বিজ্ঞাপন

এই ঘরে আর কোনোদিন আলো জ্বলবে না— চিরকুটে আত্মহত্যার ইঙ্গিত

October 10, 2019 | 11:32 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আর্থিক অনটন, ব্যবসা‌য়ে ধস ও ব্যাংক‌ ঋণের বোঝা বইতে না পারায় মিরপু‌রের গা‌র্মেন্টস ব্যবসায়ী সরকার মোহাম্মদ বা‌য়েজীদ তার স্ত্রী অঞ্জণা ও ছে‌লে ফারহান‌কে খাবা‌রের সঙ্গে বিষ মি‌শি‌য়ে হত্যা ক‌রে নি‌জেও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা ক‌রেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

‘এই ঘরে আর কোনোদিন আলো জ্বলবে না’, ‘আজকেই শেষ দিন আমাদের’— এ ধরনের লেখাসহ বেশকিছু চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে বায়োজিদের বাসা থেকে। তদন্তের স্বার্থে এসব চিরকুট পুলিশ আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের ৫ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে ওই তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বহুতল ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় তারা ভাড়া থাকতেন।

ওই বাসায় কথা হয় বায়োজিদের বন্ধু মিরপুরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আলী হোসেনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রাত দেড়টার দিকে বায়োজিদের নম্বর থেকে একটি মেসেজ আসে মোবাইলে। তাতে লেখা ছিল, ‘হয়তো আজ রাতই শেষ রাত।’ তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। সকাল ১১টার দিকে ঘুম থেকে উঠে মেসেজটি চোখে পড়ে। তখনই বায়োজিদের মোবাইল নম্বরে ফোন করি। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করে না। পরে অফিসে না গিয়ে তার বাসার খোঁজ নিতে যাই। দরজায় অনেকক্ষণ ধাক্কা দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কেয়ারটেকারকে ডেকে দরজা খোলার ব্যবস্থা করি। এরপর ভেতরে ঢুকে যা দেখলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- অভাব থেকেই স্ত্রী-ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা, ধারণা পুলিশের

আলী হোসেন বলেন, ঢুকতেই ডান পাশে গেটের দেওয়ালে লেখা দেখি, ‘সরি’। ভেতরে পড়ে আছে একশরও বেশি ছোট ছোট চিরকুট। বায়োজিদের স্ত্রীর গায়ের ওপর একটি কোরআন শরিফ, ছেলের বুকের ওপরও একটি কোরআন শরিফ। একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি মরতে পারলাম না’। ওইটা দেখে মনে হলো, বায়োজিদও সম্ভবত বিষ খেয়েছিল, কিন্তু বিষ খেয়ে মৃত্যু হয়নি তার। তাই ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।

আলী হোসেন জানান, ওই বাড়িতে রান্নাঘরে পড়ে থাকা একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘এই ঘরে আর কোনোদিন আলো জ্বলবে না।’ বাসার চারটি রুম, বাথরুমসহ সব জায়গায় ছোট ছোট চিরকুট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। বেডরুম ছিল ফুল দিয়ে সাজানো। সবার ছবি দিয়ে সাজানো অ্যালবাম পড়ে ছিল মেঝেতে। দরজায় লেখা ছিল, ‘আজ আমাদের শেষ বাসর ঘর।’ আলী হোসেন বলেন, সবকিছু দেখে মনে হলো— সে সবাইকে জানিয়ে গেল যে সে চলে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আলী হোসেনসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বায়োজিদ প্রথমে পর্দা বিক্রির ব্যবসা করতেন। ওই ব্যবসায় লাভের মুখ দেখতে না পেরে একটি রেস্টুরেন্ট দেন তিনি। তাতেও লস হওয়ায় শুরু করেন গার্মেন্টসের ব্যবসা। মাস দুয়েক আগে সেই ব্যবসাও বন্ধ করেছেন তিনি। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতেন না। পরে তার ভাইয়েরা এসে শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা করেন। এরপর গত মাস দুয়েক কিছুই করেননি বায়োজিত। কিছু করতে না পারার হতাশাই হয়তো বায়োজিদকে দুর্বল করে ফেলেছিল বলে মনে করছেন তারা।

আলী হোসেন বলেন, বায়োজিদরা চার ভাই, এক বোন। বড় দুই ভাই গার্মেন্টসের ব্যবসা করেন, ছোট ভাই ডাক্তার। বোনেরও ব্যবসা আছে। তবে তাদের কারও কাছে দেনা আছে কি না, আমাদের কিছু বলেনি কখনো।

বায়োজিদ যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, ওই বাড়ির কেয়ারটেকার নুরে আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, তার বেশকিছু ব্যাংকে ঋণ ছিল শুনেছি। টাকার জন্য যে লোকজন আসত, তখন জানতাম। আজ সকাল ১১টার দিকেও তিন-চারজন লোক এসেছিলেন পাওনা টাকার জন্য। তারা বলেন, ফোন করলে ধরছেন না। দরজায় অনেকক্ষণ নক করেও কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। পরে মনে হলো, গতকাল (বুধবার) তিনি গাজীপুরে গিয়েছিলেন। ভাবলাম, সেখান থেকে ফেরেননি। এর আধাঘণ্টা পর একজন আসলেন। বললেন, তাকে নাকি আগের রাতে মেসেজ দিয়েছেন, আজই শেষ রাত। এ কথা শুনে সেই লোকসহ আমরা তার ফ্ল্যাটে নক করতে থাকি। কিন্তু কেউ দরজা না খোলায় পরে দরজা ভেঙে ফেলি। দরজা ভেঙে দেখা যায়, ছেলে আর স্ত্রী খাটের ওপর পড়ে আছে, বায়োজিদ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন। এটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমরা পুলিশকে খবর দেই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে।

জানতে চাইলে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিমুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, এ ঘটনায় ওই ফ্ল্যাট থেকে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশত চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। এসব চিরকুটে তার বিভিন্ন হতাশার কথা উল্লেখ করা আছে। তবে ঠিক কী কারণে এমনটা ঘটেছে, তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

বায়োজিদ, তার স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি সেলিমুজ্জামান।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন