October 4, 2019 | 7:49 pm
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
রংপুর: রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন। রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনি সরঞ্জাম।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম শাহাতাব উদ্দীন বলেন, আজ ইভিএমসহ নির্বাচনি সব সরঞ্জাম কেন্দ্রগেুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাতে নিরাপত্তা বাহিনী এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। তারাই এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবেন।
আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে একযোগে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে। এই আসনের সব ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছি। কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিহত করতে সব ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি— বলেন শাহাতাব উদ্দীন।
এদিন পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটোরিয়ামে নিরাপত্তা নিয়ে ব্রিফিং করেন রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, পুলিশ যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে— আমরা আশা করি, রংপুর-৩ আসনের জনগণকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবো।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম বলেন, উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের ছক অনুযায়ী, মহানগরের ১২৯টির প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ থাকবে। কেন্দ্রগুলোকে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দুইভাগে ভাগ করেছি। ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮৯টি সাধারণ কেন্দ্র। পুলিশের পাশাপাশি আনসার থাকবে। মহানগরের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
এর বাইরেও আমাদের মোবাইল টিম থাকবে। স্পেশাল টিম থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে, স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্সও থাকবে। র্যাব-বিজিবির টহল থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ নজর রাখবে। আমরা চাই, প্রতিটি ভোটার যেন নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্র আসতে পারে এবং নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে— বলেন আব্দুল আলীম।
লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ), ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রিটা রহমান, মোটরগাড়ি (কার) প্রতীক নিয়ে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী শফিউল আলম, মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের প্রার্থী কাজী মো. শহীদুল্লাহ এবং দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মো. তৌহিদুর রহমান তাদের প্রচারণা শেষ করেছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রেজাউল করিম রাজু তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বাতিল হয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. একরামুল হক ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. কাওছার জামানের মনোনয়ন।
উপনির্বাচন সামনে রেখে একদিন আগে ১৭৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ‘মক ভোটিং’ কার্যক্রমের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। তবে সে আয়োজনে সাড়া মেলেনি ভোটারদের। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই খুব অল্পসংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়েছিলেন অনুশীলন ভোট দিতে।
তবে নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নির্বাচন কমিশন। উল্লেখযোগ্য ভোটারের উপস্থিতি কামনা করছেন তারা। নির্বাচনকে কেন্দ্র নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার থেকে পাঁচজন পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী সদস্য থাকবেন। এছাড়াও আরও ১০-১২ জন দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চারজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটসহ শতাধিক স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স থাকবে। ১৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবেন নির্বাচনে। র্যাবেরও ২৪টির মতো মোবাইল টিম মাঠে থাকবে।
এই উপনির্বাচনে ১৭৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকার ৪০টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৭৬২ জন।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যান। এরপর ১৬ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া আসনটি শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করেন।
সংবিধানের ১২৩(৪) দফায় বলা হয়েছে— ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে নব্বই দিনের মধ্যে পদটি পূর্ণ করার জন্য আইনি বাধ্যবাধতা রয়েছে।’
গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর।
নির্বাচন উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রংপুর-৩ নির্বাচনি এলাকার শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষে ৫ অক্টোবর সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে নির্বাচনি এলাকায় ওই দিন যদি কোনো পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার দিন ঠিক থাকে তাহলে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো সাধারণ ছুটির আওতা মুক্ত থাকবে।
সারাবাংলা/এটি