বিজ্ঞাপন

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিপসের কারখানা, নেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন

October 2, 2019 | 7:58 am

আমজাদ হোসেন মিন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বগুড়া: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের ইয়ার্ড কলোনি বস্তি এলাকায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চিপস। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে এই চিপসের কারখানা। স্থানীয়ভাবে ‘কুলফি চিপস’ নামে পরিচিত এসব চিপসের প্যাকেটে নেই উৎপাদন বা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। শিশুদের কাছে এর আকর্ষণ বাড়াতে প্রতিটি প্যাকেটের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে একটি করে বেলুন। বেলুনটি প্যাকেটের মধ্যে দেওয়ায় গন্ধে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই চিপসগুলো খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব চিপস খেলে শিশুরা পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অন্যদিকে, অবৈধ এসব চিপস তৈরির কারখানায় সান্তাহার ফাঁড়ি পুলিশ একাধিকবার এলেও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে কারখানার মালিকদের দাবি, বিএসটিআইসহ সব ধরনের অনুমোদন রয়েছে তাদের; যদিও এই দাবির সপক্ষে কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, সান্তাহার পৌরসভার ইয়ার্ড কলোনির বস্তিতে শফিকুল ইসলাম, জামাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা পট্টিতে আলমগীর হোসেনসহ চার ব্যাক্তি বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন চিপস তৈরির কারখানা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব চিপস তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্ন মানের ভোজ্য তেল। ছাউনিহীন চুলায় চিপসগুলো ভাজার সময় তেলে উড়ে এসে পড়ছে অসংখ্য ছাই ও ধূলাবালু। এসব চিপস ভাজার পর তা প্যাকেটজাত করছেন বস্তির বেশকিছু নারী শ্রমিক। চিপস তৈরির সময় নির্দিষ্ট পোশাক ছাড়াই নোংরা পরিবেশে কেউ বাড়ির উঠানে, কেউ বারান্দায় অথবা খোলা জায়গায় বিছানা পেতে তৈরি করছেন এসব প্যাকেট। এসব চিপসকে জনপ্রিয় করতে প্রতিটি প্যাকেটে দেওয়া হচ্ছে একটি করে বেলুন।

বিজ্ঞাপন

কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিটি প্যাকেটের ভেতরে একটি করে বেলুন ঢুকিয়ে এক ডজনের একটি বড় প্যাকেট তৈরি করে দিতে পারলেই এসব নারী শ্রমিকরা প্যাকেট প্রতি ৪ টাকা করে পান। প্যাকেট তৈরি শেষে তারা সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন মালিকের বাড়িতে। কাজের চাপ বেশি থাকলে মালিকরা নিজেরাই এসে চিপস নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।

এদিকে, এসব চিপস তৈরির পর কতদিন পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে— তার দিন বা তারিখের একটি সিল পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে না। এমন অবস্থাতেই হরহামেশেই বাজারজাত করা হচ্ছে এসব চিপসের প্যাকেট। অন্য চিপসগুলোর মতোই এ চিপসগুলোও এখন সান্তাহার পৌরসভার প্রায় প্রতিটি মুদি ও কনফেকশনারি দেকানে হরদম বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া সান্তাহার জংশন স্টেশন থেকে ট্রেনে করে নাটোর, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁসহ বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে এসব চিপস।

জাহাঙ্গীর আলমের প্যাকেট তৈরির কারখানায় কর্মরত এক নারী শ্রমিক বলেন, প্যাকেট করে দিলে টাকা পাই, তাই এ কাজ করি। আর এসব বন্ধ হয়ে গেলে তখন অন্য কিছু করব। এতে আমার কোনো সমস্যা হবে না। এসব চিপস শিশুদের জন্য ক্ষতিকর কি না, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

দমদমা গ্রামের এক শিশুর অভিভাবক জাকির হোসেন বলেন, চিপসগুলোর প্যাকেটে কোম্পানির নাম, মনোগ্রাম বা মেয়াদোত্তীর্ণের কোনো তারিখ নেই। কিন্তু চিপসগুলোর প্যাকেটে বেলুন থাকায় শিশুরা এই চিপস পছন্দ করে। কিন্তু এসব চিপস নিম্ন মানের। তাই এসব চিপস খেলে শিশুরা যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে ব্যাবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানা মলিকদের এক প্রতিবেশী জানান, এরা লাভের আশায় শিশুদের চিন্তা করছে না। বরং বিভিন্ন মহলকে ‘ম্যানেজ করে’ দেদারছে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইয়ার্ড কলোনির (বস্তি) বাসিন্দা ও চিপস কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের এ ব্যবসা বৈধ, তাই পুলিশ এলেও চলে যায়। পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজপত্র আমার রয়েছে। তাছাড়া পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টরও জানেন, আমরা চিপস তৈরি করি।

চিপস তৈরির কারখানার অন্য মালিকদেরও দাবি, তাদের কাছে বিএসটিআইসহ সব ধরনের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু কাগজপত্র দেখতে চাইলে কেউ তা দেখাতে সক্ষম হননি। এদিকে, স্যানিটারি ইন্সপেক্টররাও বলছেন, এমন পরিবেশে অনুমোদন পাওয়া সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

সান্তাহার পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, এসব চিপস কোথায় তৈরি হচ্ছে, কে তৈরি করছে— এসব আমার জানা নেই। এটি আইনত অপরাধ।

উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ভবেশ চন্দ্র রায় জানান, সান্তাহারে চিপস তৈরির জন্য বিএসটিআই কাউকে কোনো অনুমোদন দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ বিন রশিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখব।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন