বিজ্ঞাপন

আসক্তি ও ঝুঁকির গেম পাবজি কতটা ভয়ংকর?

October 19, 2019 | 1:00 pm

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

পাবজি! প্লেয়ার্স আননোন ব্যাটেল গ্রাউন্ড! বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রতি উপমহাদেশে এই গেমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে কয়েকগুণে। তবে উপমহাদেশে পাবজির কম্পিউটার ভার্সনের থেকে মোবাইল ভার্সনটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপমহাদেশে মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা আর সেই সাথে হাতের নাগালের মধ্যে থাকা ইন্টারনেটের কারণেই এই গেমটির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তবে বর্তমানে এই গেমে অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর এবং তরুণরাও।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ কোরিয়ার গেম নির্মাতা কোম্পানি ব্লুহোল ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম পাবজি গেমটি বাজারে আনে। প্রথমে যদিও কম্পিউটার এবং ‘এক্স বক্স’র জন্য বাজারে আনা হয় এই গেমটি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বাজারে আনা হয় পাবজি মোবাইল।

পাবজি হচ্ছে অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ব্যাটেল রয়েল গেম, অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যুক্ত হয়ে খেলা হয় এই গেমটি। পাবজি গেমটি ব্লুহোলের পূর্ববর্তী আর একটি গেম ‘প্লেয়ার আননোন’র সিক্যুয়েল বলা চলে। এই গেমটি ২০০০ সালের মুক্তি পাওয়া জাপানী চলচিত্র ‘ব্যাটেল রয়্যাল’র অনুকরণে তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গেমটিতে ১০০জন ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড় থাকে, যেখানে দলগঠন করে খেলা যায় এবং দল ছাড়া একাও খেলা যায়। ১০০ জন প্রতিপক্ষের মধ্যে একে অন্যকে মেরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এবং শেষ পর্যন্ত যে খেলোয়াড়টি বেঁচে থাকবে সেই জয়ী হবে এই গেমে। প্রথমে বড় একটি ম্যাপের মধ্যে প্লেনে করে নামিয়ে দিলেও ধীরে ধীরে জায়গাটি ছোট হতে শুরু করে এবং সে  সময়ে একে অপরকে মেরে নিজেকে এবং নিজের দলের অনান্য সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকলেই জয়ী হিসেবে ঘোষিত হবে। এবং গেমে জয়ী হওয়ার পুরস্কার স্বরূপ দেওয়া হবে ‘চিকেন ডিনার’।

অন্যান্য ব্যাটেল রয়্যাল গেমের মতোই পাবজিও অনেক বেশি হিংস্র গেম। এবং এর ভয়াবহতা এতই বেশি যে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষিপ্রতা সৃষ্টি করে এই গেম। অত্যধিক মাত্রায় হিংস্রতা থাকায় ১৩ বছরের কম বয়সীদের জন্য এই গেমটি নিষিদ্ধ। তবে বিভিন্ন সংস্থা পরামর্শ দিয়েছে এই গেমটি খেলার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিৎ। অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এবং পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিংস্র করে তুলতে পারে এই গেম।

বিজ্ঞাপন

পাবজি গেমটি কেবল হিংস্রই করে তোলে না, সেই সাথে শারীরিক সক্ষমতার উপরেই ফেলতে পারে বাজে প্রভাব। গেমটি যেহেতু কম্পিউটার এবং মোবাইল ভিত্তিক তাই এটি কোনো স্থানে বসেই খেলতে হবে। আর একটি স্থানে বেশি সময় ধরে বসে থাকলে তা শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কেবল শারীরিক ক্ষতির কারণই নয় এই পাবজি গেমটি। সেই সাথে মানসিক রোগের কারণও হতে পারে এই গেমটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এক গবেষণার পর জানিয়েছে ভিডিও গেমে আসক্তি এক ধরণের মানসিক রোগ। ভিডিও গেমগুলো একজন খেলোয়াড়ের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শারীরিক মানসিক রোগের সাথে সাথে পাবজি গেমটি একজন শিশু কিংবা কিশোরের উপর সামাজিক মূল্যবোধের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গেমটি যেহেতু একটি জায়গাতেই আটকে থেকে খেলতে হয় সেহেতু এই গেম খেলা মানুষটি সামাজিকভাবে খুব বেশি সংযুক্ত থাকতে পারে না। আর এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সমাজের আচার ব্যবহার থেকেও ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে হয় সেই মানুষটিকে। সর্বোপরি একটা সময় একাকীত্ব বরণ করতে হয় তাদেরকে।

বিজ্ঞাপন

এই গেমটি অতিরিক্ত খেলার কারণে চোখের সমস্যাও হতে পারে। আর সেই সাথে দেখা দেয় ঘুমের ঘাটতিও। কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর চোখের সমস্যার সাথে সাথে ঘুমেরও ঘাটতিতে পড়ে এই গেম খেলা মানুষগুলি।

অতিরিক্ত হিংস্রতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতোমধ্যে পাবজি গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উপমহাদেশে সর্বপ্রথম এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয় ভারতে। যদিও পুরো দেশ জুড়ে এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়নি। পুরো দেশের মধ্যে প্রথমে কেবল দু’টি স্থানে এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয় কিন্তু পরবর্তিতে আরও বেশ কয়েকটি স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়ে এই গেমটি। ভারতের তামিল নাড়ুর দ্য ভ্যালোর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’তে এই গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়। গুজরাট হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় জনসম্মুখে কোনো ব্যক্তিকে পাবজি গেম খেলতে দেখা গেলে তাকে আটকে জেলে দেওয়া হবে। এছাড়াও আহমেদাবাদ, রাজকোটেও এই গেমটি নিষিদ্ধ।

ভারতের পর এই গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় নেপালে। অতিরিক্ত হিংস্রতার কারণে দেখিয়ে নেপালে এই গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে গেমটি নিষিদ্ধ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। এবং পরবর্তীতে এই গেমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এছাড়াও ইরাক, জর্ডানেও এই গেমটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে হিংস্রতাকেই। সেই সাথে সাথে টেকনোলজির দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশের থেকে এগিয়ে থাকা চায়নাতেও এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়া হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হলেও পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন