বিজ্ঞাপন

‘সরকারের উদ্যোগে ইতিবাচক প্রভাব পেঁয়াজের বাজারে’

October 1, 2019 | 10:18 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: লাগামছাড়া পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে একের পর এক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে চলেছে সরকার। এরই মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে ঋণপত্রের (এলসি) মার্জিন এবং সুদের হার কমাতেও পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বন্দর থেকে দ্রুত পেঁয়াজ খালাসকে দেওয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে বাাজর মনিটরিং সেল।

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এসব পদক্ষেপে পেঁয়াজের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন- চীন, মিশর, মিয়ানমারের পেঁয়াজে আগ্রহ কম

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাজারে দ্রুত পেঁয়াজ পৌঁছানোর ব্যবস্থাও নিয়েছে সরকার। দেশের ভোমড়া, সোনা মসজিদ, হিলি ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ্ন করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে আমদানি করা পেঁয়াজ  দ্রুত ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিয়েছে। একইসঙ্গে ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ১০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- পেঁয়াজ: আমদানিকারকদের ফোনে দাম বাড়ান পাইকারি ব্যবসায়ীরা

মন্ত্রণালয় জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, যশোর, দিনাজপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বাজারগুলোতে তদারকি শুরু করেছেন। এছাড়াও প্রতিটি জেলা প্রশাসন থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলসি’র মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দরে খালাস শুরু হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ ও দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোতে বিক্রি করা পেঁয়াজ দ্রুত সারাদেশে নির্বিঘ্নে পৌছে যাচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবি’র মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। ১৬টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে এ পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু হয়। মঙ্গলবার থেকে এ ট্রাকের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫টি করা হয়েছে। এতে করে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন- ২ ঘণ্টার অপেক্ষায় ২ কেজি পেঁয়াজ, অনেকেই ফিরলেন শূন্য হাতে

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বছরে আমদানি করা হয় ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন।

এই হিসাব অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। দেশের পেঁয়াজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর পাইকারি হাট-বাজারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বেচাকেনা হচ্ছে। ফলে সারাদেশের হাট-বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। এতে করে বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- পেঁয়াজের দাম কমবে কি না, ব্যবসায়ীই শঙ্কায়

সহজ পরিবহনের কারণে সারাবছরই ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় এ বছর বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রফতানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস, এমইপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা আগের দামের তিন গুণেরও বেশি। এর আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানির ন্যূনতম দাম ছিল প্রায় ২৫০ মার্কিন ডলার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত তা ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। দুই সপ্তাহ পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধই ঘোষণা করে।

আরও পড়ুন-  রাজধানীর যে ৩৫ স্থানে বিক্রি হচ্ছে টিসিবি‘র পেঁয়াজ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি ও বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসি’র মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই পেঁয়াজ এরই মধ্যে দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে। তাছাড়া ভারত থেকে ও দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজও শিগগিরই বাজারে আসবে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করেছে। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো এবং নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধও করেছে। কোনো ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত, কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা, স্বাভাবিক সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের কোনো বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, দ্রুতই পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

আরও পড়ুন-

হিলিতে ঈদের পর পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ

নিম্নমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি

একদিনেই পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেজিতে ৫ টাকা

৫ স্থানে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু, দাম ৪৫ টাকা

বাজারে কৃত্রিম সংকট, দ্রুতই কমবে পেঁয়াজের দাম

লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, আরও বাড়ার আশঙ্কা

হিলিতে আমদানি করা পেঁয়াজের ‘ছড়াছড়ি’, নেই ক্রেতা

পেঁয়াজের কেজি শতক ছুঁয়েছে, মিলছে না টিসিবির ট্রাক

হুট করে হিলিতে বাড়ল পেঁয়াজের দাম, বিপাকে পাইকাররা

একদিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ল ৪৫ টাকা

পেঁয়াজের বাজার ভারতনির্ভর, দাম কমাতে পারবে না মিশর-তুরস্ক

শুরু হয়নি টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি, মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক

সংকট মেটাতে মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি হচ্ছে পেঁয়াজ

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন