বিজ্ঞাপন

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, ৭৫ ভাগ প্রতিষ্ঠানেই বাস্তবায়ন হয়নি ই-নথি

October 14, 2019 | 8:42 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপনডেন্ট

ঢাকা: ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে দেশ বর্তমানে রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সরকার ই-ফাইলিং বা ই-নথি কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু বর্তমানে এই কার্যক্রম এগোচ্ছে অনেকটা কচ্ছপ গতিতে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনা শুরু হলেও গেল তিন বছরে সরকারি দফতরগুলোর মাত্র ২৫ ভাগ এই পদ্ধতি চালু করতে পেরেছে। বাকি ৭৫ ভাগ এখনও হাতে-কলমেই কাজ করছে। এতে করে প্রশাসনে এখনও জিইয়ে রয়েছে লাল ফিতার দৌরাত্ম।

বিজ্ঞাপন

সরকারি তথ্য মতে, দেশে সরকারি দফতরের সংখ্যা ১৯ হাজার। এর মধ্যে ই-নথি ব্যবহার করছে মাত্র সাড়ে চার হাজার। যা মোট দফতরের ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে, ৭২ টি অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর, ২৭০টি দপ্তর ও সংস্থায়, বিভাগীয় পর্যায়ে ১২০টি, জেলা পর্যায়ে ২ হাজার ৩৫টি, উপজেলা পর্যায়ে ১ হাজার ৮১৮টি ও অন্যান্য ১৬৪টি দফতরে এখন ই-নথি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ই-ফাইলিং বা ই-নথি হলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দাফতরিক কার্যক্রমকে আরও সহজতর করার সফটওয়্যারচালিত পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সবধরনের নথি অনলাইনে সংরক্ষণ করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারি দফতরের সব কাজ অনলাইনভিত্তিক করতে ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণ বেতন, বিল ও চিঠিপত্র আদান-প্রদানের সুবিধা ভোগ করতে পারে। সরকার বাজেট প্রণয়ন, চিঠিপত্র ব্যবস্থাপনা, দরপত্র আহবানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করছে। এই পদ্ধতির ফলে যেকোনো কাজ দ্রুত গতিতে শেষ হয়। এতে খরচ কমার পাশাপশি সময়ও সাশ্রয় হয়। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই পদ্ধতি ব্যবহার করলেও সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও এ ব্যাপারে উদাসীন।

ই-নথি ব্যবহারে এরই মধ্যে সফল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ও ই-নথি ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে আইএমইডি মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেষ্টা আর উদ্যোগে এই সফলতা এসেছে। এই পদ্ধতি ব্যবহারে দাফতরিক অনেক কাজ সহজ হয়েছে। ভবিষ্যতে শতভাগ দাফতরিক কাজ ডিজিটাল উপায়ে করা সম্ভব হবে।’

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ই-নথি ব্যবহারে আগ্রহ কম। সেক্ষেত্রে এখনও বেশ পিছিয়ে স্বাস্থ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারি আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার এমন কিছু বিভাগ রয়েছে যারা এখনও এই পদ্ধতি শুরুই করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে এতদিনেও গুরুত্বপূর্ণ এই ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ই-নথি ব্যবস্থাপনার কাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ই-নথি ব্যবহার করে সফল হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করবে।’

দাফতরিক কাজে যেন অবশ্যই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় সেজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একাধিক নির্দেশনাও জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আর এসব কাজ মন্ত্রিপরিষদের তত্ত্বাবধায়নে থেকে পরিচালনা করছে এক্সসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প। সরকারের সব নথি শতভাগ ডিজিটালাইজেশনে কাজ করে যাচ্ছে তারা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল বলেন, ‘নতুন এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি, হয়রানি ও ফাইল আটকে রাখার যে প্রবণতা তা কমে আসবে। অন্যদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে দাফতরিক কাজ শেষ হবে।’

দাফতরিক কাজে এই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যেমন: যেকোনো চিঠিপত্রের আদান-প্রদান ই-মেইলের মাধ্যমে করা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিপত্র জারি, ইলেক্ট্রনিক নোট, স্বাক্ষর ডিজিটাল করা, সকল মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করা। নোটিশ ওয়েবসাইটে দেওয়া এবং তা যাতে জনগণ নিয়মিত দেখতে পায় সেজন্য নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নথি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে সরকারের ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ই-ফাইলিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে দুর্নীতি অনেক কমে আসবে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। অনিয়ম দুর্নীতি, হয়রানি ও তদবির বন্ধ হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।’

উল্লেখ্য, রূপকল্প ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে অনলাইনের মাধ্যমে জনগণকে সেবা দিতে ২০১৬ সালের মার্চে মাঠ পর্যায়ে ই-ফাইলিং বা ই-নথির কাজ শুরু করে সরকার। আর এর একবছর পর ২০১৭ সালের শুরু হয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে। সে হিসেবে গেল দুই বছরে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর দাফতরিক কাজে ই-নথি ব্যবহার আশাব্যঞ্জক নয়।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন