লঙ্ঘন বিআরটিসির

অবহেলায় বন্ধ বিআরটিসির স্মার্ট কার্ড ব্যবহার

যাত্রী ঝোলে বিআরটিসি বাসে, শ্রমিকের বেতন বকেয়া মাসের পর মাস

ভারত থেকে আনা বিআরটিসি বাসে হাত দিলেই বডি বেঁকে যায়!

সারাবাংলা/এসএ/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন