বিজ্ঞাপন

কিনেছেন একটি খাট, ‘খাতায়’ লাখ টাকার আসবাব

September 26, 2019 | 8:58 am

জসিম মজুমদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের আসবাবপত্র কেনা বাবদ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভ্রমণ ভাতা হিসেবে লাখ তিনেক টাকা বিলও তুলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিলের অধিকাংশই ভুয়া!

বিজ্ঞাপন

রিয়াদ হোসেন নামের এই কর্মকর্তা ২০১২ সাল থেকে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর রামগড় উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। এছাড়া পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলায় একই পদে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) বদলি হয়েছেন।

রামগড় ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রামগড় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্যে নতুন আসবাবপত্র কেনা বাবদ ৮০ হাজার টাকা ও পুরাতন আসবাবপত্র মেরামত দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করেন। তবে বাস্তবে তার কার্যালয়ে উল্লেখিত বিলের নতুন আসবাব কেনা ও পুরাতন আসবাব মেরামতের কোনটাই করা হয়নি।

এছাড়া গত ১২ মে সেগুন কাঠের তৈরি ২টি সেক্রেটারি টেবিল ৩৪ হাজার টাকা, ২টি আলমিরা ৩০ হাজার টাকা এবং ৬টি চেয়ার ১৬ হাজার টাকাসহ মোট ৮০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র কেনেন। রামগড়ের মেসার্স ফারুক ফার্নিচার মার্ট, মেসার্স ছালাম ফার্নিচার মার্ট ও মেসার্স কুমিল্লা ফার্নিচার মার্টের ক্যাশ মেমো দেখিয়ে তিনি বিলও উত্তোলন করেন।

বিজ্ঞাপন

তবে মেসার্স ফারুক ফার্নিচার মার্টের মালিক জানান, গতবছর একটি খাট ছাড়া ওই কর্মকর্তা আর কিছু এখান থেকে তৈরি করেননি।

এদিকে, অফিসের পুরাতন আসবাবপত্র মেরামত বাবদ ৩০ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করলেও কোনো আসবাবপত্র মেরামত করা হয়নি। পাশাপাশি গত অর্থবছরে তিনি রামগড় ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় কয়েক ধাপে বকেয়াসহ ভ্রমণ ভাতা উত্তোলন করেছেন প্রায় ৩ লাখ টাকা।

এছাড়াও স্থানীয় একটি লাইব্রেরি থেকে অস্বাভাবিক মূল্য দেখিয়ে অফিস স্টেশনারি কিনেছেন ৭০ হাজার টাকা ও অফিসের ২টি কম্পিউটারের মেরামত দেখানো হয় ৩৫ হাজার টাকা। এখানের সবটাই দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিস সূত্র।

বিজ্ঞাপন

এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে রিয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে। গত অর্থবছরে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় অতিরিক্ত বরাদ্দ এনে তা আত্মসাতের অভিযোগে গত মে মাসে জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম তার বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্তও করেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী নিলিময় চাকমা লিখিত বক্তব্যে জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেনের কার্যালয়ের আসবাবপত্র ক্রয় ও মেরামতের বিষয়ে তিনি জানেন না। স্যার (রিয়াদ হোসেন) কাগজপত্র তৈরি করতে বলেছিলেন, তাই তিনি তৈরি (ভুয়া) করেছেন।

এসব বিষয় জানতে অফিস চলাকালীন সময়ে পরপর ৩ দিন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে গিয়েও রিয়াদ হোসেনকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।

বিজ্ঞাপন

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ ইকবাল জানান, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন রিয়াদ হোসেন। গত জুনের আগে নতুন ফার্নিচার ক্রয় সংক্রান্ত বিলটি উত্তোলন করলেও বাস্তবে তার অফিসে নতুন কোনো ফার্নিচার পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জানার পর তাকে ডাকা হলে এক সপ্তাহ আগে তিনি কিছু ফার্নিচার নিয়ে আসেন।

রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ইসরাত জানান, এসব অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কাজ না করে ভুয়া বিল তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ক্ষমার অযোগ্য। তিনিও এই কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন